ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দু’বছরে চাহিদা যত বাড়বে উৎপাদন তত হবে না

আরও এক হাজার ৭শ’ মে.ও তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ জুন ২০১৭

আরও এক হাজার ৭শ’ মে.ও তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত আরও এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দুই বছর বিদ্যুত চাহিদা যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে না। এতে করে এখনই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে ভয়ঙ্কর সঙ্কটে পড়তে হবে। সঙ্কট সামালের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি আরও ৭০০ মেগাওয়াটের তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের নতুন প্রকল্প নির্মাণের বিষয়ে একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় দেখা যায় ৭০০ মেগাওয়াটের বার্জ মাউন্টেড এবং এক হাজার মেগাওয়াটের স্থায়ী বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর সবই বিনাদরপত্রে বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইনের মাধ্যমে নির্মাণের চিন্তা করছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগ বলছে বার্জ মাউন্টেড ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে কক্সবাবাজের ২০০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ২০০ মেগাওয়াট, চাঁদপুর, নওয়াপাড়া এবং বাগেরহাটে ১০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইতে ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়াও মাগুরা, যশোর, লালমনিরহাট, নওগাঁওর নিয়ামতপুর, জয়পুরহাটে ১০০ মেগাওয়াট এবং গাজীপুরের ভালুকাতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন কিভাবে হবে তাও নির্ধারণ করেছে বিদ্যুত বিভাগ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুত বিভাগ একটি কমিটি করেছে। সরাসরি আবেদনের ভিত্তিতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ পাবেন। তবে এসব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই বিদ্যুত উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কেন তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার ঘরে ঘরে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রস্তুতি নেই। উৎপাদন কম হওয়ায় এখনই গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে। এরপর চাহিদা আরও বাড়লে সামাল দেয়া কঠিন। এই কারণেই নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আগামী বছর থেকে রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের অবসরে যাওয়া শুরু হবে। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রই তেল চালিত। তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় বেশি। সরকার ২০০৯ সালের পর রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সময় বলেছিল বড় বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এলে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখন এসে আবার তেলের দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে। এসব বিদ্যুত কেন্দ্র ছোট আকারের হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়ে। যাতে বাজেটে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে কেবল পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শেষ হবে। অন্য কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না। এতে বিশাল বিদ্যুত ঘাটতিতে পড়তে হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে ২০২৫ সাল নাগাদ যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে মাত্র তিনটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে পায়রা, রামপাল এবং মাতারবাড়ি। সব মিলিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে তিন হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকারের ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোন প্রকল্পের অগ্রগতি না থাকায় বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত সরকার। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেন বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক সব কেন্দ্র আসবে না। তিনি জানান, এরমধ্যে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র আসতে পারে। এজন্য সরকার বিকল্প হিসেবে এলএনজির কথা চিন্তা করছে।
×