ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ জুন ২০১৭

 মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৫তম দিবস। একে একে অতিবাহিত করেছি আমরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার অর্ধপর্ব। মাহে রমজান কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসের বিভিন্ন পর্বে কুরআনের শিক্ষা মূর্ত হয়ে উঠে। আজ আমরা এখানে পাক কুরআনের একটি মধুময় সূরা নিয়ে আলোচনা করব। যাতে মধুমক্ষিকার প্রতি আল্লাহর অপার ভালবাসা, মহৌষধ মধু সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। এর নাম সূরা নাহল। সূরা আন-নাহল কুরআনুল করীমের ১৬তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১২৮ এবং রুকু ১৬টি। ব্যাপক সাক্ষ্য-প্রমাণাদি হতে জানা যায় যে, এ সূরা হযরতের (স) মক্কা জীবনের শেষ পর্যায়ে নাজিল হয়েছিল। এ সূরা নাজিল হওয়ার সময় মুসলমানদের প্রথম দেশ ত্যাগের ঘটনা ‘হাবশা বা আবিসিনিয়ায় হিজরত’ সম্পন্ন হয়েছিল। এ সূরায় খোদা লা-শারীকের সঙ্গে তৎকালীন আরব জাতিরা যে বহুবিধ ইলাহ জানতো তার প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং মহামানবদের অবাধ্য হয়ে তারা যে অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকতো তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টি রহস্যের তুলনা দিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পেশ করা হয়। সূরায় মুসলমানদের সাহস সঞ্চার করার জন্য এ কথা বোঝানো হয় যে, আল্লাহ তায়ালা যাদের প্রতি মেহেরবান ও সহায় তারা দুনিয়ায় বাঁচা ও সম্মান পাওয়ার বহু অবলম্বন পেয়ে থাকেন। দুনিয়াতে দম্ভ ও অহঙ্কার নয়, বরং কুশল ও সৎ শ্রমের মাধ্যমেই জীবনকে ভালরূপে উপভোগ করা সম্ভব। এ পর্যায়ে মুসলমানদের কুশল, সংঘবদ্ধতা, আনুগত্যের শিক্ষা দিতে গিয়ে মৌচাকের নির্মাণ শৈলী, মৌমাছিদের একতা, শ্রম ও তাদের আনুগত্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে গৃহপালিত জন্তুর দেহ সংগঠন, আঙ্গুরের গঠন আর মধু-মক্ষিকার সৃষ্টি স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। যিনি এসব জিনিসের ডিজাইন তৈরি করেছেন তিনি মহাবিজ্ঞ, সুপ-িত ও অমুখাপেক্ষী। অন্যথায় এত জন্তু-জানোয়ার, এত গাছপালা, এতসব মৌমাছি মিলেমিশে মানুষের জন্য এমন উত্তম-উৎকৃষ্ট উপাদেয়, সুস্বাদু জিনিস সবসময় তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে কিভাবে? ‘নাহল’ অর্থ মধু-মক্ষিকা। এ সূরার ৬৮নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-‘আর লক্ষ্য কর, তোমাদের খোদা নাহল বা মধু-মক্ষিকার প্রতি এ কথা ওহী করেছেন যে, পাহাড়ে-পর্বতে, গাছে আর ওপরে ছড়ানো লতাপাতায় নিজেদের ছাতা নির্মাণ কর।’ আয়াতটির পরবর্তী আয়াতে বর্র্ণিত হয়েছে- ‘এরপর (এই মৌমাছি) সর্বপ্রকার ফল থেকে (রস) ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথসমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রংয়ের পানি নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন।’ মৌমাছিদের প্রতি এ খোদাদাদ বোধশক্তি তীক্ষèবুদ্ধি তাদের শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে সুন্দরভাবে অনুমান করা যায়। এ দুর্বল প্রাণীর জীবন ব্যবস্থা মানুষের রাজনীতি ও শাসননীতির সঙ্গে চমৎকার খাপ খায়। সমগ্র আইনশৃঙ্খলা একটি বড় মৌমাছির হাতে থাকে এবং সে হয় মৌমাছিকূলের শাসক। তার অভাবনীয় ব্যবস্থাপনা, অলঙ্ঘনীয় আইন ও বিধিমালা দেখে মানববুদ্ধি বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। স্বয়ং ‘রানী মৌমাছি’ তিন সপ্তাহের মধ্যে ছয় হাজার থেকে বার হাজার পর্যন্ত ডিম দেয়। দৈহিক গঠন ও অঙ্গসৌষ্ঠবের দিক দিয়ে সে অন্য মৌমাছিদের চাইতে ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সে কর্মবন্টন পদ্ধতি অনুযায়ী প্রজাদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত করে। তাদের কেউ তাদের রক্ষকের দায়িত্ব, কেউ ডিমের হেফাজতের, কেউ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের লালন-পালনের দায়িত্বে নিয়োজিত। কেউ স্থাপত্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক কর্মসমাধা করে। কেউ কেউ স্থপতিদের কাছে মোম সরবরাহ করে। কোন কোন মৌমাছি বিভিন্ন প্রকার ফুল ও ফলের ওপর বসে রস চুষে। এই রস তাদের পেটে পৌঁছে মধুতে রূপান্তরিত হয়। মধু মৌমাছি ও তাদের সন্তানদের খাদ্য এবং এ’টি আমাদের সবার জন্য সুস্বাদু খাদ্য নির্যাস আর নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র। প্রত্যেক মৌমাছি শ্রমিক সম্রাজ্ঞীর আদেশ মনে প্রাণে শিরোধার্য করে নেয়। যদি কোন মৌমাছি আবর্জনার স্তূপে বসে যায় তবে চাকের দারোয়ান তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বাঁধা দান করে এবং রানীর আদেশে তাকে হত্যা করা হয়।-(আল জাওয়াহের)। আগামীকাল সমাপ্য।
×