ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সারাদেশে তাপপ্রবাহ

মোরার রেশ না কাটতেই ফের লঘুচাপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ জুন ২০১৭

মোরার রেশ না কাটতেই ফের লঘুচাপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাব কাটতে না কাটতেই সাগরে আবারও সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ। আর লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। লঘুচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিফতরের পক্ষ থেকে এই সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। এদিকে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, মাইজদীকোর্ট, রংপুর, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের ওপর তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে কয়েকদিন ধরে প্রচ- গরমে হাঁপিয়ে উঠছে দেশবাসী। প্রকৃতির এই দাবদাহের কারণে রোজাদাররাও পড়েছেন কষ্টের মধ্যে। অপর দিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশের ভেতরে প্রবেশ করা মৌসুমি বায়ুও বিস্তার লাভ করছে ধীরে ধীরে। তা অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় থাকায় দাবদাহ বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে সারাদেশে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাপপ্রবাহ কমে গিয়ে বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এর আগে গত ৩০ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান ৮ জন। ঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫৪ হাজার ৪৮৯টি পরিবারের ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় মোরার ১০ দিন অতিবাহিত হতে না হতেই আবার ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সতর্ক সঙ্কেত জারি করা হলো। আবহওয়াবিদরা বলছেন প্রাকৃতিক নানা কারণে সমুদ্রের একটি অঞ্চলে কেন্দ্রাভিমুখী ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল বা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে এ ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চলটি শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। তাদের মতে নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ৪১ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। গভীর নিম্নচাপের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। কোন ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়। শনিবার ২৪ ঘণ্টার আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে বলা হয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, মাঈজদীকোর্ট, রংপুর, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা কিছু কিছু অঞ্চলের ওপর থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানায় আগামী ৩ দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। এর আগে গত ৩০ মে দেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোরা। যার প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় উপকূলীয় এলাকায়।
×