ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ছোট দলের সমর্থনে সরকার গঠনের ঘোষণা

আগাম নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি ॥ ব্রিটেনে এবার কোয়ালিশন

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১০ জুন ২০১৭

আগাম নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি ॥ ব্রিটেনে এবার কোয়ালিশন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ব্রিটেনের আগাম নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টি এগিয়ে রয়েছে। দলটি সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি)কে সঙ্গে নিয়ে একটি নয়া সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন টেরেসা মে। ফলে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেতে যাচ্ছে ব্রিটিশরা। ওদিকে নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভাল ফল করেছে জেরেমি করবিনের লেবার পার্টি। ফল প্রকাশের পরই লেবার নেতা করবিন টেরেসা মেকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। তারপরও শক্ত মনোবল নিয়ে শুক্রবার ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের অনুমতি চান ৬০ বছর বয়সী টেরেসা মে। রানীর সঙ্গে দেখা করার পর মে বলেন, বেশির ভাগ আসন এবং ভোটে জয়ী হওয়ার পর এখন কেবলমাত্র তার টোরি পার্টিই ‘বৈধ’ সরকার গঠন করতে পারে। এরপর বহুল আলোচিত ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে মে বলেন, তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ডিইউপিতে ‘বন্ধু ও মিত্রদের’ সঙ্গে কাজ করবেন। তবে ডিইউপি’র সঙ্গে টেরেসা মে ঠিক কিভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে কোন ইঙ্গিত দেননি। তবে ডিইউপির সঙ্গে তার দলের ভাল সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মে। আর আগামী ১০ দিন সময়ের মধ্যে তার সরকার ব্রেক্সিট বিষয়ে জোরালো আলোচনা শুরু করতে পারবে বলে জানান মে। তিনি বলেন, আমাদের এই দুই দলের মধ্যে সুম্পর্ক দীর্ঘ দিন বজায় থাকবে। আর আমরা উভয় দল মিলে যুক্তরাজ্যের জন্য কাজ করতে পারব। খবর বিবিসি, এএফপি, দ্যা গার্ডিয়ান অনলাইনের। নির্বাচনে ফল দেখে লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা টিম ফ্যারন বলেছেন, মের লজ্জা পাওয়া উচিত। তিনি বলেন, আত্মমর্যাদা নিয়ে মের এখন উচিত হবে সরে দাঁড়ানো। নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, টেরেসা মের নেতৃত্বাধীন টোরি (কনজারভেটিভ) দল মোট ৩১৮ আসনে জয় পেয়েছে। অর্থাৎ এককভাবে হাউস অব কমন্সে যাওয়ার ম্যাজিক সংখ্যা থেকে দলটি ৮ আসন থেকে দূরে রয়েছে। অপরদিকে করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি পেয়েছে ২৬১ আসন। ওদিকে টেরেসা মে সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়ার পরপরই তার মন্ত্রিসভায় কারা কারা ঠাঁই পাচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে অন্তত পাঁচজন মন্ত্রী টেরেসা মের পরবর্তী সরকারেও থাকছেন। এরা হলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মিশেল ফ্যালোন, ব্রেক্সিট বিষয়কমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যামবার রাড, চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন। টেরেসা মে হঠাৎ করে সাধারণ নির্বাচন ডাকার আগে সংসদে দলের যত আসন ছিল এই নির্বাচনে আসন সংখ্যা তার চেয়েও কমেছে এবং টেরেসা মেকে তার সিদ্ধান্তের জন্য লজ্জায় পড়তে হয়েছে। নির্বাচনে লেবারের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ২৯ নতুন আসন এবং কনজারভেটিভ পার্টি ১৩ আসন হারিয়েছে। নিকোলা স্টারজেনর স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি), খুবই খারাপ ফল করেছে। তারা ২২ আসন হারিয়েছে। তাদের আসনগুলো গেছে টোরি, লেবার এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের ঝুলিতে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভোটের ৪২ শতাংশ পেয়েছে কনজারভেটিভরা, লেবার ৪০ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ৭ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টি পেয়েছে ২ শতাংশ ভোট। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ভোট দিয়েছে ৬৮.৭ শতাংশ ভোটারÑ ২০১৫ সালের তুলনায় এই হার শতকরা ২ ভাগ বেশি। তবে দেশের অনেক জায়গায় দেখা গেছে, রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে শুধু বড় দুটি দলকে কেন্দ্র করে। কনজারভেটিভ আর লেবার যত ভোট পেয়েছে, ১৯৯০ সালের পর শুধু দুটি দলের এত ভোট পাওয়ার এটা রেকর্ড। ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি (ইউকিপ) পার্টি হারিয়েছে প্রচুর আসন, তবে যেমনটা মনে করা হচ্ছিল তাদের ভোটগুলো পাবে শুধু টোরিরা, তা হয়নি। টোরিদের পাশাপাশি তাদের ভোট পেয়েছে লেবারও। ইউকের সাবেক একজন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা লর্ড ওডনেল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে ‘আপাতত’ তার পদে থাকতে হবেÑ সেটা তার দায়িত্ব। তিনি তাকে পরামর্শ দেবেন শুক্রবার যেন তিনি রানীর সঙ্গে দেখা করে তিনি কী করতে চান তা ব্যাখ্যা করেন। তবে ব্রিটেনের ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট এ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে এই গ্রীষ্মের শেষদিকে আরেকটা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে যে আলোচনা হতে যাচ্ছে এই ফলাফল তার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। ব্রেক্সিটবিরোধী কনজারভেটিভ এমপি এ্যানা সোব্রি বলেছেন ‘খুবই খারাপ নির্বাচন’ হয়েছে এবং মের উচিত এখন তিনি কী করবেন তা ভাবা। তবে ব্রেক্সিটপন্থী এমপি স্টিভ বেকার বলেছেন, দলের উচিত টেরেসা মেকে সমর্থন করা যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ‘বেসরকারী এক টিভি চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন বলেন, মে সম্ভবত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।’ অসবর্নকে টেরেসা মে গত বছর বরখাস্ত করেন। ডিইউপির এমপি সাইমন হ্যামিল্টন বলেছেন, তার দলের ভোট টোরিদের সরকার গঠনের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘ইইউ ছাড়ার সময় উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য ভাল সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার ব্যাপারে তারা দরকষাকষি করবেন।’ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি তাদের আসন হারিয়েছেন। যেমন এসএনপির এ্যালেক্স স্যামন্ড হেরে গেছেন এক টোরি প্রার্থীর কাছে এবং লিবডেম নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ পরাজিত হয়েছেন একজন লেবার প্রার্থীর কাছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা বলে দিয়েছে কনজারভেটিভ বা লেবার কারও সঙ্গেই তারা কোয়ালিশনে যাবে না।
×