ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাপছাড়া

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৯ জুন ২০১৭

খাপছাড়া

‘খাপছাড়া রবীন্দ্র প্রবন্ধ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ‘ গ্রন্থটি রচনা করেছেন আমিনুল ইসলা বেদু। অয়ন প্রকাশন বইটি বের করে। প্রচ্ছদ অঙ্গনে অচিনপাখি। রবীন্দ্রনাথের উপর মাত্র ১৩টি প্রবন্ধ সংযোজন করে বইটির পরিসর সাজানো হয়েছে প্রায় ৭০টি আলোচনা পর্বের সঙ্কলনে। বইটি উৎসর্গ করা হয় খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ প্রয়াত জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী থেকে শুরু করে আরও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবদুল মান্নান সৈয়দ ও জাকারিয়া শিরাজীর নাম এই উৎসর্গ পত্রে উল্লেখ করা হয়। বইটি শুরু করা হয় রবীন্দ্রনাথের ‘প্রশ্ন’ কবিতা দিয়ে। উপক্রমনিকায় লেখক মোহিতলাল মজুমদারের রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি কবিতা ও পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। প্রচুর প্রবন্ধের সমাহারে লিখিত বইটি লেখকের বিচিত্র অনুভূতি ও মননের এক সুসংবদ্ধ শৈল্পিক প্রয়াস। রবীন্দ্রনাথকে নির্ণয়িক করে বাংলা সাহিত্যের ক্রমবর্ধমান ধারা আলোকপাত করতে যেতে সঙ্গত কারণেই উনবিংশ শতাব্দীর নব জাগরণ, সমকালীণ সমাজ, বিদগ্ধ মহল, সময়ের বলিষ্ঠ অগ্রনায়করা লেখককে প্রাণিত করেছেন যার সমন্বিত সঙ্কল এইসব বিচিত্র প্রবন্ধ। গ্রন্থকারের ভাষায় কিছুটা খাপছাড়াও বটে। তারপরেও সুসংহত রচনাশৈলী, বাংলা সাহিত্যের গতিধারা আলোকপাতে গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় এবং পাঠককূলের কাছে বইটির আবদেন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয়। কলিদাসের মেঘদূত এবং শকুন্তলার সৌন্দর্য চেতনা প্রবন্ধটি কালিদাসের শৈল্পিক সুষমা এবং নান্দনিক দ্যোতনার এক গভীর আলোচনা যা লেখকের সমৃদ্ধি মননের এক অনন্য রচনা। এরপর রামমোহন থেকে শুরুক রে মাইকেল মধূসূদন দত্তের জ্ঞানোদীপ্ত আধুনিক চেতনার খনদ্ধ রূপ যা বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় সম্পদ। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় কবিতাটির কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের উপর ও লেখকের একটি সুচিন্তিত আলোচনা আছে যা পাঠককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের সৃষ্টিশীল মানুষকে পরিচয় করাবে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে লেখক পুরোপুরি নিমগ্ন থাকেন রবীন্দ্রসৃজন প্রতিভার। যেখানে রবীন্দ্রনাথের সমাজ চেতনা থেকে আরম্ভ করে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর প্রতি অপরিসীম মমতা, রবণ্দ্রি মানসে লালন শাহের প্রভাণ্ড গদ্য রচনায় কবির আধুনিক মনন সর্বোপরি তাঁর সৃজনশীল কর্মদ্যোতনা যেখানে গীতাঞ্চলীকে আপন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবার কথা বিশেষভাবে বিধৃত আছে। পর্যায়ক্রমে রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরিদের সাহিত্যেক আবেদন নিয়ে লেখকের নিবন্ধগুলো পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে সন্দেহ নেই। এদের মধ্যে শরৎচন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দ এবং সুধীন দত্তের নাম উল্লেখ্য। নিজে সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে লেখক গণমাধ্যমের এই গুরুত্বপূর্ণ পেশার উপর তার অভিব্যক্তি পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেছেন। মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমির প্রতি মমতা আর দায়বদ্ধতার কারণে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতাকে অন্তরের গভীর থেকে লাল করে এবং চর্চা এবং সুরক্ষার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সঙ্গত কারণেই এসে যায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রসঙ্গ। এই লড়াকু আর অকুতভয় বাঙালীর জীবনদর্শন আলোকপাত করে তাঁর নির্দেশিত আদর্শ আর মতে বাঙালীকৈ সামনে ্টিেগয়ে চলার পরামর্শ দেন। আবহমান বাংলার যোগ্য এবং উপযুক্ত শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বঙ্গবন্ধকে মূল্যায়ন করে তাঁকে নিয়ে কোন বিতর্কে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসে যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কথা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে লেখখ নিজেও বিভোর, প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের অহঙ্কারের মর্যাদায়ও ভূষিত করেন এই নিবিষ্ঠ বাঙালী লেখক। সবগুলো প্রচন্ধ নিয়ে আলোচনা করা স্বল্প সময়ে সম্ভব হয়নি। গুরুত্বপূর্র্ণ প্রবন্ধগুলোকেই বিবেচনায় এনে লেখকের বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হয়। তবে প্রতিটি প্রবন্ধ অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং জ্ঞানগর্ভ। উনবিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ অবধি খ্যাতিমান বিজ্ঞজনদের নিয়ে লেখকের যে শৈল্পিক তাড়না তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। পুরো বইটি পাঠক সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যাবে সেখান থেকেই পাঠক সময়ের নির্দিষ্ট বলয়ে আবদ্ধ সমকালের সমাজ চেতনা, সৃষ্টিশীলতা থেকে বিশিষ্টজনদের মহিমার সাথেও পরিচয় হবার সুবর্ণ সুযোগ পেতে পারে। সমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি পাঠক সমাজে আদৃত হবে এই্আশা করা যেতে পারে। বইটির বহুল প্রচার এবং সার্বিক সফলতা কামনা করছি।
×