ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনকে ঢাকা থেকে সাহায্য নেয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ৯ জুন ২০১৭

লন্ডনকে ঢাকা থেকে সাহায্য নেয়া উচিত

এক বছর আগে ঢাকায় মর্মান্তিক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে যায়। একেবারে বিশ্ব কাঁপানো তুলনাহীন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কর্মকা-। বাংলাদেশ, জাপান, ইতালীসহ সারা বিশ্বের মানুষকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় কাঁদিয়েছে। আমরা যারা প্রবাসী বাংলাদেশী, তারা কখনও চাই না বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া অঙ্গনে এমনতরো খবরের হেডলাইন হোক। সত্যিকথা বলতে কি, আসলে কিন্তু তাই হয়। ঝড়, তুফান, বন্যা, বিল্ডিং ধসে পড়া, হরতাল, হরতালে পেট্রোল বোমা, লঞ্চ ডুবি, বাস দুর্ঘটনা, চাপাতি- খুন, ধর্ষণ, মানুষ গুম, রাজনৈতিক খুনাখুনি, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, ব্যাংকের টাকা উধাও কিংবা টাকা মেরে দেয়া এবং সর্বোপরি সন্ত্রাস ইত্যাদিই দিয়ে বাংলাদেশকে চেনানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ভাল খবর হয় না বা নেই তেমন তো নয়। এই ধরুন না, ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিঁজানের ঘটনাটির পর বাংলাদেশ সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একনিষ্ঠভাবে যেভাবে সন্ত্রাস দমন করে যাচ্ছে এবং গুলশান ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি হতে দিচ্ছে না- এটা একটা বিরাট সাফল্য নয় কি? র‌্যাব, পুলিশ নিজের জীবনবাজি রেখে সন্ত্রাস দমনে পিছপা হচ্ছে নাÑ এটা একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নয় কি? যারা ভেবেছিল বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে। মসজিদে বোমা ফুটবে, আত্মঘাতী হামলা হবেÑ তাতো হয়নি। আশা করি আর হবেও না। অন্যদিকে দেখুন, লন্ডন ব্রিজ একটা আইকন, সেখানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছুদিন পর পরইতো হচ্ছে। সংসারের টানাপোড়েন থেকেও অল্প-অল্প টাকা সঞ্চয় করে পরিবার-পরিজন নিয়ে লন্ডন বেড়াতে গেলেন আর আচমকা, পরিবারের নিকটতম দুই সদস্য আর ফিরে এলো না। একবার ভেবে দেখেছেন? যে কোন মৃত্যুই পীড়াদায়ক। কিন্তু ক্রূশবিদ্ধ হওয়ার আগে যিশুখ্রিস্টও শেষ খাবার খেয়েছিলেন। হলি আর্টিজানের মানুষগুলো শেষ খাবার কি শেষ করতে পেরেছিলেন? বর্তমান বাংলাদেশ সরকার যেভাবেই হোক, দেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যাতে মানুষ সন্ত্রাসকে শুধু ধিক্কারই দিচ্ছে না, পরিবার পরিজন সন্ত্রাসীদের লাশ পর্যন্ত নিতে আসে না। জানাজা পড়া তো দূরের কথা। এ থেকে বুঝা যায়, সরকার চাইলে মানুষকে আতঙ্কিত অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সরকার অবশ্যই সন্ত্রাস দমনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখে। লন্ডনকে তাই বলছি, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিন। এতগুলো ঘটনা ঘটার পর এই প্রথম খবরে এলো, লন্ডনের মসজিদের ইমাম সন্ত্রাসীর জানাজা পড়াতে অস্বীকার করেছে। এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। ইতিহাস বলে, তখন অনেক অত্যাচারিত হয়েছে দেশের পর দেশ। সেই থেকেই বিভিন্ন দেশের মানুষ দিয়ে একটা জগাখিচুড়ির দেশ হয়েছে ব্রিটেন, বিশেষ করে লন্ডন। সন্ত্রাস তাই পাকাপোক্তভাবেই বাসা বেঁধেছে ব্রিটেনে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু ইন্টার্নেট কিংবা সোসাল মিডিয়া সূত্র ধরেই কাজ করে না; আমার বিশ্বাস তাদের প্রখরতম ইন্টিউশান আছে। অবশ্য বলা যায় বাংলাদেশে একটা জাতিই বসবাস করে তাই ইন্টিউশানের ওপর নির্ভর করা যায়। বিভিন্ন জগাখিচুরি রেস নিয়ে ব্রিটেন। ভাবা হয়েছিল, পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মেয়র সন্ত্রাস দমনে সহায়ক হবে। লোকজন ভোট দিয়েছে সাদেক খানকে। বরং উল্টোটাই হচ্ছে। মেয়র এবং স্কটলেন্ডিয়ার্ড বাহিনী পুরোপরি ফেইল করছে। সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র খানিকটা নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই খুনখারাবি হচ্ছে। খুনিদের হাতে যখন বন্দুক আছে, তখন কয়েক ডজন মানুষেরও জীবনহানি ঘটছে। এই তো কিছুদিন আগে আমাদের মিসিসিপিতে একলোক একজন পুলিশসহ আটজনকে মেরে ফেলল। অরল্যান্ডোতে একজন চাকরি চলে যাওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছে ৫ জন কর্মীকে মেরে। বন্দুকের দেশ আমেরিকা। এখানে সবকিছুই সম্ভব। কিন্তু সন্ত্রাস বলতে আমরা যা বুঝিÑ তা ইদানীংকালে হচ্ছে না। এটা কি আমাদের নতুন প্রেসিডেন্টের টুইটের ফলশ্রুতি? আমার এক বন্ধু প্রায়শ বলে, এখন কোন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলে- সে পরিবার শুধু নয়, পুরো কমিউনিটিকে ডিপোর্টেশন করা হবে। ॥ দুই ॥ আরও একটি বিষয়ে আমি সরকারের কাজটিকে সমর্থন করছি। রাজনীতির মারপ্যাঁচ আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা অনেক সময়ই বুঝে উঠতে পারি না। রাজনৈতিক নেতারা তাই অনেকক্ষেত্রেই যেসব সিদ্ধান্ত নেনÑ সুদূরপ্রসারি সুফল চিন্তা করেই নিয়ে থাকেন। তাৎক্ষণিক আমাদের কাছে খটকা লাগে। রাজনীতির ধারায় আমরা দেখেছি বিএনপি বিগত ৩ বছর আগে কি ভুলই না করেছে আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই বিএনপি এখন নিশ্চয় আপসোস করছে? কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ আহলাদে ভেসে যাচ্ছে না। তারা হয়ত আরও গভীর চিন্তা-ভাবনা করেই এগুচ্ছে। সম্প্রতি ভাস্কর্য নিয়ে কিছুটা হুলুস্থূল ব্যাপার ঘটে গেল। এ ধরনের বিষয় রাজনীতিতে না আসায় ভাল। বংলাদেশের কালচার ও সংস্কৃতি তো আজকের নয়। ভাস্কর্য ব্যাপারটাও আজকের নয়। এই বিষয়গুলো রাজনীতিতে আসা মানেই কিছু না কিছূ দুরভিসন্ধি থাকবেই। তবে যাই হোক, সরকার যে দুকূলই রক্ষা করছে তাতে সরকারকে দোষ দেয়া যায় না। বিশেষ করে ভাস্কর্য শিল্পী মৃণাল হককে নিয়েই কাজটি করেছেন এবং ভাস্কর্যটি কোন স্টোরেজ রুমে তালাবন্ধ করে রাখেনি। শুধু স্থানান্তর করেছেন। শিল্পীর মনে কষ্ট হয়েছে বৈকি। তবু আমি ধন্যবাদ জানাই শিল্পীকে, তিনি সহযোগিতা করেছেন সরকারকে সুদূরপ্রসারি সুফলের কথা ভেবেই। একজন শিল্পীর কাছে অর্থের চাইতেও মানÑঅপমান অনেক বড়। আমার ধারণা শিল্পীকে সম্মান দিয়েই সরকার কাজটি সম্পন্ন করেছেন। রাজনীতি অনেকটা সমঝোতার খেলা। এই খেলায় জয়লাভের জন্য একগুয়ে হলে লাভের চাইতে বরং ক্ষতি বেশি। শুধু তাই নয়, সমগ্র জনগণেরই সমূহ ক্ষতি। তাছাড়া ধর্ম চিরকাল থাকবে, কোনো ধর্মের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয় না। করাও যায় না। কিন্তু কোন প্রজন্মই চিরকাল থাকবে না। কিন্তু মানুষের কীর্তিকলাপ থেকে যাবে। ভাল কীর্তিকলাপ হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতেই থাকবে। সুতরাং সন্ত্রাস ছেড়ে নিজে বাঁচুন অন্যকেও বাঁচতে দিন। লেখক : আমেরিকান প্রবাসী অধ্যাপক [email protected]
×