ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিলাম ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ জুন ২০১৭

নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিলাম ॥ মাশরাফি

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘আমরা নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দিতে চাই। বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। এখানে কিছু করে দেখাতে চাই। তাহলে সবাই বুঝবে। আমরা কেমন দল, তা বোঝাতে চাই।’ বাংলাদেশ সেই কাজ করেও দেখিয়েছে। যে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই কার্ডিফেই শুক্রবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দিয়েছে। আবারও কার্ডিফে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে। এই জয় পেয়ে অধিনায়ক মাশরাফিও তাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত। বলেছেনও, ‘সামর্থ্য, যোগ্যতা যদি দেখানোর থাকে আসলে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসেব করলেই বের হয়ে যাবে। তিন শ’ আমরা খুব কম করি। আমরা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩০০ করেছি। ৩০টা রান দরকার ছিল। জানি আমদের ওই টাইপের খেলোয়াড় খুঁজতে হবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভিন্ন ইস্যু ছিল। চার উইকেট পড়ে গেছে দ্রুত। তারপর আমরা টার্গেট অতিক্রম করে ফেলেছি। আমরা যে টাইপের টিম, আমাদের সামর্থ্য দেখানোর ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমি যদি বলি সামর্থ্যরে ব্যাপার সবাই ভাববে জেতার বিষয়। হার-জিত একটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমরা এই উইকেটে কেমন করছি, সেটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার কাছে মনে হয় যে প্রথম ম্যাচটা হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচটা পুরো খেলা হয়নি। হলেও হয়ত বা হারার চান্সই বেশি ছিল। তারপরও আমি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যদি হারতাম, বলতাম আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা ছিল এখানে।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিকে শুরুতেই প্রশ্ন ছোড়া হলো, ৩৩/৪, এখান থেকে জেতা সম্ভব ছিল? ৪ উইকেট দ্রুত পড়ে যাওয়ার পর ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতবে তাতো কেউই ভাবেনিঁ মাশরাফিও নয়, ‘সত্যি কথা বলতে এই পরিস্থিতি থেকে অনেক কঠিন ছিল। যখন ২০০ রান অতিক্রম হলো। পার্টনারশিপ ২০০ হলো। তখন বিশ্বাস জন্মায়। কারণ আমি জানি এই দুইজন (সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ) ভিন্ন কিছু করতে পারে। তারা বহুবার করেছেও। তবে আমি সত্যিই ভাবিনি তারা ২০০ রানের জুটি করে ফেলবে। এটা ছিল বিস্ময়কর।’ সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে যা করেছেন তা আসলে এখন পর্যন্ত কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। তাই মাশরাফির কাছেও প্রশ্ন গেল, এখন পর্যন্ত আপনার দেখা সেরা ইনিংস? অধিনায়ক বললেন, ‘হ্যাঁ। মাহমুদুল্লাহ অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। গত বিশ্বকাপেও করেছে। সাকিবও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। এটা প্রথমবার নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে এ ইনিংসকে হিসেব করতেই হবে।’ ম্যাচের আগেরদিন বলেছিলেন, তামিম এবং তার রান নিয়ে। সঙ্গে অন্য ক্রিকেটারদের কথাও বলেছিলেন। এ প্রশ্ন উঠতেই মাশরাফি বলেন, ‘আমি জানি তামিম প্রতিদিন রান করবে না। তাই হয়েছে। আমরা জানি আমাদের আছে কিছু এক্সট্রা অর্ডিনারি ক্রিকেটার। যেমন মুশফিক, সৌম্য, ইমরুল গত দুটি ম্যাচ খেলল। আমি জানি সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ ভিন্ন কিছু করে দিতে পারে। মোসাদ্দেক তিন ওভার বল করল। ম্যাচের গতিবিধিই পরিবর্তন করে দিল। সে হচ্ছে ইয়ং স্টার। আমরা জানতাম ২৬৬ রান করা সম্ভব। কিন্তু ৩৩/৪ এরপর সত্যিই কঠিন ছিল।’ গত কয়েক বছরে অনেক উন্নতি দেখিয়েছেন। সামনের পথচলায় এটা কতটা গুরুত্ব বহন করবে? মাশরাফি সামনের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে তুলে ধরলেন, ‘আমি গত তিন বছরের কথা বলেছি। অনেক উন্নতি করেছি। কিন্তু এমন উইকেটে, এমন পরিস্থিতিতে যে পারফর্মেন্স হয়েছে তা এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর আসছে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপও আসছে। আমাদের অনেক বুস্টআপ করবে এই জয়।’ এ রকম জয়ের পর কেমন লাগছে? এই জয়টাকে কোথায় রাখবেন? মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ভেরি হাই। স্পেশালি ম্যাচের সিচুয়েশন দেখেন। হয়ত হাফ টাইমের পর মনে হচ্ছিল ম্যাচটা আমাদের জন্য সহজ। কিন্তু যখন ৩০-৩৩ রানে (৩৩ রানে) চার উইকেট পড়ে যায়, তারপর থেকে জয়টা আমাদের জন্য বিরাট ব্যাপার। কারণ ভবিষ্যতে এটা সত্যিকার অর্থে আমাদের অনেক বিশ্বাসী করে তুলবে। এমন ম্যাচ জেতা আমার কাছে মনে হয় অনেক বড় দলের জন্যও কঠিন। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে টপ র‌্যাঙ্কিংয়ের দল যারা আছে, আমরা যারা নিচের দিকে আছি, যেমন শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান আমরা যারা আছি; পাকিস্তান একটা ম্যাচ জিতেছে। শ্রীলঙ্কাও জিতেছে। আমাদেরও আশা ছিল। এই ম্যাচটা যেভাবে হোক জিতে শেষ করতে চাই। তারপর যদি আমরা সেমিফাইনাল না যাই, কিছু করার নেই। আমাদের যেটা করণীয় ছিল সেটা করতে পেরেছি। আমরা লাকিও ছিলাম। কারণ ৩৩ রানে ৪ উইকেটের পরে এভাবে জয় পাব এটার জন্য কিছুটা ভাগ্যেরও দরকার হয়। অবশ্যই আউটস্ট্যান্ডিং ব্যাটিং। সবমিলিয়ে আসলে খুব ভাল লাগছে।’ ইংল্যান্ডে খেলতে আসার আগে টি২০ ক্যাপ্টেন্সি ছাড়লেন। আয়ারল্যান্ডে আসার আগে আপনার ক্যাপ্টেন্সি এবং ওয়ানডে নিয়ে কথা হচ্ছিল। ভবিষ্যতে আপনি ক্রিকেটার হিসেবে এবং অধিনায়কত্ব নিয়ে কী দেখছেন? মাশরাফি জানান, ‘আমি যেটা এনজয় করছি, আমি সেটা খেলছি। কে কথা বলছে শুনে তো লাভ নেই। কারণ ১৬-১৭ বছর খেলছি। আমি কারও কথা শুনে খেলছি না। না আমার পরিবারের কথা শুনেও আমি ক্রিকেট খেলি। আমি এনজয় করি। তাই আমি খেলি। দ্বিতীয় কথা হলো টিমে কন্ট্রিবিউশন, টিমের জয় হোক কিংবা যে কোন ম্যাচে দলের জয় না হলেও আমি চিন্তা করি কন্ট্রিবিউশনটা রাখার। এটাই আসলে আমার ফোকাস থাকে। ভবিষ্যতের চিন্তা আমি কখনই করি না। এখনও করছি না।’ এ জয়টা বাংলাদেশের জন্য, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য, নিজেদের প্রমাণ করার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মাশরাফি বলেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ‘আসলে প্রমাণের কথা বললে বলব যে আসলে একটা ব্যাপার ছিল, এসব স্টেজে যদি আমাদের দল ভাল না করে তখনও আবার কথা ওঠে। এটাও একটা ব্যাপার থাকে। এ জয়টা অবশ্যই আমাদের জন্য ভাল হয়েছে। কারণ আমার বিশ্বাস যে সবাই আমাদের এখন বলবে যে আগের চেয়ে অনেক বেটার সাইড হয়ে উঠছি। হোমে ভাল খেলছিলাম। এখন এ্যাওয়ে ম্যাচে এসেও আমরা কয়েকটা ম্যাচ জেতা শুরু করছি। টিমের কথা যদি বলেন তাহলে বলব যে এ পরিস্থিতি থেকে জিততে পারা, আমার মনে হয় যে টিমকে অনেক বুস্ট আপ করবে। ভবিষ্যতে হয়ত বা আরও সহজ ম্যাচ যেগুলো হবে আমরা হারতে পারি, জিততে পারি; সেই ম্যাচগুলো হয়ত বা আমাদের দিকে আনব। ফিফটি-ফিফটি চান্সে থাকা ম্যাচগুলো আমাদের দিকে আনার আরও চান্স থাকবে।’
×