ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান

মীরসরাইতে ‘সোলার পাওয়ার হাব’ নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১০ জুন ২০১৭

মীরসরাইতে ‘সোলার পাওয়ার হাব’ নির্মাণের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ ব্যর্থতার মধ্যেই চট্টগ্রামের মীরসরাইতে সব থেকে বড় ‘সোলার পাওয়ার হাব’ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পড়ে থাকা ২ হাজার একর জমিতে এই সোলার পার্কটি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সোলার পার্ক নির্মাণে শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করা হবে। সোলার বিদ্যুতের হাবটি হবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার। যদিও দেশে এখনও পর্যন্ত কোন গ্রীড সংযুক্ত সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি বিদ্যুত বিভাগ। সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রধান অন্তরায় জমি প্রাপ্তি। জমি পাওয়া গেলেও স্থানীয় প্রশাসন কোন ধরনের সহায়তা না করায় এসব জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। দেশের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ৫০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্থানীয় জেলা প্রশাসক এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ধাপ পেরতে নাজেহাল হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এতে করে দেশের উদ্যোক্তারা সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। উদ্যোক্তারা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসলে সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে তাদের মনে হয়েছে বাংলাদেশ এখনও এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। সরাসরি সরকারের নির্দেশনা না থাকায় জেলা প্রশাসন সৌরবিদ্যুতের জমি অধিগ্রহণে নিজেদের ইচ্ছামতোই কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত বড় কোন সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জমিই যোগাড় করতে পারেনি কোন কোম্পানি। পিডিবি সূত্র বলছে, সেই বিচারে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি এগিয়ে রয়েছে। কারণ আগে থেকেই মীরসরাইতে জমি অধিগ্রহণ করে রেখেছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, খুব শীঘ্রই মীরসরাইতে সোলার হাব নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এজন্য বিদ্যুত বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। দরপত্রের মাধ্যমে সোলার হাব নির্মাণ করা হলে ইউনিট প্রতি দরও অনেক কমে আসবে। সরকার সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাজ দিলেও তারা কেউই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজই শুরু করতে পারেনি। এক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কথা বলছে সব উদ্যোক্তারা। ফলে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের স্বপ্ন অনেকটা হোঁচট খেয়েছে। বিদ্যুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটিই হবে দেশের কোন রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় নির্মাণ করা সোলার হাব। সরকার ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য দেশে ১০০ ইপিজেড নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারীখাতও ইপিজেড নির্মাণে এগিয়ে এসেছে। এতে মোট ৭৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সূত্র জানায়, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ বিদ্যুত বিভাগে একটি বৈঠকে জানায় মীরসরাইতে অন্তত এক হাজার একর জমি পড়ে রয়েছে। এখানে চাইলে বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করতে পারে বিদ্যুত বিভাগ। এরপরই পিডিবি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। দেশে এখন সোলার হোম সিস্টেম এবং মিনি গ্রিড মিলিয়ে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অন্তত ১০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এক্ষেত্রে এখন দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াটের হিসেবেই ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন। সরকারের পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। সেই হিসেবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের হার হওয়ার কথা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। যদিও এখনও কোন বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজই শুরু করতে পরেনি কেউ। বিদ্যুত বিভাগ চাইলেও অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর অনাগ্রহে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প এগোচ্ছে না। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসন আর ভূমি মন্ত্রণালয় সহায়তা না করলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ না করা হলে বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
×