ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১০ জুন ২০১৭

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের ১৪তম দিবস। আজ আমরা এখানে মুসলিম জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাহলো গোসল। গোসলের আভিধানিক অর্থ ধৌত করা। ফিকাহের পরিভাষায় গোসলের অর্থ হলো, শরীয়তের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী পবিত্রতা হাসিলের উদ্দেশ্যে পাক পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ধোয়া-(আল ফিকহুল ইসলাম, ১ম খ-)। শরীয়াতের দৃষ্টিতে দেহের যেসব স্থানে পানি পৌঁছানো আবশ্যক তার সব জায়গায় উত্তমরূপে পানি পৌঁছানো। এর চুল পরিমাণ স্থান শুকনো থাকলে গোসল সহীহ হবে না। এটাই গোসলের রুকন (বাহরুর রায়েক-১ম খ-)। ইলমে ফিকহের পরিভাষায় সমস্ত শরীর ধোয়ার নাম গোসল। শরীর হলো মানুষের দৃশ্য ও অদৃশ্য অঙ্গসমূহ নিয়ে। সুতরাং কুলি করা, নাকে পানি পৌঁছানো গোসলের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তবে যেসব স্থানে পানি পৌঁছানো যায় না বা পানি পৌঁছলে ক্ষতি হয় সেসব স্থান ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে গোসল আদায় হয় না। তবে এ কথা জেনে রাখা দরকার সুন্নাত গোসল সহীহ হওয়ার জন্য কুলি করা ও নাকে পানি পৌঁছানো শর্ত নয়। (শামী, ১ম খ-)। ফরজ গোসল সম্বন্ধে আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা জুনুবী বা অপবিত্র হও তবে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে (৫:৬)। এ আয়াতের নির্দেশনার আলোকে ফকীহগণ বলেছেন যে, পূর্ণ শরীর ধৌত করা ফরজ। দেহের চুল পরিমাণ জায়গায়ও শুকনো থাকলে ফরজ গোসল আদায় হবে না। গোসলের ফরজ তিনটিÑ কুলি করা, নাকে পানি দেয়া ও সমস্ত শরীর ধৌত করা-(আলমগীরী)। গোসলের সুন্নাতসমূহ : নিয়াত করা। বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ করা। দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। যদি শরীরে কোন নাজাসাত লেগে থাকে তবে তা প্রথমেই ধুয়ে নেয়। এমনভাবে অজু করা যেভাবে নামাজের জন্য অজু করা হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া ও মাথা মাসেহ করা। তবে গোসলকারী যদি কাঠ অথবা পাথর বা এরকম কোন উঁচুস্থানে দাঁড়ায় যাতে গোসলের পানি জমে না থাকে, তবে অজুর সঙ্গে সঙ্গে পা ধোয়া আর যদি পায়ের নিচে পানি জমা থাকে তবে গোসলের পর পা ধোয়া। সমস্ত শরীরে তিনবার পানি পৌঁছানো সুন্নাত। যদি কেউ প্রবাহিত নদী বা পুকুরে ডুব দেয় অথবা বৃষ্টিতে এমনভাবে ভিজে যায় যে, সমস্ত শরীর থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে গোসল শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং তিনবার ধোয়ার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আর যাদ পানি ঢেলে গোসল করে তবে প্রথমে ডান কাঁধ তারপর বাম কাঁধ এবং তারপর মাথায় পানি ঢালবে। এরপর সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছাবেÑ(ফাতওয়া ও মাসায়িল)। এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়াও সুন্নাত। নির্জন স্থানে বা লোকালয় হতে দূরে গোসল করাও সুন্নাত। যদি খালি গায়ে গোসল করে তবে কিবলার দিকে মুখ না করা উচিত। পানি ব্যবহারে কৃপণতা বা অপচয় না করা। সমস্ত শরীর ভাল করে ঘষে মেজে ধোয়া। তারতীবের সঙ্গে বা নিয়মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গোসল করা সুন্নাত-(আলমগীরী ও শামী)। গোসলে কতিপয় মুস্তাহাব : উঁচুস্থানে দাঁড়িয়ে গোসল করা। অন্য লোক হতে সাহায্য গ্রহণ না করা। (মারাকিল ফালাহ)। গোসলের সময় কথাবার্তা না বলা। গোসলের সময় মনে মনে নিয়াত করার সঙ্গে সঙ্গে মুখেও তা উচ্চারণ করা। (আলমগীরী)। অজুর সময় দুই আয়ে মাসুরা পড়া। প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় বিসমিল্লাহ পড়া। কনিষ্ঠাঙ্গুল কানের ভেতর প্রবেশ করিয়ে পানি পৌঁছানো। ডান হাত দিয়ে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া এবং বাম হাত দ্বারা নাক পরিষ্কার করা। গোসলের পর রুমাল বা যে কোন কাপড় দ্বারা শরীর মুছে ফেলা মুস্তাহাবÑ(মারাকিল ফালাহ)। এক কথায় গোসলের সুন্নাত তরীকা হলো : প্রথমে মনে মনে নিয়াত করবে যে, আমি পবিত্র হওয়ার উদ্দেশ্যে গোসল করছি, বিসমিল্লাহ পড়ে উভয় হাত ধুবে ও আঙ্গুলসহ খিলাল করবে। এরপর পুনরায় হাত ভাল করে পরিষ্কার করবে। মিসওয়াক করবে। নামাজের জন্য যেভাবে অজু করে সেভাবে অজু করবে। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধুয়ে নেবে। মাথা মাসেহ করবে। যদি উঁচুস্থানে অথবা পায়ের নিচে পানি জমে না থাকে তবে অজুর সঙ্গে সঙ্গে পা ধুয়ে নেবে। আর যদি পায়ের নিচে পানি জমা থাকে কিংবা অপবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে তবে গোসলের পর পা ধুয়ে ফেলবে। অজুর সঙ্গে দাড়ি খিলাল করবে। তিনবার সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। শরীর ভাল করে ও এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধুয়ে নেবে। তারতীবের সঙ্গে গোসল করবে। বলাবাহুল্য, গোসল ও অজু সম্পূর্ণ ইসলামী পরিভাষা। সুতরাং তা ইসলামী ঐতিহ্য ও দর্শনমতো সম্পন্ন করতে হবে। নচেৎ এসবে স্থায়ী ত্রুটি থাকার কারণে আমাদের পবিত্রতা হাসিল ও ইবাদাত-বন্দেগীতেও ত্রুটি থেকে যাবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এসব বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে।
×