ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উইমেন্স হলিডে মার্কেট এখনও জমে ওঠেনি

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৯ জুন ২০১৭

উইমেন্স হলিডে মার্কেট এখনও জমে ওঠেনি

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ‘উইমেন্স হলিডে মার্কেট’ নামে একটি নারীবান্ধব ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রা সম্পৃক্ত করেছেন। ডিএনসিসি ভবনের সামনের বৃহৎ এলাকাজুড়ে এই মার্কেটের উদ্বোধন করা হলেও বর্তমানে তা ভবনের মধ্যেই এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা শারমিন আখতারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় একটি টেবিল আর বৃহৎ ছাতাকে সম্বল করে তারা তাদের ব্যবসায়িক পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন। শুরু থেকে বলা হয়েছিল ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার এবং শনিবারে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই মার্কেট খোলা থাকবে। তবে বিশেষ বিবেচনায় ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নারী উদ্যোক্তারা তাদের হরেক রকমের দ্রব্য বিক্রি করার সুযোগ পাবেন, যা আজ অবধি শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেই শুক্রবার আর শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। রমজান মাসের রমরমা কেনাকাটার সুবর্ণ সময়ে ব্যবসায়িক সাফল্যের আশায় দিন গুনছেন এখানে সম্পৃক্ত নারীরা। কিন্তু কর্মদিবসগুলোতে যদি বেচা-বিক্রি করা না যায় তাহলে তারা আশানুরূপ সফলতা পাবেন না এই মার্কেট থেকে। কারণ সারা বছরের বাজার অর্থনীতির সিংহভাগই থাকে ঈদ উৎসবটি। এই উৎসবে মানুষ যা কেনাকাটা করেন বছরের পুরো সময়ে তার অর্ধেকও নয়। রমজান আসার আগে এই মার্কেটটির সূত্রপাত হওয়ার কারণে নারী ব্যবসায়ীরা আশান্বিত হয়েছিলেন যে তারা অন্তত ঈদের বাজারকে ধরতে পারবেন। যাই হোক ছুটির দিনগুলোতে নিজেদের পশরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা নারীরা। কিছু ক্রেতা সাধারণের সাক্ষাতও মেলে কিন্তু যেভাবে বাজার জমে ওঠার কথা সেভাবে এখনও হয়নি। পরবর্তীতে কি হবে তাও বলা যাচ্ছে না। স্নাতক ডিগ্রী নেয়া শারমিন আখতার অন্য কোন পেশার কথা না ভেবে ব্যবসার সঙ্গেই নিজেকে সম্পৃক্ত করেন মাত্র ৩ বছর আগে। ২০১৪ সালে নিজস্ব পুঁজি ৫ লাখ টাকার অর্থায়নে একটি কাপড়ের দোকান খুলে বসেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা-তদ্বির করে এখনও পর্যন্ত নিজেদের টাকায় ব্যবসার হাল ধরেছেন। বিবাহিত শারমিন প্রথম জীবনে গৃহিণী থাকলেও পরবর্তীতে নিজের কর্মক্ষমতা এবং প্রচেষ্টায় ব্যবসার মতো একটি লাভজনক ও একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সাহসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অদম্য মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমে হাজী সুপার মার্কেটে ‘লেডিস কর্নার নামে একটি দোকানের স্বত্বাধিকারীও হয়েছেন। পরবর্তীতে সুপার মার্কেটের মালিকদের দ্বন্দ্ব আর বিরোধের জেরে দোকান অনত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। ফলে সামরিকভাবে কিছু আর্থিক ক্ষতিরও মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তবুও তিনি হতাশ হননি কিংবা দমে থাকেননি। নতুন উদ্যোমে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে তার দোকানটিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে নিরন্তর কাজ করে যান। সুফলও পান তার আন্তরিক প্রচেষ্টা আর নিবেদিত শ্রমের। এরই মধ্যে সুযোগ এসে যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নারীদের ছুটির দিনে বাজার তৈরির এক নতুন মহাপরিকল্পনায় সংযুক্ত হওয়ার। কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এএস ডেইজির সার্বিক তত্ত্বাবধানে মার্কেটটির কার্যক্রম চলতে থাকে। এমনকি তিনিই নাকি বাইরে থেকে ভেতরে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আসার ব্যাপারটি নিজ দায়িত্বেই করে দেন। তবে মার্কেটটি আরও জমজমাট হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত উদ্যোক্তার জোরালো ভূমিকার ওপর শারমিন বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। রবিবারে গিয়ে দেখা যায়, তিনিই একমাত্র মহিলা উদ্যোক্তা এবং বিক্রেতা যিনি তার পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসেছিলেন। আর কোন নারী উদ্যোক্তা সেদিন আসেনি। অথচ আগের দিন অর্থাৎ শনিবার নাকি মার্কেটটি মোটামুটি জমে উঠেছিল। শারমিনের অভিমত ঈদের সময় বাকি দিনগুলোতে যদি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকি তাহলে ব্যবসা তো এমনিতেই মার খাবে। তিনি চান প্রতিদিন ঈদকে সামন রেখে অন্যান্য মার্কেটের মতো এই উইমেন্স হলিডে মার্কেটও নিয়মিত তার ব্যবসার অগ্রযাত্রায় নিরন্তর কাজ করে যাবে। ব্যবসা মানেই আর্থিক সমৃদ্ধি। যা কোন উদ্যোক্তার কঠোর শ্রম আর পুঁজির বিনিময়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠে। সুতরাং এখানে কোন ধরনের ঘাটতি যদি তাদের নিরাশ করে তাহলে কিভাবে তারা সামনের দিকে তাকাবে? তাই নারীদের অগ্রযাত্রায় এই নতুন নারীঘনিষ্ঠ মার্কেটটি যদি পুরোদমে সফল ব্যবসায়িক অবদান রাখতে পারে তাহলে শুধু নারী উদ্যোক্তাই নয় ক্রেতাসাধারণও তার যথার্থ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে না। ‘উইমেন্স হলিডে মার্কেট’ পূর্ণ সাফল্য বয়ে আনুক সংশ্লিষ্টদের জন্য এই প্রত্যাশায় রাজধানীবাসী। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×