ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মের দাবদাহে শান্তির পরশ

বেগুনী সোনালু রং ছাপিয়ে আবির রাঙা ইবি...

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১১ জুন ২০১৭

বেগুনী সোনালু রং ছাপিয়ে আবির রাঙা ইবি...

আসিফ খান ॥ গ্রীষ্মের দাবদাহে দেহমনে এতটুকু শান্তির পরশ বোলাতে প্রকৃতি সেজেছে বেগুনী রঙের জারুল, হলুদ রঙের সোনালু আর রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। প্রকৃতির এ তিন রং নিয়েই সেজেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় লিখেছেন, এই পৃথিবীর এক স্থান আছে-সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল। জারুল ফুলের বেগুনী বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভন-সুন্দর তার পাপড়ির নমনীয় কোমলতা। ছয়টি মুক্ত পাপড়ির মাঝে হলদে পরাগরেণু দিয়ে গঠিত এর ফুল। বেগুনী রঙের এ ফুল প্রেমিক হৃদয়ে সহজেই দোলা জাগায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিংসংলগ্ন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ফুটেছে হালকা বেগুনী রঙের এ জারুল ফুল। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে বাড়তি রং লাগিয়েছে সারি সারি সোনালু ফুলের গাছ। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ফুটতে শুরু করেছে সোনালু ফুল। কাঁচা সোনা রঙে সজ্জিত হয়েছে পুরো গাছ। ফুলগুলো এমনভাবে গাছের মধ্যে ঝুলে আছে, দেখলে মনে হয় সোনার অলঙ্কারে নববধূকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মনে হয় বাঙালী বধূর কানে হলদে রঙের ঝুমকোর মতো ঝুলে আছে, যা দেখলে যে কারও মন ছুঁয়ে যাবে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়বে সোনালু ফুল গাছের সারি। ফ্রেন্ডশিপ চত্বর থেকে ডায়না চত্বর পর্যন্ত দুই পাশে ফুলের ডালা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। দেখে মনে হয় তারা ক্যাম্পাসের অতিথিদের অভ্যর্থনা দিতে ব্যস্ত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে/ তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী। আরও কত কবি-শিল্পীর লেখায় উঠে এসেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। রক্তবর্ণ ধারণ করে যেন আকাশ পানে চেয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া। সেই লাহিতে লাল হয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে... তাই কবি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের লাল রক্তের সঙ্গেই যেন কৃষ্ণচূড়ার তুলনা করেছেন। ক্যাম্পাসের জারুল আর সোনালু ফুলের সমাহার ঢাকা পড়েছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তে। বাতাসের দোলে ফুলেরা দোল খেতে খেতে ডেকে পথিকদের পরিচয় করিয়ে দেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই প্রধান ফটকের সমনে রয়েছে বিশালাকৃতির একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। কুষ্টিয়া-খুলানা মহসড়কের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। যাওয়া-আসার পথে একবারের জন্য হলেও তাকিয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুল করেন না বাসে থাকা যাত্রীরা। শুধু প্রধান ফটকের সামনেই নয়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ঢুকতে চোখে পড়ে রক্ত চোখে চেয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া। এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের পূর্ব পাশে থাকা গাছটির নিচে সব সময় চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের আড্ডা, প্রেমিক প্রেমিকার খুনসুটি। আবাসিক এলাকা, প্রশাসন ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে, জিমনেসিয়ামের সামনে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে, খালেদা জিয়া হলের মধ্যে ও পেছনে, থানা গেটসংলগ্ন এবং টিএসসির পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে এক সারি কৃষ্ণচূড়া। কোন এক শিল্পীর কণ্ঠে আমরা শুনি আকাশ অনেক রঙে রাঙনো মাটিতে ফুলের মেলা সাজানো... কৃষ্ণচূড়া তার দোপাটি মেলে দিল। ঠিক এভাবেই কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া পাপড়িগুলো যেন লাল গালিচা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানায় সবাইকে।
×