ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম কেনা হয়েছে, কার্যকর করতে দু’মাস সময় লাগেব

বিধিনিষেধ আরোপের পর কমেছে কার্গো পণ্য পরিবহন

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৯ জুন ২০১৭

বিধিনিষেধ আরোপের পর কমেছে কার্গো পণ্য পরিবহন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকির দেশ হিসেব অন্তর্ভুক্ত করে আকাশপথে কার্গো পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ আরোপের পর কমেছে কার্গো পণ্য পরিবহন। গত ১ জুন থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে কার্গোতে পণ্য পাঠাতে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেমের (এলইডিএস) আওতায় স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেয়া হয়। এর পর থেকেই শাহজালালে আকাশপথে কার্গো পণ্য পরিবহন কমে আসে। কারণ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম নেই। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২৫ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে তার্কিশ এয়ার এক লাখ ২৫ হাজার ৫৭৭ কেজি, ইতিহাদ তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬১০ কেজি, কাতার এয়ারওয়েজ পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ২৫০ কেজি, ক্যাথে প্যাসেফিক ৮৫৪ কেজি, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এক লাখ ১৪ হাজার ৩২৫ কেজি, এমিরেটস তিন লাখ ৬০ হাজার ০৭৯ কেজি, ড্রাগন এয়ার চার হাজার ৪০৯ কেজি পণ্য কার্গোতে পরিবহন করছে। ইইউ এর বিধিনিষেধ আরোপের পর ১ থেকে ৬ জুন ক্যাথে প্যাসেফিক, ড্রাগন এয়ার কার্গোতে কোনও পণ্য পরিবহন করেনি। অন্যদিকে, পণ্য পরিবহন বেড়ে গেছে তার্কিশ, ইতিহাদ, কাতার এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সে। এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম থাকাংয় তার্কিশ এয়ার ৪২ হাজার ১৭৫ কেজি, ইতিহাদ ৬৪ হাজার ৯৩৪ কেজি, কাতার এয়ারওয়েজ পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ কেজি, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স চার লাখ ২৫ হাজার ৪৮১ কেজি, এমিরেটস এক লাখ ৪৪ হাজার ৫১৮ কেজি পণ্য কার্গোতে পরিবহন করছে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন যন্ত্র নেই (এলইডিএস)। সিভিল এভিয়েশনের যন্ত্র বসাতে আরও দু’মাস সময় লাগেব। তবে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন ডগ (ইডিডি) দিয়েও স্ক্রিনিং করা হয়। ইইউ’র বিধিনিষেধ আরোপের পর ৬ জুন বিমানবন্দরে ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডগ স্কোয়ার্ড দিয়ে স্ক্রিনিং এর মহড়া পরিচালনা করে সিভিল এভিয়েশন অথরটি। ইইউ’র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আবার স্ক্রিনিং এর মহড়া পরিচালনা করা হবে। তাদের সন্তুষ্টি হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন ডগ (ইডিডি) স্কোয়ার্ড দিয়ে স্ক্রিনিং করা হবে। ফলে এই সময়ের মধ্যে কার্গো পণ্য পরিবহনে ?তৃতীয় দেশের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করতে হবে এয়ারলাইন্সগুলোকে। বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, ইইউ’র বিধি নিষেধে কার্গো পরিবহনে কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। আগের চেয়ে একটু কম কার্গো যাচ্ছে। সাধারণত গার্মেন্টস, লেদার আইটেম বেশি যায়। এমিরেটস, ইতিহাদসহ বেশ কিছু এয়ারাইন্স কম পণ্য পরিবহন করছে। এ প্রসঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের ইতিহাদ এর এয়ারপোর্ট ম্যানেজার আল মাহমুদ শামিম বলেন, ‘ঢাকা থেকে স্ক্রিনিং পদ্ধতি (তল্লাশি) সেকেন্ডারি মেথোড ফলো করার সুযোগ এখনও নেই। তৃতীয় কোনও দেশ থেকে করতে হচ্ছে। কিন্তু এতে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন। সে কারণে চাইলেই পছন্দ মতো সময়ে স্ক্রিনিং করা সম্ভব না। এসব জটিলতার কারণে এখন কম কার্গো যাচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে স্ক্রিনিং প্রসঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে স্ক্রিনিং বলতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন মেথড। এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন মেথডের মধ্যে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন ডগ (ইডিডি) দিয়েও স্ক্রিনিং করা যেতে পারে অথবা এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন যন্ত্রও (ইডিএস) হতে পারে। এটা বাংলাদেশেও করা যেতে পারে, অথবা তৃতীয় কোনও দেশেও করা যাবে। এয়ারলাইন্সগুলো তাদের সুবিধা মতো যেখানে খুশি স্ক্রিনিং করাতে পারবে। জানা গেছে, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নও (এএপিবিএন)ডগ স্কোয়ার্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এএপিবিএন) সিনিয়র সহকারী সুপার জিয়াউল হক বলেন, ‘বিমান বন্দরের জন্য এএপিবিএন এর ডগ স্কোয়ার্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। সিভিল এভিয়েশনের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, সেখানে কুকুররদের থাকার জায়াগা তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কুকুর কেনা হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম বলেন, ‘ইইউ’র এ সিদ্ধান্তে আমাদের কার্গো পণ্য পরিবহণে কোনও সমস্যা হবে না। যে এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য নিয়ে যাবে, তারা চাইলে বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ধাপে স্ক্রিনিং করতে পারবে কিংবা অন্য কোনও দেশেও করতে পারবে। এয়ারলাইন্সগুলো চাইলে দুবাই ও জেদ্দায় দ্বিতীয় ধাপে স্ক্রিনিং করতে পারবে। আমাদের এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম (এলইডিএস) কেনা হয়েছে। এটি কার্যকর করতে দু’মাসের মতো সময় লাগেব। তবে বর্তমানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অথবা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডগ স্কোয়ার্ড দিয়ে স্ক্রিনিং করতে পারবো।’ এদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে বিস্ফোরক সনাক্তকরণ যন্ত্রসহ আধুনিক স্ক্রিনিং যন্ত্র বসানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি, যানবাহন তল্লাশি, তরল বিস্ফোরক সনাক্তকরণে আলাদা যন্ত্র বসানো হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের পরামর্শে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ চলছে। উজোজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন আটটি, হ্যান্ড ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন ১৪টি, লিকুয়িড এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম (এলইডিএস) ছয়টি, আন্ডার ভিহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস) নয়টি, ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার চারটি, বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার পাঁচটি, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) দু’টি ও চারটি এক্সপোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) কেনা হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি শাহজালালে সংযোজন হয়েছে, কিছু সংযোজনের কাজ চলামান রয়েছে। বাকি যন্ত্রপাতি ঢাকায় আসলে সংযোজন করা হবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বিশেষ প্রকল্প গত বছর ৮ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। দেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, নিরাপত্তারর কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্বে পায় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইন। প্রতিষ্ঠানটি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়।
×