ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তেহরানে সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১০ জুন ২০১৭

তেহরানে সন্ত্রাসী হামলা

ইরানের রাজধানী তেহরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই স্থাপনা দেশটির পার্লামেন্ট ও ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনির মাজারে বুধবার আলাদাভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায়িত্ব স্বীকার করা এ হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হয়েছে। শিয়া মুসলিম অধু্যুষিত ইরানে এটি আইএসের প্রথম হামলা। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে এটাই ইরানে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিবেশে থেকেও দেশটির জনগণ অনেক বেশি স্থিতিশীলতার সঙ্গে নিরাপত্তার মধ্যে দিন যাপন করে আসছিল। কিন্তু বুধবারের হামলা দেশবাসীর মনে গভীর অভিঘাত তৈরি করবে বলে ধারণা করা যায়। সন্ত্রাসে, বিশেষ করে আইএসকে মদদ দেয়ার অভিযোগে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার তিনদিনের মাথায় ইরানে আইএসের হামলা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে ইরান। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো উসকে দিতে এ বছরের শুরুতে আইএস অপপ্রচারে নেমেছিল। মার্চে প্রচারিত এক ভিডিওতে নিজেদের ‘আইএসের ইরানী যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দেয় একদল লোক। ফারসী ভাষার ওই প্রামাণ্যচিত্রে কথিত আইএস যোদ্ধারা ইরান সরকারের পাশাপাশি দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিল। খোমেনির মাজার শিয়া মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। রাজধানীর ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বেহেশত-ই-জারা গোরস্তানে খোমেনির এ সমাধিসৌধ। ইরানের মাশহাদ ও কোম নগরের পবিত্র মাজারের পর এখানেই বেশি অনুসারীর সমাগম হয়। সে কারণে মাজারটিতে শিয়াবিরোধী আইএসের হামলার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ইরানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, সেখানে নানাভাবে বিভিন্ন কালপর্বে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ধর্মীয় নেতা হিসেবে প্রয়াত ইমাম খোমেনি ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মিশেল দিয়ে নানা ফতোয়া জারি করতেন। সুশাসন ও সভ্যতার সঙ্গে যা ছিল সাংঘর্ষিক। স্যাটানিক ভার্সেস গ্রন্থের জন্য গ্রন্থকার রুশদীকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন তিনি। রুশদির মাথার দাম যুগে যুগে বর্ধিত হচ্ছে। কেউ যদি কোন লেখা বা কাজের দ্বারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তবে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের আইনেই বিদ্যমান রয়েছে। সেজন্য আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমাদের দেশে আমরা দেখেছি নাস্তিক আখ্যা দিয়ে লেখককে হত্যা করতে। এসব লেখক বা ব্লগার হত্যার বিচারও অবশ্য শুরু হয়েছে। ইসলাম কখনোই এ জাতীয় হত্যা বা হত্যার ফতোয়াকে সমর্থন করে না। ইরানের শিয়া নেতা ইমাম খোমেনির সমাধিতে আজ সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। কোথাও কোন ধরনের সন্ত্রাসী হামলা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। পৃথিবীতে এখন বড় খারাপ সময় এসেছে। কিছুদিন পরপরই কোন না কোন দেশে সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হচ্ছে। মনে রাখা চাই, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যে পর্যায়েই সন্ত্রাস পরিচালিত হোক না কেন তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। মানুষ জীবন পায় একবারের জন্যই। সেই জীবন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অকালে যাতে ঝরে না যায় বিশ্ববাসীর সেটাই প্রত্যাশা। সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু হিসেবেই শনাক্ত হয়। বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সব সময়েই সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। বিশ্বনেতাদের কর্তব্য হচ্ছে এই গ্রহ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য সম্মিলিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, সন্ত্রাস উস্কে দেয়া নয়।
×