ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুই-সুতায় জীবন বদলেছেন মিতু

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১০ জুন ২০১৭

সুই-সুতায় জীবন বদলেছেন মিতু

লেখা-পড়ার পাশাপাশি সুঁই-সুতার ফোঁড়ে কাপড়ে নক্সা তুলে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন মিতু। পাশাপাশি প্রতিবেশী নারীদেরও স্বাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মিতু। নওগাঁ সরকারী বিএমসি মহিলা কলেজের অর্নাস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবার অভাবের সংসারে কাপড়ে সুঁই-সুতার নক্সা তুলে সচ্ছলতা আনার স্বপ্ন দেখেন মিতু। সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্ব-উদ্যোগে হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। শুধু নিজের জন্য নয়। এলাকার আরও ১০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরও স্বাবলম্বী করে তোলার ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদিন সকলে একসঙ্গে বসে খোশ-গল্পের পাশাপাশি কাপড়ে নক্সা তোলার মজাই আলাদা। আর এ কাজ করে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন তিনি। নওগাঁ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান ও শাহিদা বেগমের ছোট মেয়ে মিতু। বাবা আব্দুল মান্নান শারীরিক প্রতিবন্ধী। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরিজীবী। মা শাহিদা বেগম গৃহিণী। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে সেনা সদস্য। মা শাহিদা বেগমের কাছ থেকে সুঁই সুতার কাজের হাতেখড়ি মিতুর। প্রথমে অল্প স্বল্প কাজ করতেন তিনি। পরে বুটিকসের দোকান থেকে চাহিদা মতো কাপড় এনে কাজ শেষে যথাসময়ের মধ্যে দিতে হতো। তার কাজের মান ও ডিজাইন ভাল হওয়ায় এখন চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে কাজের চাপও। গত দু’বছর থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সুঁই সুতার কাজ করছেন মিতু। কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট বুটিকসের দোকান থেকে ১৫/২০ টি থ্রি-পিস ও শাড়ি সেট নিয়ে আসেন নক্সা তোলার জন্য। আর এগুলোর ওপর নিজের পছন্দ মতো গ্রাফিক্স করে সেলাই করতে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীদের। আর এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রামের হতদরিদ্র গৃহবধূরাও। সংসারের অন্য কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে সুঁই আর সুতায় কাপড়ের ওপর ফুটিয়ে তোলে তারা হরেক রকম মনকাড়া নক্সা। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি, ওয়ালম্যাট, কুশন কভার, শাড়ির নক্সীপাড়, থ্রি-পিস, ওড়না, বেডসিটসহ নানা রকম কাপড়ে নক্সা তুলে সেলাই করে তারা। এছাড়া পুঁতি পাথরের সামগ্রীও তৈরি করে তারা। তাছাড়া মজুরী পায় থ্রি-পিস সেলাই করে ১৫০ টাকা, ছবি আঁকায় ৫০ টাকা, পাঞ্জাবি সেলাই করে ৪৫০ টাকা, ছবি আঁকায় ১০০ টাকা, শাড়ি সেলাই করে ৫০০-৬০০ টাকা, ছবি আঁকায় ১০০-১৫০ টাকা, কুশন কভার সেলাই করে ৩০০-৩৫০ টাকা। গৃহবধূ বীথিকা বলেন, স্বামী ভ্যান চালক। স্বামীর আয় থেকে সংসার চালাতে গিয়ে মাস শেষে টানাপোড়েন দেখা দিত। গত তিন মাস থেকে সুঁই সুতা দিয়ে হাতের কাজ করছেন তিনি। মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এই টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটান তিনি। শোভা রানী ও মমতাসহ কয়েক গৃহবধূ বলেন, সেলাই শেখার আগে তাদের কোন রোজগার ছিল না। মিতুর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে সংসারের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে এ কাজ করি। মানে ও গুণে ভাল হওয়ায় আগের তুলনায় হাতের কাজের এসব কাপড়ের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় মিতু বলেন, বড় বুটিকস কারখানা খোলা। যেখানে অনেক নারী কাজ করবে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তবে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে বিকশিত করা সম্ভব। মিতুর বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, মেয়ের হাতের অনেক কাজ জানা আছে। বেকারত্ব দূর করার জন্য নিজেই কিছু করার চেষ্টা করছে। এলাকার নারীদেরও সহযোগিতা করছে। অনেক নারীর এখন এ কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×