ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মনিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশিত: ০৩:২২, ৯ জুন ২০১৭

জন্মনিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিন

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই জনসংখ্যাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়, অথচ বর্তমান সরকার প্রশাসনের কাছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বড় সমস্যা নয়। তারা বলছেন বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, বোঝা হিসেবে নয়। দেশের অনেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩৬ শতাংশ শিশু খর্বকায়। এর সঙ্গে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে ৩৪ লাখ মানুষ। জনসংখ্যার এ চাপ পড়ছে ক্রমাগত সমাজ ও অর্থনীতিতে। আবাসন, পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে সঙ্কট, বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশ ও জনস্বার্থে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এত বেশি বাড়ছে যে, মানসম্পন্ন এবং প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন জনসংখ্যার এই সমস্যাকে যদি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয় কিংবা উপেক্ষা করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল ও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের ১ জুলাই দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি আর এ বছরের ১ জানুয়ারিতে হয়েছে ১৬ কোটি ১৭ লাখ। ৬ মাসে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ। অর্থাৎ প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়ছে ৯ হাজার ৩১৫ জন। এ হারে জনসংখ্যা বাড়লে ২০৫১ সালে দেশের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ কোটি ৮৪ লাখে। অর্থাৎ কতটা উদ্বেগজনক এ পরিসংখ্যান তা সহজেই অনুমেয়। লক্ষণীয় ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে মাত্র দশমিক ১ শতাংশ। তা হলে এই যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার প্রায় স্থবির হয়ে পড়ছে এ থেকে আশঙ্কা ও প্রশ্ন জাগছে কেন কি কারণে হার বাড়েনি। রহস্য কোথায়? পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর প্রতি বছর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ করছে। অথচ এর সুফল কোথায়? মাঠ পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং চাহিদা মোতাবেক সক্ষম দম্পতির হাতে তা পৌঁছানো যাচ্ছে না লোকবলের অভাবে। অনুমোদিত পদের চেয়ে আড়াই হাজার পদ শূন্য শুধুমাত্র পরিবার কল্যাণ সহকারীর। এছাড়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট, পরিদর্শক মিলিয়ে শূন্যপদ আছে ৩ হাজার। মাঠ পর্যায়ে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে ঘরে ঘরে সেবা পৌঁছে দিতে হলে লোকবল বাড়ানো তথা শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে এর সুষ্ঠু সমাধান এবং কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি? জনসংখ্যাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিন্তা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সহযোগিতার মনোভাব গ্রহণ না করলে শুধু বোঝা নয় বিপদ হিসেবেও দেখা দেবে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ১ হাজার ১০০ মানুষ। জনঘনত্বে এটি ভারতের চেয়ে ৪ গুণ আর চীনের চেয়ে ৮ গুণ বেশি। এত বেশি জনঘনত্বেও দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ১৫ ডিসিমেল বর্তমানে, ২০৫১ সালে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৭ ডিসিমেলে। অর্থাৎ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়াই তো কঠিন হবে। যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চিন্তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে না করা হয়। একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ জীবনই তো সবার কাম্য। যত মানুষ তত সমস্যা। সঙ্কট, কারণ দেশটি যে ছোট। জীবনমান বাড়াতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা জরুরী। দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকার বহু লোক। কর্মসংস্থান বাড়ছে না এমনিতেই। তার ওপর যদি আরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা হলে এই চাপ কিভাবে সামলাবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র?
×