ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনে ১০ দফা সুপারিশ ভাস্করদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ জুন ২০১৭

উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনে ১০ দফা সুপারিশ ভাস্করদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে কথিত ভাস্কর্য স্থাপন ও স্থানান্তর নিয়ে বিব্রত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ভাস্কর্য অপসারণ ও প্রতিস্থাপনের ঘটনায় জনমনে বিভ্রান্তি ও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভাস্কর্যশিল্পীরা। ভাস্কররা বলেছেন, ভাস্কর্যের বিশেষ একটি ধারা অর্থাৎ গণপ্রাঙ্গণ বা উন্মুক্ত স্থানে ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে বারবার নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মূলত একটি শুভ উদ্যোগের ক্ষেত্রে ভুল প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণে। আর এ সুযোগে প্রায়ই ধর্ম ও অন্যান্য প্রসঙ্গের দোহাই তুলে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে আয়োজিত এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ প্রাক্তনি সংঘ। এতে বক্তব্য রাখেনÑ প্রাক্তনি সংঘের আহ্বায়ক মজিবর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম, ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এএএম কাওসার হাসান, রাজু ভাস্কর্যের ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী এবং প্রাক্তনি সংঘের সদস্য সচিব ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল খবির। এ সময় উন্মুক্ত স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে দশ দফা সুপারিশ দেন ভাস্কর্যশিল্পীরা। লিখিত বক্তব্যে এএএম কাওসার হাসান বলেন, গণপ্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন নিঃসন্দেহে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ ধরনের প্রচেষ্টা যে কোন জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও রুচিবোধের পরিচায়ক। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর ও জনপদে ভাস্কর্য হিসেবে কিছু স্থাপনা বসানো হয়েছে। অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে যে, এগুলোর বেশিরভাগই কদর্য ও কুরুচিপূর্ণ। দৃষ্টিনন্দন না হয়ে বরং দৃষ্টিদূষণের সৃষ্টি করছে। এ অনান্দনিক নির্মাণসমূহ এ দেশের শত শত ভাস্করের ভাবমূর্তি যেমন বিনষ্ট করছে, তেমনি জাতীয় মর্যাদার জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এসব ভাস্কর্যের বেশিরভাগই নির্মিত ও স্থাপিত হয়েছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। নির্মাণের আগে, নির্মাণের সময় অথবা পরে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের কোন অভিমত কখনই গ্রহণ করা হয়নি। যেহেতু ভাস্কর্য স্থাপন প্রায়শই অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল হওয়ার সুযোগ থাকে, তাই এক ধরনের অসাধু চক্র ঠিকাদারি প্রক্রিয়ায় সবার অজান্তে এ ধরনের স্থাপনা তড়িঘড়ি করে বসিয়ে অসৎভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তৎপর রয়েছে। প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতার কারণে ভাস্কর্যের নামে এসব দুর্বল মানহীন স্থাপনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেয়ার জন্য পরবর্তীতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এ সুযোগ নিয়ে এসব দুর্বল নির্মাণকে কেন্দ্র করে ধর্ম ও অন্যান্য বিষয়ের দোহাই তুলে স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট চত্বরে ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনাবলী তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একটি গণতান্ত্রিক, মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সমাজ নির্মাণে যা নিঃসন্দেহে প্রতিবন্ধক। ক্ষোভ প্রকাশ করে কাওসার হাসান বলেন, বিগত ২০০৮ সালে স্বচ্ছ ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত শিল্পীদের মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য নীতিমালা প্রস্তাব করে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। কিন্তু অজানা কারণে বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায় এবং একই ধরনের সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। ফলস্বরূপ দেশ ও জাতির জন্য শুধু অবাঞ্ছিত সঙ্কটই তৈরি হচ্ছে না বরং ভাস্কর্যের সমকালীন অনুশীলনকেও তা বাধাগ্রস্ত করছে এবং ভাস্কর্য সম্পর্কে অহেতুক বিভ্রান্তির জন্ম হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ প্রাক্তনি সংঘ দশ দফা সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছেÑ সিটি কর্পোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধনে ভাস্কর্য স্থাপনের প্রক্রিয়া স্থগিত ও প্রচলিত বিধি বাতিল করতে হবে, গণপ্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের আগে ভাস্কর্য বিষয়ে প্রত্যক্ষ বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ, বিশেষজ্ঞ বিচারকম-লী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃত ভাস্করের সর্বোৎকৃষ্ট ও যথাযথ ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য নির্বাচন করবেন, নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সকল মডেল ও নক্সা নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা, দর্শক প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় চূড়ান্তভাবে ভাস্কর্যটি স্থাপনের জন্য অনুমোদন, নির্বাচকম-লী জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তার উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন, নির্বাচকম-লী প্রকৃত ভাস্করদের শিল্পকর্ম নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন এবং ভাস্কর্য নির্মাণ ও সম্মানীপ্রাপ্তি তত্ত্বাবধান করবেন, সরকারী ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ নীতিমালা মেনে চলা, ভাস্কর্যকে পাঠ্যসূচীতে আবশ্যক করা এবং ইতোমধ্যে স্থাপিত মানহীন, কুরুচিপূর্ণ ও দৃষ্টিদূষণকারী ভাস্কর্য প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনে যোগ্য ভাস্করদের সৃষ্ট মানসম্পন্ন ভাস্কর্য নির্বাচনের জন্য মেয়রবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনসমূহ, রাজউক, সওজ, পূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদফতর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদসমূহসহ, সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
×