ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, হত ১

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ জুন ২০১৭

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, হত ১

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মাসুদ ঢালী (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং তিনজন গুলিবিদ্ধসহ চার জন আহত হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামে এই সংঘর্ষ বাধে। এতে গুলিবিদ্ধ মোঃ তারিফ (২০) ও হৃদয়কে (২৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, গুলিবিদ্ধ সাইফুল খান (১৬) এবং আহত ইসলাম দেওয়ানকে (২২) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ হৃদয়কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, দু’গ্রুপই আওয়ামী লীগের হলেও এই সহিংসতা মূলত এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সদর উপজেলার দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামে চরকেওয়ার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন ভূইয়া আপসু গ্রুপ এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষের মধ্যে কিছুদিন ধরে বিবাদ চলছিল। শনিবার সকালে আপসু গ্রুপের লোকজন আকস্মিক হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। নিহত মাসুদ ঢালী কৃষি কাজ করত। সে দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামের মোফাজ্জল ঢালীর পুত্র। এদিকে এই ঘটনায় মন্টু মেম্বার বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এক পক্ষে নেতৃত্বদানকারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চরকেওয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি এক সংঘর্ষে আফসার ভূইয়ার পক্ষে সদর থানা পুলিশ মামলা এন্ট্রি করলেও অপর পক্ষের মামলা গ্রহণ করেনি। তাই তারা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। সেই সুযোগেই শনিবার সকাল ৭টার দিকে দক্ষিণ চরমশুরার মাদবরকান্দি গ্রাম থেকে আকস্মিক হামলা করে আপসু গ্রুপের লোকজন। মূল গ্রামে প্রবেশ করতে না পারলেও মুরাবাড়ি (মূল গ্রামের বাইরের একটি বাড়িতে) হামলা করে অতর্কিতে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায়। অপর দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আফসার উদ্দিন ভূইয়া জানান, গ্রামটির ইউপি মেম্বার বিএনপির মন্টু মেম্বারের পক্ষ নেন জীবন চেয়ারম্যান। এতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী ফকিরের পুত্র হারুন মেম্বার পরাজিত হয়। পরে হারুন মেম্বারকে এলাকা ছাড়া করে দেয়। পুলিশের সহযোগিতায় ৩ মাস আগে এলাকায় ওঠে হারুন মেম্বার। এসব নিয়েই এই বিবাদ চলছিল। শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, নিজেরা ভাড়াটিয়া এক লোককে হত্যা করে হারুন মেম্বারকে ফাসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এই খুনের জের ধরে দক্ষিণ চরমশুরা মাদবরকান্দি গ্রামে জীবন চেয়ারম্যানের লোকজন বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। পুলিশ জানায়, বিগত ইউপি নির্বাচন নিয়ে হারুন মেম্বার এবং মন্টু মেম্বারের এই বিরোধে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন ও সাবেক চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন ভূইয়া আপসু। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, বিগত ইউপি নির্বাচন থেকেই এই বিরোধ। স্থানীয় সাংসদের এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির উপস্থিতিতে এই বিরোধ মিটিয়ে দেয়া হয়। মাসখানেক আগে এই দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এমনকি জেলহাজতে যায়। পরে উভয়ে মিলেমিশে আসামি জেল থেকে বের করে আনে। এতদিন ভালই ছিল। হঠাৎ আবার এই সহিংসতা বাধে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে থানার ওসি ও ডিবি ওসিসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও আসামি গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
×