ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৯ জুন ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আপন জুয়েলার্সের মালিক তার অর্থবিত্তের শক্তি নিয়ে ধর্ষক ছেলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তিনি। এর পরও কেউ কেউ বলছিলেন, ধর্ষণ করেছে ছেলে সাফাত। তার শাস্তি হোক। বাপ দিলদার আহমেদকে কেন হয়রানি করা হচ্ছে? এ অবস্থায় সামনে আসে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। আপন জুয়েলার্সে অভিযান শেষে কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শোরুমে স্বর্ণ পাওয়া গেছে ১৩ মণ। প্রায় পুরোটাই অবৈধ। চোরাই মাল। গত কয়েকদিনের আপ্রাণ চেষ্টার পর আপন জুয়েলার্সের মালিক ও ধর্ষক পুত্রের জনক দিলদার আহমেদ ১২৫ কেজি স্বর্ণের কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এবং সেখানেও বিরাট ফাঁকি। ব্যাগেজ সুবিধার আওতায় বিদেশে থেকে সাধারণ যাত্রীদের আনা এসব স্বর্ণ নাকি কিনে নিয়েছে আপন জুয়েলার্স। তারা সেই কাগজ দেখিয়েছেন। শুল্ক গোয়েন্দা দফতর মোটামুটি নিশ্চিত, সব কাগজ ভুয়া। এরপরও তার স্বর্ণ আটক করা যাবে না? স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা যেন তা-ই বলতে চাইছেন। তারা যে ভাষায় কথা বলছেন এখন, শোনার মতো বৈকি! কথা সামান্যই। হুঙ্কার দিচ্ছেন বেশি। এই করে ফেলবো। সেই করে ফেলবো। আল্টিমেটামের পর আল্টিমেটাম। গত বুধবার যা বলা হলো তাতে মনে হতে পারে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এই দেশের মৃত্তিকা স্বর্ণ দিয়ে লেপে দিয়েছেন। তারপরও তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। গত বুধবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি এনামুল হক খান। তিনি বলেন, বনানীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন জুয়েলার্সে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে এটাকে আমরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সঙ্গে তুলনা করছি। ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ শব্দটি ব্যবহার করেন তিনি। ভাবা যায়? আর আপন জুয়েলার্সের বেলায় যোগ করেন ‘স্বনামধন্য’ বিশেষণ। আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের জব্দ করা স্বর্ণ ফেরত দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। হঠাৎ করেই ব্যবসায়ীদের এমন হুঙ্কার। কেন? উত্তরে ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন করা ব্যক্তিরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সারা দেশে তুমুল প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল। এখন অন্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত মানুষ। দিলদার আহমেদ সুযোগটা কাজে লাগানোর ফন্দি করছেন। নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন তিনি। অন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এরপরও হুমকি-ধমকি তাদের দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে বলে মনে করছেন ঢাকার সচেতন নাগরিকরা। রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশে আগের মতোই দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তা না হলে টাকার কাছে ন্যায়বিচার পরাজিত হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। রমজান মাস এখন। ইতোমধ্যে ১২টি রোজা রাখা হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার মাসের ১৩তম দিন। দেখতে দেখতে বাকি দিনগুলোও ফুরিয়ে যাবে। তাই শুরু হয়ে গেছে ঈদের প্রস্তুতি। ঈদে এবারও বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাবেন। গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করেন। সে লক্ষ্যে চলছে নানা প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, ট্রেনের বগিতে রং করা হচ্ছে। ঈদে অনেক ট্রেনে বাড়তি বগি যোগ করা হবে। সেসব বগি প্রস্তুত করার কাজ চলছে পুরোদমে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগামী ১২ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। তার আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানান তারা। রাজধানী ঢাকার প্রায় সব শপিংমল মার্কেট এখন জমজমাট। নিজের ও প্রিয়জনের জন্য চলছে কেনাকাটা। প্রচ- গরম আর যানজটের কারণে বিড়ম্বনার শেষ নেই। তবুও ঘুরে বেড়ানো। একটু আরামপ্রিয় যারা, সন্ধ্যায় ইফতারের পর বের হচ্ছেন। তাদের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে মার্কেট। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা শপিংমলের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল এক ক্রেতার সঙ্গে। পরিবারের তিন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। নাম আরিফুল ইসলাম। সরকারী কর্মকর্তা। বললেন, আমরা তো বেতনের ওপর নির্ভরশীল। বেতন হাতে পাওয়ার পর এসেছি কেনাকাটা করতে। আত্মীয়স্বজন অনেক। তাদের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। তাই একটু আগেভাগে শুরু করলাম। তার সঙ্গে শপিং করতে আসা মেয়ে হ্যাপির কথাটিও আমলে নেয়ার মতো। সে জানালো, আগেভাগে না কিনলে ভাল ডিজাইনের জামাগুলো বিক্রি হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় সাইজও পাওয়া যায় না। বাস্তবেও তা-ই। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে গিয়ে তাই ভুগতে হয়। এই ভোগান্তি যারা চান না তারা কেনাকাটা সেরে ফেলুন। বুদ্ধিমানের কাজ হবে!
×