ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাজার

এবারও বাহুবলী সারারা বাজিরাও মাস্তানি পছন্দের তালিকায়

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৯ জুন ২০১৭

এবারও বাহুবলী সারারা বাজিরাও মাস্তানি পছন্দের তালিকায়

রহিম শেখ ॥ উদ্ভট ও অদ্ভুত সব নামের পোশাকে ছেয়ে গেছে নগরীর বিপণিবিতান, শপিংমল ও মার্কেটগুলো। গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও ভারতীয় পোশাকের দখলে রাজধানীর ঈদ মার্কেটে। ফিল্মিওয়ালা নাম দেয়া এসব পোশাকের সবই আমদানিকৃত। অথচ এসব নামে কোন পোশাক ওপার বাংলা এমনকি পুরো ভারতের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পোশাকের সঙ্গে ইসলামিক বা বাংলাদেশের সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক তো পাওয়া যায়ই না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নামগুলো নারীদের জন্য অবমাননাকরও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় সিরিয়ালের বিভিন্ন চরিত্রের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পোশাকে এসব নাম জুড়ে দিচ্ছেন দেশী ব্যবসায়ীরা। মূলত ঈদ উৎসব পুঁজি করে মুনাফা বা অধিক বাণিজ্যের লোভে প্রতিবছরই কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী পোশাক নিয়ে এমন ‘নামের’ ব্যবসা করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় হিন্দি-বাংলা সিনেমাসহ টিভি চ্যানেলগুলোর মেগাধারাবাহিক নাটক ও সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের পরনের পোশাকের চাহিদা এখন তুঙ্গে। একশ্রেণীর মৌসুমী ব্যবসায়ী আমদানি করছেন ভারতীয় এসব পোশাক। আমদানির পর বিভিন্ন নামে লাগানো হচ্ছে ট্যাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীদের জন্য অন্যতম মার্কেট রাজধানীর গাউছিয়া, নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, টুইনটাওয়ার, ফরচুন এবং ইস্টার্ণ প্লাজাসহ সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে ভারতের পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি দোকানেই নানা ধরনের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস এবং বাচ্চাদের পোশাক সাজানো হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু পাকিস্তানী ও চায়না পোশাক থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা ভারতীয় পোশাকের দিকে। শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের ঈদ বাজারেও একচেটিয়া দখল ভারতীয় পোশাকের। জানা গেছে, গত প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশে ঈদের বাজারে পোশাকের নাম দেয়ার একটা সংস্কৃতি চলে আসছে। শুধু নারী নয় পুরুষদের পোশাকেরও নামকরণ করা হয়। তবে নামকরণের প্রথায় নারীদের পোশাকই অগ্রগামী। ২০০৫ থেকে ১৬ পর্যন্ত বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একই ধরনের বড় ঘের দেয়া কামিজ কখনও জিপসি, কখনও আনারকলি কখনও পাখি জামা নামে বাজারে এসেছে। কিন্তু পোশাকের ধরন একই ছিল সব সময়। সেই একই পোশাক বাজারে এলেও এবার নাম দেয়া হয়েছে ‘বাহুবলী’। বর্তমানে এই পোশাকের জ্বরে ভুগছেন ক্রেতারা। ফ্যাশন হাউস রংয়ের কর্ণধার বিপ্লব সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় এসব পোশাকের একই নাম নিয়ে আপনি ভারতের বাজারে খুঁজলে এই নামে কোন পোশাক পাওয়া যাবে না। অতি মুনাফার আশায় সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশী বিক্রেতারা এই নামের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুই দোকানে গিয়ে দেখা গেল, একই নামে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। কামিজের নিচে স্কার্ট দেয়া একটি পোশাকের নাম দেয়া হয়েছে ‘সারারা’। পাশের দোকানেই ফ্রক কামিজের নিচে চুড়িদার সালোয়ার দেয়া পোশাকের নামও ‘সারারা’। দোকানিরা ক্রেতাদের বোঝাচ্ছেন তার দোকানে থাকা পোশাকটাই প্রকৃত ‘সারারা’ পোশাক। এমন নামকরণের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানালেন, এই ধরনের নামের সঙ্গে ক্রেতারা নিজেদের পরিচিত নাম বা চরিত্রের সাদৃশ্য খুঁজে পায়। জাহেদুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা জানালেন, পোশাকের এসব নামকরণ ভারত থেকে দেয়া হয় না। ক্রেতার চাহিদা এবং বাজারের অবস্থা বুঝে তারাই এই নামকরণ করে নেন। চাঁদনী চক মার্কেটের ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার আবু ফয়েজ বাচ্চু বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশ ভাল। বিক্রিও হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। দেশী পোশাকও বিক্রি হচ্ছে তবে ভারতীয়-পাকিস্তানী ব্র্যান্ডের তুলনায় খুব বেশি নয়। তিনি বলেন, এবার ভারতীয় সিরিয়াল ও সিনেমার নামে ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘মাসাককালী’, ‘আশিকী’, ‘পাখি’, ‘কিরণমালা’, ‘মধুমালা’সহ থ্রিপিস ও ফোর পিস বিক্রি হচ্ছে বেশি। ন্যাশনাল ফ্যাশন হাউস এ্যান্ড গাউছিয়া’র ম্যানেজার মোস্তাফা মিয়া জানান, এবার সিরিয়াল ও সিনেমায় জনপ্রিয় চরিত্র ও নায়িকাদের ড্রেস বিক্রিও হচ্ছে দেদার। এছাড়া গত বছরের ঈদে বের হওয়া কিরণমালা, ফ্লোরটাচ গাউন তো আছেই। এ নামে এবার ড্রেস আসছে, তবে ডিজাইনে ভিন্নতা রয়েছে। সোমবার ধানম-ি থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে আসা সুমনা হক জানান, তার স্বামী দুবাই থাকেন। ঈদ মার্কেটের জন্য টাকা পাঠিয়ে বলেছেন আগেভাগেই ঈদের শপিং করে নিতে। জানালেন, মেয়েদের চাহিদানুযায়ী পোশাক কিনতে হচ্ছে। ‘বাহুবলী’ নামে দুটি ড্রেস কিনেছেন মেয়েদের জন্য। গাউছিয়া মার্কেটে কথা হলো ন্যাশনাল গার্মেন্টসের কর্মী মোঃ মোস্তফার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভারতীয় পোশাকের কারণে দেশী পোশাকের চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। তাছাড়া ভারতীয় পোশাকও এখন দেশে খুব বেশি বিক্রি হয় না, কারণ অনেকেই এখন ঈদ শপিংয়ে ভারত চলে যান। এবারের ঈদের পোশাকের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে মোঃ মোস্তফা জানান, পোশাকের দাম এবার খুব বেশি বাড়েনি। তবে ভারতীয় পোশাক আমদানিতে ব্যয় কিছুটা বাড়ায় সামান্য দাম বেড়েছে। তিনি এবারের বাজার দর সম্পর্কে জানান, ‘বাহুবলী’ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকায়, ‘সারারা’ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে বারো হাজার টাকায়, থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে দশ হাজার টাকায়। একই মার্কেটে কথা হলো স্বপন ফ্যাশন হাউসের কর্মী মোঃ আরমানের সঙ্গে। তিনি জানান, গড়ে প্রতি পোশাকে গতবারের তুলনায় চার থেকে পাঁচ শ’ টাকা দাম বেড়েছে। ‘বাহুবলী’ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়, ‘সারারা’ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়, এছাড়া থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়। এবারের ঈদ মার্কেটের কেনাকাটার বিষয়ে মিফতার ফ্যাশন হাউসের কর্মী মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার ঈদের বেচাকেনা এখনও পুরোদমে জমে ওঠেনি। অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যবসায় মন্দা চলছে।’ তবে হিন্দী চলচ্চিত্র ও ভারতীয় সিরিয়ালনির্ভর পোশাকের প্রতি আকৃষ্ট নন-এমন তরুণীর সংখ্যাও কম নয়।
×