ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন

১৯ সরকারী সংস্থার কাছে ব্যাংকের পাওনা ২৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৯ জুন ২০১৭

১৯ সরকারী সংস্থার কাছে ব্যাংকের পাওনা ২৮ হাজার কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ দেশের ১৯টি সরকারী সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপিতে (শ্রেণীবিন্যাসিত) পরিণত হয়েছে প্রায় ২১৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)‘র কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারী সংস্থাগুলোর বিপুল অঙ্কের ঋণের ভারে দাঁড়াতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। একই কারণে বেসরকারী উদ্যোক্তারা এ ব্যাংকগুলো থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগের গতিও বাড়ছে না। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৫১২ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে, গেল ১০ মাসে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ চার ব্যাংকের বকেয়া বেড়েছে ৪১৬ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা একই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ১৮৬ কোটি টাকা। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, এ সময়ে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)‘র কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে। গত বছর ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা একই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ১১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে, গেল ১০ মাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা বেড়েছে ৩৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। ফলে গেল ১০ মাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) কাছে বকেয়া ছিল ৪ হাজার ৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে গেল ১০ মাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়েছে প্রায় ৪১৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কাছে ব্যাংকগুলোর বকেয়া পাওনা ছিল ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। গেল ১০ মাসে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়েছে ৭৮১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা কমেছে প্রায় ৪২৩ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ছিল ৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) বকেয়া কমে দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি টাকা, যা একই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে (বিডব্লিউডিবি) ব্যাংকগুলোর বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬২৯ কোটি টাকা, যা একই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ মিনারেল অয়েল এ্যান্ড গ্যাস কর্পোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ছিল ১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া গেল বছর শেষে বিএসইসির কাছে ২১১ কোটি, বিবিসির কাছে ৪৫১ কোটি, ঢাকা ওয়াসার কাছে ৩৭৭ কোটি, আরইবির কাছে ৩৪০ কোটি ৬৬ লাখ, বিটিএমসির কাছে সাড়ে ২৬ কোটি, টিসিবির কাছে ২৫ কোটি, সিপিএ’র কাছে ১০ কোটি ও বিএসসির কাছে ৪ কোটি টাকার পাওনা রয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে সর্বোচ্চ ১২৭ কোটি ১২ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে বিসিআইসির কাছে। এছাড়া বিটিএমসির কাছে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ, বিজেএমসির কাছে ১১ কোটি ৬৭ লাখ, টিসিবির কাছে ১১ কোটি, বিএডিসির ২১ কোটি ২৭ লাখ, বিটিবির কাছে ১০ কোটি ৫২ লাখ ও বিএসএফআইসির ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।
×