ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেবী বেগম থেকে নক্সী বেবী

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১০ জুন ২০১৭

বেবী বেগম থেকে নক্সী বেবী

আগে ছিলেন গাঁয়ের কিষাণ বধূ। এখন নক্সী কাঁথার কারিগর। নিজের ও দশ গাঁয়ের নারী কর্মীদের হাতে তৈরি নক্সী কাঁথা যাচ্ছে ব্রিটেন ডেনমার্ক অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। তিনি এখন নারী কর্মী সৃষ্টির কারিগর। তাঁর নাম বেবী বেগম। স্বামী এখন আর কৃষি কাজ করেন না। পরিবারের সচ্ছলতা আসায় তার দুই সন্তানকে শিক্ষিত করছেন। ছেলে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্স ক্লাসের শিক্ষার্থী। মেয়ে বগুড়া সরকারী মজিবর রহমান মহিলা কলেজ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বেবী বেগমের বাড়ি বগুড়া সদরের মহাস্থানের কাছে আখলাছা গ্রামে। স্বামী লোকমান হোসেন কৃষি কাজ করতেন। কোন রকমে দিনগুজরানের সংসার ছিল। ১৯৯১ সালে বগুড়ার চকলোকমানের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (পিইউপি) নক্সীকাঁথার প্রশিক্ষণের কর্মীরা গ্রামে গিয়ে বেবী বেগমসহ কয়েকজনকে নক্সীকাঁথা বুনন শেখায়। কৃষি কাজের হাতে ওঠে সুঁই সুতা ও নক্সা। পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী আবু হাসানাত সাঈদ বেবী বেগমের কাজে মুগ্ধ হয়ে শহরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সেখানে লন্ডন থেকে ট্রেইনার এসে বেবীকে রফতানি উপযোগী নক্সীকাঁথা বুনন ও ডিজাইন শেখায়। লন্ডনের নারী ডিজাইনার সুফি তার নিজের দেশে নারী উন্নয়নে কাজ করেন। পিইউপির নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে নারী উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে বেবী বেগমকে সংগঠক নির্বাচিত করেন। এরপর বেবী বেগম গ্রামের নারীদের কর্মজীবী বানাতে মাঠে নামেন। হয়ে ওঠেন নক্সী বেবী। বর্তমানে তিনি বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি গ্রামে নারীদের নক্সীকাঁথার কারিগর হিসেবে গড়ে তুলছেন। তাদের হাতকে রফতানি যোগ্য নক্সীকাঁথা বুননে পারদর্শী করে তুলছেন। তিনি নিজেও নক্সীকাঁথা বুনছেন। বেবী বেগমের অধীনে এখন অন্তত সাড়ে তিন শ’ নারী নক্সীকাঁথা বুনছে। বর্তমানে এসব নারী নক্সীকাঁথার পাশাপাশি বেডশিট, কুশন কভার, মেয়েদের পার্টস, হাত ব্যাগ, মানি ব্যাগসহ কাপড়ে তৈরি নানা কিছু বানাচ্ছে। নক্সী করা এসব পণ্য দেশের বাজার ছেড়ে বিদেশেও যাচ্ছে। কাজের সুবিধার জন্য নারীদের তিনি গ্রুপে ভাগ করেছেন। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ২০ থেকে ৩০ নারী। প্রতিদিন অন্তত ২টি গ্রুপে গিয়ে নক্সীকাঁথা বুননে তদারকি করেন এবং ডিজাইন দেখিয়ে দেন। এসব নারী তাদের নিজেদের বাড়িতেই নক্সীকাঁথা বোনে। মহাস্থান, ধনমোহনী, বিহার, জাহানাবাদ, ধাওয়াকোলা আখলাছাসহ কয়েকটি গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি নক্সীকাঁথা ও অন্য পণ্য পিইউপির মাধ্যমে যাচ্ছে বিদেশে। বেবী বেগম বললেন একটা সময় তার ঘরে ছিল অভাব। এখন আর তা নেই। নিজের অভাব ঘুচিয়ে গ্রামের নারীদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করে শক্তিশালী করছেন। স্বামী লোকমান হোসেন এই কাজে সহযোগিতা দেন। বেবী বেগম বললেন, নারী কর্মজীবী হলে সংসারের অভাব দূর হয়। আরেক দিকে নারীর এই ক্ষমতায়ন নারী নির্যাতনসহ সমাজের অন্যায়কে দূর করার সহযোগী হয়ে আসে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×