ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার পারে টিনের ঘর, গরুর গোয়ালে বিনষ্ট তীরের সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১০ জুন ২০১৭

পদ্মার পারে টিনের ঘর, গরুর গোয়ালে বিনষ্ট  তীরের সৌন্দর্য

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরবাসীর অন্যতম বিনোদন স্পট পদ্মা নদীর পার দখল হতে শুরু করেছে। পারের এলাকা দখল করে এলাকাবাসীর গরুর গোয়ালের পর এবার টিনের ঘর তুলে সেখানে বসবাসও শুরু হয়েছে। প্রশান্তির আশায় মানুষ নদীর পাড়ে আসলেও পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন যে আশা নিয়ে নদীর পাড় সাজিয়ে তারুণ্যের উচ্ছাসে গতি এনেছিলেন, বর্তমানে নদীর তীরের সৌন্দর্য ম্লান হওয়ার পাশাপাশি হারিয়ে গেছে সেই গতি। নদীর তীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশের দায়ভার থাকলেও এ নিয়ে কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই এখন সিটি কর্পোরেশনের। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে নদীর পাড়। এরইমধ্যে অনেক জায়গা বেদখলও হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন হাল হলেও সৌন্দর্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য পদ্মা পাড়কে দৃষ্টিনন্দন করতে কাজ শুরু করেছেলিনে তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সিটি শুধু নদীর পাড় নয় পুরো রাজশাহী নগরীকে সাজিয়েছিলেন আধুনিকতায়। নগর উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছিলেন। নগরবাসীর বিনোদনের কথা মাথায় রেখে তিনি নগরীর পদ্মারপাড়ে পঞ্চবটি, পদ্মা গার্ডেন, লালন শাহ মুক্ত মঞ্চ, বড়কুঠি ও টিআই বাঁধের সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ করেছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব কাজ করেন। টাইলস বসিয়ে তৈরি করা হয় মনোরম ওয়াকওয়ে। তবে, বর্তমানে এসব জায়গা নষ্ট হতে বসেছে। অনেক জায়গা বেদখলে যাচ্ছে। টাইলস খুলে গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, লালন শাহ মুক্ত মঞ্চের একটু অদূরেই তৈরি করা হয়েছে গরুর খামার। বড়কুঠির পদ্মা গার্ডেনে জমি দখলে নিয়ে দোকানঘর ও টিনসেইডের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই টিনসেড ঘরের কারণে একদিকে পদ্মা গার্ডেনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে এবং অন্যদিকে দর্শনার্থীদের বিশ্রামের স্থানগুলো থাকছে নোংরা আবর্জনায় ভরা। শুধু নগরবাসীই নয়, রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা লোকজনকেও টানে পদ্মার সৌন্দর্য। সবাই মনকে একটু প্রফুল্ল রাখতে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবীসহ ছুটে যান বড়কুঠি সংলগ্ন পদ্মা পাড়ে। সেই পদ্মা পাড় সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থী ও বিনোদন প্রেমী মানুষের ব্যাপক ভিড় থাকে। কিন্তু এমন সৌন্দর্য স্থানে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে টিনসেড ঘর। সেই টিনসেড ঘরের কারণে পদ্মা গার্ডেনের সৌন্দর্যটাই এখন ম্লান। এখনও পদ্মা গার্ডেনে সবকিছু সাজানো-গোছালো থাকলেও গরুর খামার ও গুটিকয়েক টিনসেড ঘরের কারনে সৌন্দর্য পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বড়কুঠি সংলগ্ন পদ্মা পাড়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে কয়েকটি টিনসেড ঘর। সেই টিনসেড ঘরে বসে বখাটেদের আড্ডা। আর রাত হলেই সেখানে বসে জুয়া খেলা। স্থানীয়রা দাবি করছেন, রাত ৮টার পরে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। থাকে ছিনতাইকারীদের আনাগোনা এসব ঘর থেকেই। এসব কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় ও পদ্মা গার্ডেনে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের দাবি, পদ্মাপাড়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দ্রুত সংস্কার করে আগের মতো করা প্রয়োজন। পদ্মাপাড় রাজশাহীর মানুষের বিনোদনের অন্যতম একটি প্রধান কেন্দ্র হলেও সেখানে কোন গণশৌচাগার নেই। সে কারণে দর্শনার্থীদের পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। পদ্মা পাড়ে ঘুরতে আসা নগরীর মালদাহ কলোনি এলাকার আশরাফুল বলেন, আমরা পরিবারসহ মাঝেমধ্যেই এখানে ঘুরতে আসি। বর্তমানে এ নদীর তীরে এসেই পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়। নওহাটা মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, শুধু পদ্মার পাড় নয়, রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো অযতেœ ফ্যাকাসে হয়ে পড়েছে। মানুষ আর এখানে এসে বিনোদন পায় না। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, যখন থেকে পদ্মা পাড়কে মানুষের বিনোদনের উপযোগী করে তোলা হয়েছে তখন থেকেই স্থানীয় এক প্রভাবশালী মহল জায়গাটি দখল করে টিনসেডের ঘর তুলে আড্ডাবাজির স্থান করে নিয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় দর্শনার্থীদেরও মাঝে মধ্যে বেকায়দায় পড়তে হয়। এ জন্য সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। রাসিকের সংশ্লিষ্ট ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন দিলদার বলেন, যখন পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্যের কাজ করা হয়েছিল। সেই সময় লেবারদের থাকা ও অন্যান্য কাজের জন্য টিনসেড ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপর থেকেই আর ঘরটি সরানো হয়নি। সেটি দখল করে রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণের জন্য মেয়রের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
×