ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাছ নিজেই তুলবে খনিজ, কমাবে দূষণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৯ জুন ২০১৭

গাছ নিজেই তুলবে খনিজ, কমাবে দূষণ

পৃথিবীতে ধাতুর চাহিদা তেলের মতোই ব্যাপক। এমনকি কোন কোন পূর্বানুমান বলছে, ইলেকট্রিক গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকায় একটা সময়ে গিয়ে তেলের চেয়েও ধাতুর চাহিদা বেড়ে যাবে। তবে এমনও গাছ রয়েছে যা মাটিতে মিশে থাকা ভারি ধাতু শুষে নিতে পারে। এর ফলে ফিরে আসে মাটির শুদ্ধতা। এমন গাছও রয়েছে যার মাধ্যমে গতানুগতিক কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই খনিজ পদার্থ আহরণ করা যায়। জার্মানির ফ্রাইবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক ধরনের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে মাটি থেকে জারমেনিয়াম নামে একটা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করেছেন। সমস্যা হচ্ছে, এসব ধাতু অনেক মূল্যবান এবং এগুলোর উত্তোলনও সহজ নয়। উপধাতু জার্মেনিয়ামের কথাই ধরা যাক। এটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এটা আলো পরিবাহী। এ কারণে রাতের গগলস, গাড়ির দূরত্ব পরিমাপক সেন্সরে এর ব্যবহার রয়েছে। প্লাস্টিক বোতলকে স্বচ্ছ রাখতেও এই পদার্থের ব্যবহার হয়। কিন্তু জার্মেনিয়াম সহজে মিলে না। যদিও এটা সিলিকনের কাছাকাছি এবং পৃথিবীর মাটিতেই এটা পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাটিতে এর ঘনত্ব খুবই কম। এক মেট্রিক টন মাটিতে সাধারণত ১ দশমিক ৫ গ্রাম জার্মেনিয়াম পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় শিল্প কারখানাগুলো তাদের চাহিদা মেটাতে কয়লার ছাই বা প্রক্রিয়াজাতকৃত আকরিক দস্তা থেকে এটা সংগ্রহ করে। এক কেজি জার্মেনিয়ামের দাম দুই হাজার ইউরোর মতো। গাছই সংগ্রাহক ফ্রাইবুর্গের ইউনিভার্সিটি অফ মাইনিং এ্যান্ড টেকনোলজির জীববিজ্ঞানী হ্যারমান হাইলমায়ার মাটি থেকে জার্মেনিয়াম সংগ্রহে গাছকে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি এক ধরনের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালান। আর্দ্র তৃণভূমিতে এই গাছটি বেশ চোখে পড়ে। দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কৃষকরা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এর চাষ করে থাকেন। এক কেজি জার্মেনিয়ামের দাম দুই হাজার ইউরোর মতো। এই গাছগুলো সিলিকন এ্যাসিড শুষে নেয় এবং তাদের পাতায় ছোট ছোট বালুকণার মতো করে একত্রিত করে। এটা শিকারীর হাত থেকে গাছকে সুরক্ষা দেয়। বালুকণা বা ঘাসের স্বাদ ভাল না। এই ঘাস জার্মেনিয়ামকেও একইভাবে প্রক্রিয়াজাত করে। চাষের পর এটিকে শুকিয়ে পোড়ানো হয়। এই ঘাস থেকেও খুব বেশি জার্মেনিয়াম পাওয়া যায় না। এক মেট্রিক টন ছাই থেকে ১০০ গ্রাম পাওয়া যায়। ক্রসিফার্স নামে আরেক প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, এটা ধাতু আহরণে আরও বেশি পারঙ্গম। রুর ইউনিভার্সিটির মোলিকুলার জেনেটিকস অ্যান্ড ফিজিওলজি অব প্ল্যান্টস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক উটে ক্র্যামার বলেন, এই গাছটি কেবল দূষণকারী পদার্থকে মাটির ভেতর থেকে বের করে আনতেই সক্ষম নয়, পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবান ধাতুকে একত্রিত করতেও সক্ষম। অধ্যাপক ক্র্যামার দুটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। এগুলো হচ্ছে, এই উদ্ভিদ কি প্যাথোজেন থেকে বাঁচতে ক্যাডিয়াম এবং দস্তাকে কাজে লাগায়? এবং এসব ধাতু সংগ্রহ, কাণ্ডে স্থানান্তরে কোন ধরনের পন্থা অবলম্বন করে? কোন ধরনের গাছের মাধ্যমে কোন ধাতু সংগ্রহ করা যায়Ñ তার একটা হিসাব রয়েছে। এটা মাটি ও জলবায়ুর উপরও নির্ভর করে। ভুট্টা, সূর্যমুখী, কাষ্ঠল গাছও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। উইলো এবং পপলার গাছও তাদের পাতায় ধাতু একত্রিত করে। এটা সংগ্রহ করতে একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে পাতাগুলোকে একত্রিত করতে হবে। তবে এটা এখনও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়। ধাতু সংগ্রহে অনেক গাছ হয়ত লাভজনক না-ও হতে পারে। তবে পরিবেশ দূষণ কমাতে এসব গাছের অনেকগুলোরই রয়েছে কার্যকর ভূমিকা। সূত্র : বিবিস, ডয়েচ ভেলে
×