ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হায় সঞ্চয়পত্র!

প্রকাশিত: ০৩:২২, ৯ জুন ২০১৭

হায় সঞ্চয়পত্র!

এবারের ঘোষিত বাজেটে আগামী অর্থবছর থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর ঘোষণায় হিড়িক পড়েছে সঞ্চয়পত্র কেনার। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা দেয়ার পর থেকে মানুষ লাইন ধরে কিনছে সঞ্চয়পত্র। ব্যাংক ও পোস্ট অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যেও জানা যায় যে, বর্তমানে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বিক্রি বেড়ে গেছে সঞ্চয়পত্রের। ফলে ব্যাপক আকারে সঞ্চয়পত্রের সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এমন খবরও আছে। ব্যাংক ও পোস্ট অফিস চাহিদামতো সঞ্চয়পত্র সরবরাহ করতে পারছে না। এ নিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করার অভিযোগও আছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও নাকি কারসাজি করা হচ্ছে। অবশ্য ব্যাংক বলছে, একই সঙ্গে বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ার কারণে সময়মতো ছাপা হয়ে আসছে না সঞ্চয়পত্র। দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এই অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের জীবনে কিছুটা নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য দিতেই সরকারের সঞ্চয়পত্র স্কিম। আর এর বিপরীতে সুদের ভর্তুকিও দিচ্ছে সরকার। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সুবিধাবঞ্চিতদের আর্থিক তথা সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির অন্যতম উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাবও বৃদ্ধি পায়। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেয় সরকার। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্র। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফন প্রবণতা সরকারের ঋণের চাপও বাড়াবে। এখন উচ্চবিত্তরাও কিনছেন সঞ্চয়পত্র। ব্যাংকে আমানতের ওপর সুদ কমানোর জেরে সাধারণ মানুষও লাভজনক বিধায় কিনছেন সঞ্চয়পত্র। সেক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমালে স্বভাবতই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ। নিয়মানুযায়ী সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিষয়টি প্রজ্ঞাপন জারি হলেই কার্যকর হবে নতুন সুদহার। অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, ব্যাংকে আমানত রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় তার চেয়ে মাত্র দুই শতাংশ বেশি সুদ থাকবে সঞ্চয়পত্রে। এতেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক কমে যেতে পারে। নতুন করে ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর কর বাড়ানো হলে, প্রকৃতপক্ষে যা করা হয়েছে এবার, এ তো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! এমনিতেই সার্বিকভাবে আমানতের ওপর সুদ কম। ফলে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দু’ভাবেÑ একদিকে সুদ কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে কর। ফলে স্বভাবতই আমানতকারীরা শঙ্কিত। তারা কোথায় যাবেন? এর ফলে নতুন করে আর্থিক খাতে আবির্ভাব ঘটতে পারে ছায়া অর্থনীতির। বহুকথিত ও বিতর্কিত যুবক, ডেসটিনি, হলমার্ক ধরনের ভুঁইফোঁড় কোম্পানির পুনরাবির্ভাব ঘটতে পারে। ব্যাংকিং খাতে যেভাবে লেনদেন হওয়ার কথা ছিল তা হবে না; বরং কর আদায় ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা কমবে। তবে আশার কথা এই যে, বিস্তর সমালোচনার মুখে ব্যাংকে আমানতের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে খবরে প্রকাশ। ব্যাংকে যার এক লাখ টাকা আছে তিনি সম্পদশালী বলে বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তাও গ্রহণযোগ্য নয় বলেই অনেকে মনে করেন। বাস্তবতা হলো, ব্যাংকে আমানত কমছে গত কয়েক বছর ধরে। মূলত সুদের হার কমায় আমানতকারীরা এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হচ্ছেন না। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়ের বিনিময়ে প্রাপ্ত সুদ মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি হতে হয়। অন্যথায় টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমায় লোকসান গুনতে হয় সঞ্চয়কারীকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর গড় সুদ ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকে রাখা টাকার ক্রয়ক্ষমতা যতটুকু কমেছে, সেই পরিমাণ সুদও পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। অন্যদিকে রোজা ও ঈদকে উপলক্ষ করে যথেষ্ট বেড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। এতে স্বভাবতই সর্বস্তরের মানুষকে লোকসান তথা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এহেন অসহায় অবস্থা থেকে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও নিম্নবিত্তকে স্বস্তি দিতে হবে সরকারকে। দেশের অর্থনীতিকে সচল ও উন্নয়নের ধারায় ধরে রাখতে হবে সেটাই প্রত্যাশিত।
×