ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন

জয়ের পথে টেরেসা মে

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৯ জুন ২০১৭

জয়ের পথে টেরেসা মে

ব্রিটেনে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের জন্য তিন হাজার তিনশ’য়ের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারের নির্বাচনে মে জয়ের পথে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান, ইন্ডেপেন্ডেন্ট ও স্কটসম্যানের। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টির ব্যবধান এখন ১ শতাংশের কম। স্পষ্টতই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শেষদিনের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে প্রতিশ্রুতি দেন, নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি ব্রেক্সিটের (ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) পূর্ণ বাস্তবায়ন করবেন। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সাত বছর ধরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের কৃচ্ছ্রসাধন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে জনকল্যাণমুখী সোশালিস্ট ব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয়ের ঘোষণা দেন। তবে ভোট পূর্ববর্তী বেশ কিছু জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, টেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টি সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে জেরেমি করবিনের লেবার পার্টির তুলনায়। ভোট পূর্ববর্তী সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির তুলনায় ৭ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। টেরেসা মে যদি পুনরায় ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে আসেন তবে সে গতবারের তুলনায় ১৭টি আসন বেশি পেয়ে মোট ৫০ আসনের ব্যবধানে জিতবেন। টাইমসের ইউগভ নামক এক জরিপে দেখা যায় যে, গত শুক্রবার থেকে টরি পার্টি ৪২ পয়েন্ট নিয়ে জরিপের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। লেবার পার্টির ৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫-এ। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পয়েন্ট ১ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-এ। ইউকেআইপির পয়েন্ট ১ বেড়ে হয়েছে ৫-এ। এদিকে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেনের দল এক ডজন আসন হারতে পারেন বলে সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে। বুধবার প্রেস এ্যাসোসিয়েশনের চালানো পোল অব পোল নামক এক জরিপে দেখা যায়, কনজারভেটিভ পার্টি ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। যেখানে লেবার পার্র্টি তাদের থেকে ৭ পয়েন্ট কম অর্থাৎ ৩৭ পয়েন্ট পেয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পয়েন্ট ছিল ৮, ইউকিপির ৪ এবং গ্রিন পার্টির ২। গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচার চালানো ইউকেআইপি বলছে, শুধু তারাই পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে। স্কটল্যান্ডে এসএনপি নেতা নিকোলা স্টার্জেন ওয়েস্টমিনস্টারে স্কটিশদের ‘উচ্চ কণ্ঠ’ ধরে রাখতে তার দলের এমপিদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি মে’র নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভ ঠেকাতে কনজারভেটিভদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডন ব্রিজ এলাকায় দুই দফা সন্ত্রাসী হামলার কারণে নির্বাচনী প্রচারে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। শেষ দিনে কনজারভেটিভ শীর্ষ নেতা মে প্রচার শুরু করেন লন্ডন থেকে, স্মিথফিল্ড মাংসের বাজারে কসাইদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, ইইউর পেছনে আগে যুক্তরাজ্যের যে ব্যয় হত, তা বেঁচে যাওয়ায় বিশাল উপকার হবে। তিনি প্রস্তাবিত ২৩ বিলিয়ন পাউন্ডের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি ফান্ডের ব্যাপারে বলেন এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাড়িঘর, রাস্তা, রেল ও ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের উন্নতি হবে। মে বলেন, বছরখানেক আগে ব্রিটেনের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে গিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছিল। তিনি বলেন, লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে অর্থনীতি ধ্বংস হবে। তিনি দেশকে আরও উন্নত করতে চান, যেখানে কোন সম্প্রদায় পিছনে পড়ে থাকবে না। এবারের নির্বাচনে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি নারী প্রার্থী অংশ নেন। এবার মোট প্রার্থীর প্রায় ৩০ শতাংশ নারী। ২০১৫ সালে নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ২৬ শতাংশ। তবে প্রকৃত সংখ্যার হিসাবে নারী প্রার্থী এবার দাঁড়িয়েছে ৯৮৩ জন। গত নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৬ জন। বড় দলগুলোর মধ্যে লেবার পার্টি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাদের নারী প্রার্থী মোট প্রার্থীর ৪১ শতাংশ। তুলনামূলক হিসেবে গ্রিন পার্টিতে নারী প্রার্থীর হার ৩৬ শতাংশ, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিতে (এসএনপি) ৩৪ শতাংশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলে (লিব ডেম) ২৯ শতাংশ। কনজারভেটিভ আর প্লায়িড কামরি এই দুই দলের প্রধান নারী। কিন্তু এই দুই দলেই শতকরা হিসেবে নারী প্রার্থী ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম নারী প্রার্থী দিয়েছে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ১৩ শতাংশ। ১৫ সালের নির্বাচনে যেসব নির্বাচনী কেন্দ্রে লেবারের নারী প্রার্থী জিতেছিলেন তাদের এবারের নির্বাচনে সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে লেবার পার্টি। লেবার পার্টি যদি দুটি ক্ষেত্রেই ৫ শতাংশ বেশি আসন পায়, তাহলে লেবার ১৬ জন বাড়তি নারী এমপি এবং ৩২জন বেশি পুরুষ এমপি পাবে।
×