ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বামপন্থী রাজনীতির পুনঃজাগরণের প্রতীক জেরেমি করবিন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১০ জুন ২০১৭

বামপন্থী রাজনীতির পুনঃজাগরণের প্রতীক জেরেমি করবিন

ব্রিটেনের লেবার পার্টির বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিন তার দীর্ঘ ও উজ্জ্বল রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক প্রতিকূল অবস্থা জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির আগাম জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করে ফের তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন। চৌষট্টি বছর বয়সী এই সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এখনও কোন বড় পদে আসীন হননি। তবে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে দেশটির তরুণ প্রজন্মের প্রিয়ভাজনে পরিণত হয়েছেন। যখন তিনি নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেন, তখন তার কাছ থেকে কোন ভাল ফল প্রত্যাশা করা হয়নি। নিজ দলের ভেতর থেকেও তাকে ব্যাপক বিরোধিতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সবকিছু তিনি নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে দলের ভেতরে তার নেতৃত্ব নিয়ে যে মতানৈক্য ও প্রশ্ন রয়েছে, তা কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট দলের বামপন্থী প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে তুলনা করলে করবিন রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে এগিয়ে থাকবেন। স্যান্ডার্স যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, করবিন সেটাই সফলভাবে করে দেখিয়েছেন। বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন দলের নানা অন্যায্য কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে তিনি ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বর্তমান উত্তাল সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে তিনি নিজের পক্ষে ভালভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এতে কনজারভেটিভ পার্টি প্রত্যাশিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পার্লামেন্টে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারিয়েছে। বিপরীতে লেবার পার্টি আরও শক্তিশালী হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। করবিন বলেন, ভোটাররা কৃচ্ছ্রতার রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন, আমাদের ইতিবাচক প্রচারে রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। তাতে আমরা ভাল ফলই পেয়েছি। ব্রেক্সিট ও সন্ত্রাসবাদ মোকবেলায় জেরোমি করবিন প্রস্তুত নয় আখ্যা দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও ডানপন্থী ট্যাবলয়েডগুলো তার প্রচ- সমালোচনা করেছে। করবিনকে দেশের জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করেছে তারা। কিন্তু দুইপক্ষের তিক্ত রাজনৈতিক প্রচারাভিযান চলাকালে টেরেসা মের তুলনায় অপ্রত্যাশিত ও ভাল ফল অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে করবিন বলেন, ‘সামাজিক কল্যাণমূলক সংস্কারে টেরেসা মে ছিলেন নিরুত্তাপ ও উদ্বেগহীন। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি পুলিশের বরাদ্দ কমিয়েছিলেন। ফলে সন্ত্রাসীরা লাগামহীন হয়ে গেছে।’ খোশমেজাজি করবিন অত্যন্ত ধীর ও হালকা গতিতে মানুষের সমাগমে আসতেন, ব্রিটেনের রাজনীতিতে এতদিন যাকে বড় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী বলেও হিসেবে রাখা হয়নি। তিনি সমাজের গরিব মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর নীতি গ্রহণ করেন ও তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিষয়ক গবেষক মাইক ফিন বলেন, ‘করবিন রাজনীতির মাঠে নিজেকে প্রমাণ করতে এসেছেন। তিনি লেবার দলের হয়ে যে রাজনৈতিক মনোভাবের কথা বলছেন, তা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি যে ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছেন, তাও অনস্বীকার্য।’ ব্রিটেনের গত চার দশকের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, করবিন একটি নিখুঁত সমাজতন্ত্রী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেড়ে উঠেছেন। স্পেনিশ গৃহযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যে তার বাবা-মায়ের দেখা হয়েছিল। ফলে তিনি একটি নির্মল রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। কনজারভেটিভ ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের একটি গ্রামে তার শৈশব কাটে। পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন লন্ডনে বামপন্থীদের শক্তঘাঁটি ইসলিংটন থেকে। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কোন নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দেননি। সাধারণত মানবাধিকারপন্থী ও শান্তিবাদী হিসেবে তিনি পরিচিত। আর এভাবে তিনি নির্বাচনে জয় লাভ করে আসছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কয়েক দফা দলের ভেতরে তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন। ইরাক যুদ্ধের সময়ে দলের ভেতরে তখনকার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ ছিলেন করবিন। জীবনভর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কারণে তিনি তরুণ প্রজন্মে প্রিয়ভাজন। তার তৎপরতায় ব্রিটেনের তরুণরা রাজনীতির প্রধান স্রোতগুলোর মোহ থেকে মুক্ত হয়েছে। Ñএএফপি।
×