ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়েলে কোটিপতি দিদার-সেলিনা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১০ জুন ২০১৭

কোয়েলে কোটিপতি দিদার-সেলিনা

২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ বছরে কোয়েল পাখি পালন করে নরসিংদীর দিদার আলম এখন কোটিপতি। শখেরবশে পাখি পালন শুরু করলেও এখন স্থানীয়দের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই সফলতায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখছেন স্থানীয়রা। পলাশ উপজেলার চর্নগরদী গ্রামের পল্লী চিকিৎসক দিদার আলম এক সময় টানাটানির সংসারে স্কুলপড়ুয়া ছেলের বায়না মেটাতে ৮০ টাকায় এক জোড়া কোয়েল পাখি এনে দেন ছেলেকে। সেই পাখির ডিম দেখে আগ্রহী হয়ে ২০১২ সালে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি আরও ৬শ’ কোয়েল পাখির বাচ্চা এনে বাণিজ্যিকভাবে খামার শুরু করেন। অল্প পরিশ্রমে পাখির ডিম উৎপাদন করে এলাকার বেকার যুবকদের দিয়ে বাজারে বিক্রি শুরু করেন । স্থানীয়দের কাছে ডিমের চাহিদা থাকায় প্রথম বছরই লাভের মুখ দেখেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডলি। এতে উৎসাহিত হয়ে তৈরি করেন পরিকল্পিত কয়েকটি কোয়েল খামার। প্রতিবছরই বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৫০ হাজার কোয়েল পাখি। প্রতি দিন পাচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডিম। এসব ডিম থেকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর নিজস্ব ইনকিউবেটরের মাধ্যমে উৎপাদন করছেন ৩০ হাজারের বেশি বাচ্চা। সেলিনা আক্তার ডলি জানান, কোয়েল পাখি এক হতে দেড় মাস বয়স থেকেই ডিম দেয়া শুরু করে এবং প্রতিদিন ডিম দেয়। ডিম খুবই পুষ্টিকর বিধায় এর চাহিদা অনেক বেশি। ডিম দেখতে অন্য পাখির ডিমের মতো ছিটানো রংয়ের। পাখিগুলোকে দিনে ২/৩ বার খাবার দিতে হয়। মোরগের মতো ঠুকরে কোয়েল পাখি খাবার খায়। কাকের মতো শত্রু পাখি দেখলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে। খামারে ১০ শতাংশ পুরুষ কোয়েল পাখি রাখতে হয়। শীতের মধ্যে কোয়েল পাখি ডিমের চাহিদা থাকে অনেক বেশি গরমে চাহিদা থাকে কম। বর্তমানে একশ’ ডিম বাজারে ২ শ’ থেকে ২শ’ ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দিদার আলম জানান, কোয়েল পাখির ব্যবসা করে আমি নিজে উপকৃত, দেশের মানুষও উপকৃত। কারণ নরসিংদী জেলা থেকে হাজার হাজার ডিম দেশের বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় পাইকাররা এসে নগদ টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষ ডিম খেতে পারছে। তিনি আরও জানান, পাঁচ বছর আগে পাখি পালনের দিকে মনোযোগী হই। পরে আমার স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডলি আমাকে সহযোগিতা করে। একপর্যায়ে আমাদের আরও শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমার ১০টি খামার রয়েছে এবং ১৫/২০ শ্রমিক কাজ করছে আমার এসব খামারে। নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল ছামাদ মিয়া জানান, কোয়েল পাখি পালন করে দিদার আলম লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে তিনি কোটিপতি, বাংলাদেশের একটি জেলা ছাড়া বাকি ৬৩ জেলায়ই তাঁর পাখি সরবরাহ হচ্ছে। এ পাখিটি ছোট, সকলেই লালন পালন করতে পারে। এ পাখির রোগবালাই কম হয়। এ জন্য দিদার আলম অত্যন্ত পরিশ্রম করে ৫০ হাজার পাখি পালন করছেন। দিদার আলম বর্তমানে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তার খামার দেখে অনেকেই অনুরূপ খামারের মালিক হয়েছে। অনেকের খামারে উৎপাদিত কোয়েল পাখি ও ডিম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছে খামার মালিকরা। -মোস্তফা কামাল সরকার নরসিংদী থেকে
×