ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক ও দেশী তারুণ্য

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১০ জুন ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক ও দেশী তারুণ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ পেলেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও তার বাই-প্রোডাক্ট বখে যাওয়া তারুণ্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি তার মতো করে সাবধান করে দেন জাতিকে। এতে কি হয় জানি না তবে এটা বুঝি প্রশাসন নড়েচড়ে ওঠে। কারণ, সমাজ ও জাতিতে কেউ কাউকে মানে না। আজকাল যারা নেতা তাদের কথাও কেউ শোনে না। নেতৃত্ব এটা ভাল বুঝলেও ভান করে যে, জনতা তাদের নিয়ন্ত্রণে। সে জায়গায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই আশার বাতিঘর। বিগত কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যাতে স্বস্তি বা শান্তি নেই। লন্ডনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দেখছি একেবারে তরুণ এক ছেলে যে কিনা ইতালির নাগরিক সেই রেখেছিল মূল ভূমিকা। যারা মনে করেন এটা কেবল মুসলমানদের সমস্যা তারা আসলে বাইরের দেশগুলোর বাস্তবতা জানে না। প্রতিদিন ট্রেনে গাড়িতে অফিসে যাওয়ার সময় কত মানুষের সন্দেহের চাউনির শিকার হতে হয় আমাকে। কারণ, আমার দাড়ি। কিন্তু তারা এটা বোঝেই না আমার নিজের আছে ভয় আর নামের কারণে যে কোন সময় অপমান বা দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শ্বেতাঙ্গদের মনোভঙ্গি বা সাইজ করার নিয়ম আমাদের মতো না। তারা জানে তারা কি করে বা কিভাবে করতে হয়। মুশকিল হচ্ছে এখন এমন একটা আবহ তৈরি হয়ে গেছে কে যে নিরপরাধী আর কে আসলে সন্ত্রাসী কেউ জানে না। বিদেশে এতদিন সিকিউরিটি বা নিরাপত্তার নামে যে ভরসা ছিল সেটা আর আগের জায়গায় নেই। যারা সন্ত্রাসী, যারা অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত তারাও কৌশল বদলায়। লন্ডনে ছুরিকাহত করার অভিনব কায়দা আগে কখনও ভাবা যায়নি। অথচ সেটা এখন নিয়মিত হতে চলেছে। বাংলাদেশে আমাদের বড় দুর্ভাগ্য আমরা দায়-দায়িত্ব নিতে জানি না। নিতে চাইও না। আমি বড় বড় ডিগ্রীধারী বা লেখাপড়া জানা মানুষদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তারা একটা পর্যায়ের পর সবদোষ আমেরিকা ঘোষ বা অন্য কারও ওপর চাপিয়ে দিতে ভালবাসেন। যে কোন পরিচয়ের ওপর যখন ধর্ম জায়গা নেয় তখন তো এমন হবেই। সেটা কেবল সন্ত্রাস বা বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের বেলায় না, এরা সুযোগ পেলেই আমাদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেন। সিডনির বাংলাদেশীদের ভেতর এই প্রবণতা বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। কিন্তু আপনি কিছু বলতেও পারবেন না। যেখানে যাবেন শুনবেন দেশের যাবতীয় সমস্যার জন্য দায়ী সরকার আর বিদেশে করছে আমেরিকা। অবশ্য বাংলাদেশের বেলায় ভারতের নামও চলে আসবে। বলছিলাম এসব দেশে আক্রমণ হলেও তারা সামলাতে পারবে। প্রথমত তাদের কারিগরি জ্ঞান ও কৌশল, এরপর আছে সমাজে সভ্যতার আশীর্বাদ। যার একটিও আমাদের নেই। তারপরও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত যে ভূমিকা রেখেছে তাতে তাদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা দায়িত্ব পালন করেছে। আর দেশের সুশীল ও মিডিয়া কূটতর্কের দুয়ার খুলে দিয়ে বলেছে, এগুলো হয়ত সরকারের সৃষ্ট সমস্যা। জাতীয় ঐক্য বা সমঝোতা বিষয়টা আমাদের দেশে নাই বললেই চলে। একাত্তরে যেটুকু ছিল তারচেয়েও বেশি ছিল পাকিস্তানের নৃশংসতা আর তাদের বিদায় করার দুর্ভাবনা। বাস্তবে স্বাধীনতার পর পরই সেই ঐক্য কাগুজে কথায় পরিণত হয়েছিল। আজ সারা দুনিয়ায় আরেক দামামা। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতার পড়েছে বিপদের মুখে। আরব দেশগুলোর অনেকেই একযোগে তাদের দূতদের তুলে নিচ্ছে। কোন ঘটনা এত দ্রুত এত বেশি কড়া সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে পারে জানা ছিল না। গতকালও কাতার ছিল আড়ালে। আজ হঠাৎ করে তলোয়ার নিয়ে নৃত্যরত ট্রাম্পের সঙ্গে সঙ্গে কাতারের আকাশে নেমে এলো ভয়াবহ বিপদের মেঘ। জানি না এর জের বা পরিণামে কি হতে যাচ্ছে। তবে এটুকু বুঝি আবার ঝিমিয়ে উঠছে শান্তি ও সহাবস্থান। বিশ্বে উন্নত নামে পরিচিত দেশগুলোর মানুষ হয়ত আর একবার পড়বে নতুন কোন সন্ত্রাসের মুখে। শান্তি ও ভালবাসার দুনিয়া যেন কোথাও উধাও আজ। বর্ণে বর্ণে-ধর্মে ধর্মে জাতিতে জাতিতে এত বিদ্বেষ, এত হিংসা আগে দেখা যায়নি। যেসব তারুণ্য প্রাণ দিচ্ছে মানুষ মারছে তাদের মগজ এমনভাবে ধোলাই হয়েছে তাদের ভাল-মন্দের চিন্তার শক্তিও লোপ পেয়েছে। দিনরাত মোবাইল কম্পিউটার নিয়ে থাকা আমাদের যৌবনের দূতরা কি এগুলো দেখছে না? তাদের মনোজগতে এর প্রভাব পড়বেই। আছে নানা ধরনের উস্কানি। প্রধানমন্ত্রী একা বললে তো হবে না। পরিবারের দায় আছে। আছে সমাজের কর্তব্য। জানি সে সব ভেঙ্গে পড়েছে প্রায়। তারপরও মায়া-ভালবাসার বন্ধন আর উদারতাই পারে মুক্তি দিতে। কিন্তু সরকারী দল বা চেতনাবাহীরাও এখন আর আদর্শ বা উদারতার পথে কঠোর নন। তাই ভয়ে ভয়ে বলতে হয়, বদলে যাওয়া দেশ ও সমাজের সেøাগান দেয়া মুখোশধারীদের ঠেকাতে হলে সবাইকে সচেতন হতেই হবে। তারুণ্যকে আরও কয়েক বছর চোখে চোখে রাখার বিকল্প নেই। যতদিন না তারা ভাল-মন্দ নিজের জীবনের গুরুত্ব বুঝে সাবধান হতে পারছে। কিন্তু এত কাজ আসলে করবে কারা? সেই সব মানুষ কি সামনে আসবেন আদৌ?
×