ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাটারায় ব্যবসায়ীকে জবাই

তুরাগে তিন শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১০ জুন ২০১৭

তুরাগে তিন শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর তুরাগে তিন শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতরা হলোÑ রেহেনা পারভীন (৩৪), তার ছোট ছেলে ১১ মাসের মুসা বিন সাদ, বড় মেয়ে এনএম আঁখি শান্তা (১৩), মেজ মেয়ে আরএম আরিফা (৭)। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার উজারামপুর গ্রামে। এদিকে ভাটারায় এক ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে খবর পেয়ে পুলিশ তুরাগের এজতেমা মাঠের কাছে কামারপাড়ার কালিয়ারটেক এলাকার টিনশেড একটি বাসা থেকে ওই নারী ও তিন শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, রেহেনা পারভীন নামে ওই নারী তার তিন সন্তানকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহত রেহেনার পরিবারের সন্দেহ, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদা জনকণ্ঠকে জানান, চারটি লাশই ঘরের মেঝেতে পেয়েছেন তারা। তবে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়, রেহেনা নামে ওই নারীর লাশটি ঘরে সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল আর মেঝেতে পড়েছিল তার তিন শিশুসন্তান। ওসি জানান, ওই শিশুদের বাবা মোস্তফা কামাল বাসার কাছেই একটি সমিতির অফিসে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে দেখেন তার তিন সন্তান গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় বিছানার ওপর পড়ে আছে। তাদের মা রেহেনা পারভীন পাশের রুমে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এটি দেখে মোস্তফার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। পরে পুলিশকে খবর দেয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ চারজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তারা আগেই মারা গেছে। শুক্রবার দুপুরে ঢামেক মর্গে চারজনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওসি জানান, কামারপাড়া কালিয়ারটেকের টিনশেড যে বাড়ি থেকে চারটি লাশ উদ্ধার হয়েছিল সেটি নিহত রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামালের পৈত্রিক বাড়ি। পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবে খোদা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিন সন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া অন্য কোন কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মর্গে নিহত রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একসঙ্গে তিন সন্তান ও স্ত্রী রেহেনাকে নিয়ে ইফতার করেন। তারপর বাড়ির পাশে ‘যুব কল্যাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কো-অপারেটিভ লিমিটেড’-এর অফিসে যান। রাত দেড়টার দিকে বাসায় ফিরে দেখি সামনের ঘরে আলো। কেউ নোই মাঝের ঘরে বিছানায় তিন সন্তান। ভেতরের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে রেহেনা ঝুলছে। তা দেখে আমি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। রেহেনাকে নামিয়ে মুখে বাতাস দিয়ে অনেকবার চেষ্টা করেছি বাঁচাতে। কিন্তু পারিনি। দ্বিতীয় কক্ষে তিন সন্তানের মৃতদেহ। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিন শিশুসন্তান ও তাদের মায়ের মৃত্যু নিয়ে রহস্য নিহত রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল জানান, বড় মেয়ে শান্তা কামারপাড়ায় পরশমনি ল্যাবরেটরি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ত। মেজ মেয়ে শেফা প্রথম শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। তিনি জানান, কয়েক মাস ধরে তার সংসারে অর্থ সঙ্কট চলছিল। মেয়েদের স্কুলে বেতন দিতে পারছিলাম না। এ নিয়ে স্ত্রী রেহেনা হতাশাগ্রস্ত ছিল। এ কারণে স্ত্রী এ কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। কামাল আরও জানান, সংসারে আগে সচ্ছলতা ছিল। চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় বড় পদে অনেক বেতনে চাকরি করতাম। পরে ফ্ল্যাটের ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসায় লোকসান দিয়ে কযেক মাস ধরে অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছিল। সংসারের অভাব-অনটন ও সন্তানদের লেখাপড়ার খবর যোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। আর এসব নিয়ে রেহেনা দুর্ভাবনায় ছিল। তিনি জানান, এ কারণে হয়ত টেনশন থেকে রেহেনা এ কাজ করেছে। মর্গে তার পাশে বসা রেহেনার বোন রোজিনা সুলতান জানান, শাশুড়ি, ননদসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বড় বোন রেহেনা ও তার তিন সন্তানকে হত্যা করেছে। ১৭ বছর তাদের বিবাহিত জীবনে ওরা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) কোনদিন আমার বোনকে শান্তি দেয়নি। নিহত রেহেনার বোনঝি আসমা আক্তার জানান, কামারপাড়ার ওই বাসার জমিটি রেহেনার শ্বশুরের। ২০টি টিনশেড ঘর রয়েছে। তার ভাড়া তুলতেন রেহেনার শাশুড়ি মাফিয়া বেগম ও ননদ কোহিনুর। ভাড়া তোলা নিয়ে খালার (রেহেনা) সঙ্গে তারা (শাশুড়ি ও ননদ) অনেক ঝগড়া করত। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে খালাকে (রেহেনা) ওরা (শ্বশুড়বাড়ির লোকজন) নির্যাতন করত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলে আসমা বলেন, পাশের ঘরে ননদ ও শাশুড়ি থাকে। সেখানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা টের পায়নি। এটা কি কোনদিন হয়? এছাড়া চারজনের লাশ হাসপাতালে। অথচ শ্বশুড়বাড়ির লোকজন কেউ দেখতে আসেনি। রেহেনার ছোট বোন রোজিনা মিরপুর-১ নম্বর থাকেন। ঘটনার দিন রাতে রেহেনার মৃত্যুর খবর অন্য ভাড়াটিয়ারা তাদের দিয়েছেন বলে জানান রোজিনা। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির কেউ দেয়নি। এটা থেকে আপনারা (সাংবাদিক) বুঝে নিন। এত সুন্দর সন্তানদের কোন মা এভাবে হত্যা করতে পারে না বলে জানান রোজিনা। রোজিনা জানান, তারা ৬ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্যে রেহেনা ছিলেন পঞ্চম। ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেছিল সে। পরে সমাজকল্যাণে এমএ ডিগ্রী নেন। শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য অনেক চাকরি খুঁজেছে। কিন্তু ভাল কোন চাকরি পায়নি। পেলে শ্বশুড়-শাশুড়ির অত্যাচার থেকে বাঁচত রেহেনা। শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিতে হলো। হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল জানান, আমার তিন সন্তান মরেছে। কষ্ট তো আমারই বেশি হচ্ছে। তাই না? তার দাবি, তার মা (রেহেনার শাশুড়ি) তিন মাস ধরে তাদের বাসায়ই আসেন না। নিহত রেহেনার স্বামী কামাল জানান, ২০টি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘরে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তার বোন কোহিনুর তিনটি ঘর নিয়ে থাকেন। বাকি ১৪টি ঘর ভাড়া দেয়া, যার টাকা তার মা নেন। এ হত্যার ব্যাপারে আর কারও হাত আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল জানান, স্থানীয় দুই প্রভাবশালীকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম ডেসটিনির ব্যবসার জন্য। ওই টাকা তো আর পাইনি। তাদেরও হাত থাকতে পারে। তবে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বলেননি তিনি। তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান, পুলিশ সবকিছু নিয়েই তদন্ত করছে। এর পেছনে কী রয়েছে, তা বের করা হবে। ভাটারায় ব্যবসায়ীকে জবাই রাজধানীর ভাটারায় শাহীন আলম (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার সেহরির সময় তার বড় ভাই ডাকতে গিয়ে দেখেন ভাটারার নয়ানগর এলাকার একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় ভাড়া বাসার বেডরুমে ছোট ভাই শাহীন আলমের লাশ পড়ে আছে। পরে প্রতিবেশীরা এসে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল ছয়টার দিকে শাহীনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের বড় ভাই রবিউল আলম জানান, শাহীন আলম বাড্ডার নতুন বাজারে ফুটপাথে কসমেটিকসের ব্যবসা করত। এছাড়া সুদে টাকা খাটাত সে। সুদের ব্যবসার কারণে শাহীনকে খুন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শাহীনের স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামে থাকেন। ঢাকার ভাটারার নয়ানগরের মিষ্টির গলিতে সুমনের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন শাহীন। একই বাড়ির পাশের কক্ষে থাকতেন তাদের আরেক ভাই তিতুমীর কলেজের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্জাক বাসায় ছিলেন না। তবে সেহরির সময় ফিরে এসে তিনি শাহীনকে ডাক দিতে গিয়ে বিছানার ওপর গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপরই রাজ্জাক আশপাশের লোকজন ও পুলিশকে খবর দেন। ভাটারা থানার ওসি নুরুল মুত্তাকিন জানান, সুদের ব্যবসায় শাহীনের প্রায় সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করা ছিল। বিভিন্ন ব্যক্তিকে ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন শাহীন। এ ব্যবসার কারণে শাহীনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×