ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী সুইডেন সফরে যাচ্ছেন ১৩ জুন

ইউরোপের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ জুন ২০১৭

ইউরোপের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক, সামরিক, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুত, পোশাক রফতানি, গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক ইত্যাদি দেশগুলোর সঙ্গে অতীতের চেয়ে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইডেন সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জার্মানি সফরের পর গত ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রিয়া সফর করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ৬০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ভিয়েনায় অনুষ্ঠেয় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি অস্ট্রিয়ায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে অস্ট্রিয়া যান। অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী তথা ফেডারেল চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্নের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। অস্ট্রিয়া সফরকালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু, কূটনৈতিক পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, অভিবাসন, উদ্বাস্তু সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। এই সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-ভিয়েনা সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। আগামী ১৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইডেন সফরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রীর এটাও প্রথম সুইডেনে দ্বিপক্ষীয় সফর। প্রধানমন্ত্রীর সফরে ঢাকা-অসলোর মধ্যে দুই থেকে তিনটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সকল বিষয়ই দুই সরকারপ্রধান আলোচনা করবেন। সেখানে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণা সই হবে। ওই ঘোষণার আলোকেই আগামী দিনে ঢাকা-স্টকহোম সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এই সুইডেন সফর দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশাপ্রকাশ করা হচ্ছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সম্পর্কিত যুক্তরাজ্য সরকারের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-লন্ডন রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন খুবই ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরেও ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতেও গভীরভাবে আগ্রহী লন্ডন। এদিকে বাংলাদেশের অনেক পুরনো বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বেড়েছে। গত মার্চ মাসে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগারি বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে ‘আন্তঃসরকার কমিশন’ গঠন চুক্তি সই হয়েছে। আন্তঃসরকার কমিশন দুই দেশের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে আরও কিভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে এই কমিশন কাজ করবে। এছাড়া বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুত ও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে মস্কো। এদিকে গত বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নরওয়ে, সুইডেন, ডেনর্মাক ও আইসল্যান্ড সফর করেছেন। সে সফরের মধ্যে দিয়ে এসব দেশগুলো তাদের জোরালো অবস্থান প্রকাশ করেছে। সমুদ্র তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, জাহাজ নির্মাণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিদ্যুত উৎপাদন, সমুদ্র অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে চেয়েছে নরওয়ে। এছাড়া চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফর করেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্জ ব্রেন্ড। এই সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। সৌর বিদ্যুত প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নরওয়ে। বিশেষ করে নরওয়োজিয়ান কোম্পানি স্কাটেক সোলার বাংলাদেশে আটশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুত প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র পরিবহনে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডেনমার্ক। এছাড়া ডেনমার্ক এখন সবুজ উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবুজ উন্নয়নে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। ডেনমার্ক বাংলাদেশে পানি ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধে নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া ডেনমার্কের কাছে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আইসল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আগ্রহী আইসল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মৎস্য আহরণে সক্ষম নয় বাংলাদেশ। গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশের প্রযুক্তিও দুর্বল। তবে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে দেশটি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলেও একমত হয়েছে। বিশেষ করে সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আইসল্যান্ড বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত এপ্রিলে বেলারুশ ও পোল্যান্ড সফর করেছেন। সে সময় দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এই সফরের মধ্য দিয়ে এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
×