ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে ঈদ বাজার ॥ জিন্স প্যান্ট তৈরির ধুম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১০ জুন ২০১৭

কেরানীগঞ্জে ঈদ বাজার ॥ জিন্স প্যান্ট তৈরির ধুম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৯ জুন ॥ ঈদ বাজারকে সামনে রেখে জিন্স প্যান্ট তৈরির ধুম পড়েছে কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোতে। প্রায় সাত হাজার কারখানায় তৈরি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট। কাজের চাপের দরুন শ্রমিকরা ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও গোসলের সময় পর্যন্ত পাচ্ছে না। শুভাঢ্যা, আগানগর ও জিনজিরা ইউনিয়নে জিন্স প্যান্ট তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শোভা পাচ্ছে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় করছে সারা দেশের তৈরি পোশাক পাইকাররা। মেশিনের শব্দে আর ক্রেতা-বিক্রেতার মিলন মেলায় মুখরিত হয়ে উঠেছে জিন্সপট্টি। এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, দুই মাস আগ থেকে জিন্সের মার্কেট চাঙ্গা হয়েছে। শব-ই-বরাতের পর থেকে মফস্বলের পাইকাররা কেনাকাটা শুরু করেছে। এ বেচা-বিক্রি ২৫ রোজা পর্যন্ত চলবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসা ভাল। তাছাড়া আইনশৃঙ্ঘলা রক্ষার্থে যথেষ্ট পরিমাণ লোক নিয়োজিত রয়েছে। চাঁদাবাজি বা কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এখানে ঘটেনি। কেরানীগঞ্জের বিশাল এই মার্কেটের সাত হাজারেরও বেশি জিন্স প্যান্টের কারখানা ছাড়াও ৩টি ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে তিন হাজার কারখানা। ওই সব কারখানায় জিন্স প্যান্ট ছাড়াও তৈরি হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি, স্যালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া, বোরখা ও শীতবস্ত্র। প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক কাজ করে ওই কারখানাগুলোতে। তারমধ্যে শুধু জিন্সের কারখানাগুলোতেই প্রায় ৬ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। দিন দিন এখানকার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে এই মার্কেটগুলোতে ব্যবসায়ীদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে শুভাঢ্যা, আগানগর ও জিনজিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নতুন শো রুম ও কারখানা প্রতিষ্ঠা করছে। বিশেষ করে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের হাসনাবাদ, মিরেরবাগ, চর মিরেরবাগ, খেজুরবাগ, চর খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ,চর কালিগঞ্জ, কৈবর্তপাড়া, চরকুতুব, চুনকুটিয়া, শুভাঢ্যা, হুক্কপট্টি, মালোপাড়া, নজরগঞ্জ, ডাকপাড়া, বন্দ ডাকপাড়া এলাকায় কারখানা ছড়িয়ে পড়েছে। আর আগানগর ইউনিয়নের পূূর্ব আগানগর, আগানগর, বাঘাবাড়ি, ইস্পাহানি, নতুন শুভাঢ্যা, আমবাগিচা, ইমামবাড়ি, কদমতলী গোলচত্বর এলাকা পর্যন্ত। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ তৈরি পোশাক মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন শেখ বলেন (স্বাধীন গার্ডেন সিটি) এ বছর আগের বছরের চেয়ে ব্যবসা ভাল। সরকার যদি আমাদের ভাল সুযোগ-সুবিধা দিত, তাহলে আমরা প্যান্টের জগতে উৎপাদনে বিশ্বের ৩য় স্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারতাম। তৈরি পোশাক প্রস্তুতে আমরা উন্নত বিশ্বের চেয়ে কোন অংশে কম নই। আশা করি, আমরা আগামীতে আরও উন্নতমানের পোশাক তৈরি করতে পারব। হাজী আব্দুল করিম মার্কেটের বিসমিল্লাহ গার্মেন্টেসের স্বত্বাধিকারী স্বপন মৃধা বলেন, বিশ্বের নামী-দামী সকল কোম্পানির প্যান্ট এখানে প্রস্তুত হয়। মানে ও গুণে সবই উন্নত বিশ্বের মতো। কিন্তু দাম অনেক কম, তিনি আরও বলেন এখানে তৈরি হচ্ছে আমেরিকান লি লেভিজ, ডিজেল ও ব্লু কালেকশন, ইতালির তৈরি হচ্ছে ভার্সাস ও আরমানি। আর চীন দেশের তৈরি হচ্ছে কসমো, টিভি লেভেল, পিয়ারিম্যান ও লুসিলং। এ ব্যাপারে ইউরো প্যান্ট পয়েন্টের মালিক হাদী আবুল কাশেম রুশিদ বলেন, এ বছর আমাদের দেশে চার দেশের জিন্স প্যান্টের কাপড়ের প্রতিযোগিতা চলছে বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশী কাপড়। এর পরে আছে চীন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশে বিদ্যুত ঘাটতি ছিল। ওই সুযোগে চীন নিজেদের টেক্সটাইল মিলগুলোতে প্রচুর জিন্সের কাপড় রফতানির জন্য উৎপাদন করছে। তাছাড়া আমাদের দেশের যুবক-যুবতীরা চীন দেশের জিন্স প্যান্ট পছন্দ করে বেশি। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুত অবস্থা ভাল হওয়ায় জিন্ট প্যান্টের জগতে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। আমাদের দেশের কাপড় বিভিন্ন আকর্ষণীয় রঙের ও দেখতে খুব সুন্দর। লাকি ফ্যাশনের মালিক মিজানুর রহমান খান বলেন, উন্নতমানের জিন্সের তৈরি প্যান্টের মূল্য সাড়ে ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা, ছোট সাইজের ৪শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা। তিনি আরও বলেন, বিদেশী চায়না থেকে আমদানি করা তৈরি প্যান্টের মূল্য বড় সাইজের ১হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। মাঝারি ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। ছোট ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত। শহিদুর আলম সুপার মার্কেটের ডায়মন্ড টাচের মালিক আকতার হোসেন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরি ও ম্যাটেরিয়ালের মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। ভাল কর্মচারীর বেতন মাসে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর হেলপার ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, মাসিক বেতন ছাড়াও শ্রমিকরা প্যান্ট প্রতি মজুরিতে কাজ করে। সেভাবে একটি প্যান্টের মজুরি প্রকারভেদে ৪৫ টাকা। দিনে ১০টি প্যান্ট তৈরি করতে পারে। এ ব্যাপারে কিউট ফ্যাশনের মালিক মিলন খান বলেন, যদি গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যেত তাহলে বিদেশী কাপড়ের কোন চাহিদা আমাদের দেশে থাকত না। বাংলাদেশী তৈরি জিন্স প্যান্ট দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিশ্বের অন্যান দেশে রফতানি করতে পারতাম।
×