ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় চীনা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ জুন ২০১৭

শিল্পকলায় চীনা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই হাতের দশটি আঙুল নিয়ে শুরু হলো কারিশমা। আঙুলগুলো কখনও হয়ে উঠছে পাখি, ভেসে আসছে কিচির-মিচির শব্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার শিল্পী আঙুলগুলো রূপ বিড়ালে, ডাক দেয় মিউ মিউ করে। বিড়াল আঙুলগুলো রূপান্তরিত হাঁসে। সেই হাঁসই আবার পরিণত হয় প্যাঁচা কিংবা মোরগে। প্রজেক্টরে আঙুলের ছায়া ফেলে এভাবেই ম্যাজিকাল ওয়ার্ল্ড নাচের পরিবেশনাটি উপস্থাপন করলেন চীনের সিচুয়ান প্রদেশের এক শিল্পী। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে মুগ্ধ হয়ে দর্শক উপভোগ করেছে এমন নানা পরিবেশনা। সব মিলিয়ে পুরো আয়োজনটি ছিল অনবদ্য। নৃত্যের ছন্দ, পুতুলের নাচের নানা ভঙ্গিমা, এ্যাক্রোবেটিক শোসহ বহুমাত্রিক উপস্থাপনায় মঞ্চ মাতায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশের একঝাঁক শিল্পী। চীনা নববর্ষ উদ্্যাপন উপলক্ষে মনোমুগ্ধকর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ-চায়না কালচারাল ইকোনমিক সেন্টার (বিসিসিইসি) এবং সিচুয়ান প্রাদেশিক সরকারের পররাষ্ট্র ও বহির্বিশ্ব বিষয়ক অধিদফতর। সহযোগিতায় ছিল চীনা দূতাবাস ও সিচুয়ান প্রাদেশিক সরকার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং। এছাড়া বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সিচুয়ান সাংস্কৃতিক দলের দলপ্রধান শেন চাও ও বিসিসিইসির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা। রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই চীনের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় দুই দেশের মাঝে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। এখন আমাদের দুই দেশের মধ্যে নানা ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। চীন আমাদের নানাভাবে সাহায্য করছে। আমরা উভয় রাষ্ট্র একে অপরের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তারা কখনও অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সব মিলিয়ে দর্শকরা উপভোগ করে দশটি পরিবেশনা। ‘হ্যাপিনেস’ নামের নাচ দিয়ে পরিবেশনা পর্বের সূচনা। মঞ্চে গোলাপী রঙের পোশাক পরিহিত একঝাঁক শিল্পী। সম্মেলক নৃত্যের মাধ্যমে উঠে আসে সুখময় দৃশ্যকাব্য। এর পর মঞ্চে আসে দুই যুবক। তাঁদের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ‘দ্য স্ট্রেন্থ’। পাঁচ মিনিটের পরিবেশনায় এ জুটি শারীরিক নানা কসরতে মন জয় করে নেয় মিলনায়তনভর্তি দর্শকদের। এরপর ছিল হাতের ছায়ার খেলায় গড়া পরিবেশনা ‘ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ল্ড’। আঙুলের ছায়ার খেলা শেষে উপস্থাপিত হয় আরেকটি ভিন্ন আঙ্গিকের সম্মেলক নাচ। হাতে চীনের ঐতিহ্যবাহী ড্রাম নিয়ে চক্রাকারে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর এক কিশোরীর সঙ্গে দুই পান্ডার দুষ্টুমি হাস্যরসের সৃষ্টি করে মিলনায়তনে। পরিবেশনার শেষে ছোট্ট পান্ডার স্মারক পেয়ে যান অনেক দর্শকই। এরপর পুতুল খেলা। নানা আঙ্গিকে পুতুলের নৃত্য মন জয় করে নেয় দর্শকদের। তারপর ছিল ফুলের আঙ্গিকে সমবেত নৃত্য। যা শেষ হতেই মঞ্চে চার তরুণী। তাদের এ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনায় ছিল শারীরিক নানা কসরত। সিচুয়ান ওপেরা স্টান্ট পরিবেশিত ‘ফেস-চেঞ্জিং’ নামের পরিবেশনাটি ছিল দর্শকদের জন্য ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। নাচের তালে তালে চার শিল্পীর মুখগুলো বদলে যায় বারবার। মুখোশ পরিহিত শিল্পীরা নাচতে নাচতে নেমে আসে দর্শকদের কাছে। কারো সঙ্গে আবার ঘটে তাঁদের করমর্দন। সিচুয়ানের ঐতিহ্যবাহী নাট্য আঙ্গিকের নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
×