ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সংস্কৃতিমনস্ক জাতি গঠনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ জুন ২০১৭

সংস্কৃতিমনস্ক জাতি গঠনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতি চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু করছে সরকার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ বছর ১৮টি জেলায় ১০টি করে মোট ১৮০টি বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা গুলো হচ্ছে-গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা। এ কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে সেগুন বাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে বুধবার দুপুরে এক সভা হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নির্দিষ্ট জেলাগুলোর মন্ত্রণালয় কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক ও শিক্ষা কর্মকর্তাসহ জেলা কালচারাল কর্মকর্তা। সভায় জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলাসমূহের অনুকূলে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে জেলাগুলোর ১৮০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে একটি হারমোনিয়াম ও এক সেট তবলা সরবরাহ করা হবে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে সপ্তাহে এক দিন করে মাসে চার দিন করে সারা বছর সঙ্গীত, নৃত্য ও যন্ত্রানুষঙ্গবাদন প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মাধ্যমের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর জন্য নির্ধারিত সম্মানিতে স্থানীয়ভাবে একজন করে সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও একজন করে তবলাবাদক নিয়োগ দেয়া হবে। সভায় আরও জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে শুরু হতে যাওয়া আঠারোটি জেলার মাধ্যমিক স্কুলে এ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা সদরে ২টি করে মোট ৪টি বালক ও বালিকা বিদ্যালয় এবং পার্শ্ববর্তী ৩টি উপজেলার ২টি করে মোট ৬টি বালক ও বালিকা বিদ্যালয় নির্বাচন করা হবে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি আলোচনা করে বিদ্যালয়গুলো নির্বাচিত করবে। আর, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি বিদ্যালয়গুলোতে সাংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষক নিয়োগ করবে। নিয়োগকৃত প্রশিক্ষকগণ প্রতিটি বিদ্যালয়ে সপ্তাহে ১ দিন করে মাসে ৪ দিন সংস্কৃতি চর্চার যেমন-সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত ও অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। প্রশিক্ষকগণ সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য জেলা প্রশাসন একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করবে। এর পাশাপাশি এই আঠারোটি জেলার এই সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন, মতবিনিময়সহ সামগ্রিক অগ্রগতির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পেশ করবেন। সভায় আরও জানানো হয়, ‘সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম’ এর বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ পরিপত্র জারি করবে। পর্যায়ক্রমে আরও জেলা ও বিদ্যালয় সংযোজন করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সংস্কৃতি চর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে খুব ছোট পরিসরে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ধীরে ধীরে কার্যক্রমটি বৃহৎপরিসরে যাবে। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার দিকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের অধিকাংশই তরুণ এবং তারা প্রায় সকলেই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু তাদের ভেতরে কোন সাংস্কৃতিক শিক্ষা ছিল না। এমনকি তাদের ভেতর ছিল না সাংস্কৃতিক চেতনাও। আমরা কোন শিল্পী বা ট্যালেন্ট হান্ট করছি না। এ সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-সংস্কৃতিমনা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা। এর মধ্যে দিয়ে সকলেই যে শিল্পী হয়ে উঠবে তা নয়। আমরা চাচ্ছি-এর মধ্যে দিয়ে কেউ সঙ্গীতের ভাল শ্রোতা, কেউ সাহিত্যপ্রেমী, কেউ শিল্পপ্রেমী হয়ে গড়ে উঠুক। দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং সংস্কৃতিমনস্ক জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আমাদের এ কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, যে ছেলে বা মেয়ে কবিতা বা গানকে ধারণ করছে, সে অন্যায় করতে পারে না। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানবিক গুণাবলী ধারণ করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে। ছেলে-মেয়েরা সংস্কৃতি চর্চা করতে শিখুক। সাংস্কৃতিক চর্চা যেন তাদের কাছে আনন্দের এক বিষয় হয়ে ওঠে। প্রত্যেকের রুচিবোধ থেকে এগিয়ে নিতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। এর আগে সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, আমাদের নানা রকম সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আমরা সবাই আন্তরিক হলে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে এর কলেবর আরও প্রসারিত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সভা শেষে বিভিন্ন জেলার ১৮টি বিদ্যালয়ের জন্য জেলাগুলো থেকে আগত কর্মকর্তাদের হাতে ১টি হারমোনিয়াম ও ১ সেট তবলা তুলে দেয়া হয়। এবং জানানো হয়-অতিদ্রুত অন্যান্য বিদ্যালয়ে এই সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
×