ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবি সদর দফতরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বড় পর্দার মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন

সীমান্ত অপরাধ দমনে বিভিন্ন স্পটে সিসি ক্যামেরা

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ জুন ২০১৭

সীমান্ত অপরাধ দমনে বিভিন্ন স্পটে সিসি ক্যামেরা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দেশে চোরাচালান কমছে। সেই সঙ্গে কমেছে মানবপাচার ও চোরাচালানে ব্যবহৃত জালমুদ্রাকেন্দ্রিক নানা অপরাধ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চোরাচালান সংক্রান্ত চুক্তির দুই বছর পর এমন সফলতা এসেছে। চুক্তি মোতাবেক দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ভিত্তিতে চোরাকারবারি ও মানবপাচারকারীদের গ্রেফতারে উভয় দেশেই সাঁড়াশি অভিযান চলছে। চুক্তির ধারাবাহিকতায় সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির প্রত্যেক সদস্যকে প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বসানো হয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর সরঞ্জাম। এসব সরঞ্জামের মাধ্যমে সীমান্তের অনেক কিছুই ঢাকায় বসে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যেই যেসব স্পটে চোরাচালান ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসব জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি চলছে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের যৌথ টহল। বিজিবি সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সফরে দুই দেশের ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্যে ১৪ নম্বর চুক্তিটি হয় চোরাচালান ও জালমুদ্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। এ সংক্রান্ত তথ্য দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত আদান-প্রদান হচ্ছে। তথ্য মোতাবেক দুই দেশেই সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ধারাবাহিক অভিযানের ফলে চোরাচালান কমে এসেছে। চোরাচালানসহ সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ মে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি প্রযুক্তি নির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালু করেছে। সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিজিবি সদর দফতরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বড় পর্দার মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এমন সিস্টেম চালুর ফলে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি করা সহজ হবে। পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে বসেই সীমান্তের নানা বিষয় জানা যাবে। প্রয়োজন মোতাবেক নির্দেশনা দেয়া যাবে। সীমান্তের ওপর নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে। এই সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে প্রত্যেক বিজিবি সদস্যকে। সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা যেকোন ধরনের অসুবিধার কথা তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবি সদর দফতরকে অবহিত করতে পারবেন। পাশাপাশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টগুলো দেখা যাবে। যেকোন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হবে। যা সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বিজিবির যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সাইফুল আজম পারভেজ জানান, এমন সিস্টেমের ফলে বিজিবির সকল রিজিওন ও সেক্টরের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে যেকোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে। সীমান্তে থাকা বিওপি (বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট) ও আইসিপিগুলো থেকে মোবাইল ফোনের সংযোগের মাধ্যমে সীমান্তের ভিডিও সরাসরি দেখা যাবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সীমান্তের যেকোন পরিস্থিতি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। তথ্য আদান-প্রদান সহজ হবে। এই সিস্টেমের আওতায় থাকা সকল রিজিওন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপির যে কোন ঘটনার প্রতিবেদন ও তথ্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জমা হবে। স্কাইপি, ইমো, ভাইভার, হোয়াটসএ্যাপ ও ম্যাসেজিং প্লাটফরমের মাধ্যমে যেকোন ব্যক্তি ও গ্রুপের সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিষয়ে দ্রুত যোগাযোগ করা সহজ হবে। বিজিবির এই কর্মকর্তা জানান, এই সিস্টেমে স্যাটেলাইট ম্যাপ দেখানো এবং সে অনুযায়ী অপারেশন পরিচালনা করা যাবে। ভবিষ্যতে আধুনিক বর্ডার ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত সকল গেজেট এই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। সীমান্ত থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাবে। বিজিবির সকল ইউনিটের কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য ওই ওয়েব পেইজে আপলোড থাকবে। সকল রিজিওয়নের পৃথক ওয়েবসাইটগুলো বিজিবি ওয়েব পেইজে যুক্ত থাকবে। বিজিবির ওয়েব পেইজ থেকে জাতীয় ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করা যাবে। পাশাপাশি জাতীয় অনলাইন ফর্ম ও সেবাসমূহ ব্যবহার করা যাবে। প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত দেশের বর্ডার ম্যানেজমেন্টে যা যা থাকে, বিজিবিতে যাতে সেটা থাকে এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। উন্নত দেশের সীমান্তের সার্কুলার রোড থাকে। ২০৪১ সালের মধ্যে সীমান্তে সার্কুলার রোড করা সম্ভব হবে। সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালান ছাড়াও যেকোন ধরনের অপরাধ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। প্রযুক্তির কারণে সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে অস্ত্র, মাদক ও নারী শিশু পাচার হয়, সেসব পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করা আরও সহজ হবে। পয়েন্টগুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা ভিডিও দেখে সহজেই এ ধরনের অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যের সংখ্যা আট হাজার থেকে বাড়িয়ে পনেরো হাজার করার পরিকল্পনা চলছে। মিয়ানমার সীমান্ত আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করতে রামু রিজিওন গঠনের কাজ চলছে। সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষা করা সম্ভব হলে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও গতিশীল হবে। বিজিবি মহাপরিচালক বলছেন, দেশের সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে রাস্তাঘাট নির্মিত হলে প্রযুক্তির পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে সীমান্তের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করবেন। সীমান্তে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হলে, সীমান্তকেন্দ্রিক সব ধরনের দুর্নীতিও শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। জালমুদ্রার বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত দুই বছরে জালমুদ্রা কারবারিদের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গ্রেফতারের হারও আগের তুলনায় অনেক কম। যা জালমুদ্রার তৎপরতা কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুই বছরে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় দুই শ’ জালমুদ্রা কারবারি। যা আগের যেকোন বছরের তুলনায় অনেক কম। প্রতিমাসে জালমুদ্রা সংক্রান্ত ঘটনায় গ্রেফতারের হার গড়ে ১০ থেকে ১২ জন। যা আগে ছিল এর অন্তত পাঁচগুণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ থেকে হালনাগাদ জালনোট সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মামলা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ মামলাই ২০১৫ সালের আগে দায়েরকৃত। ২০১৫ সালের পর মামলা হয়েছে মাত্র প্রায় আড়াই শ’। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ টাস্কফোর্স জালমুদ্রার কারবার ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিং করছে। প্রতিটি ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নোটিস দেয়া আছে। জালমুদ্রা শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন ছাড়াও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জালমুদ্রায় জঙ্গী অর্থায়ন ও চোরাচালানসহ নানা বিষয়ে টাস্কফোর্সটি মনিটরিং করছে। এ বিষয়ে দুই দেশের নিয়মিত বৈঠক ও যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী জানিয়েছেন, দুই দেশের সদিচ্ছা আর উভয় দেশেই কম্বিং অপারেশন চলমান থাকায় জালমুদ্রার প্রবাহ কমে গেছে। জালমুদ্রা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একসঙ্গে কাজ করছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্তে সিংহভাগ চোরাচালানে বৈদেশিক জালমুদ্রা ব্যবহৃত হয়। এসব জালমুদ্রার অধিকাংশই পাকিস্তানে তৈরি। আকাশ ও স্থল সীমান্ত দিয়ে জালমুদ্রা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হলে, জালমুদ্রার প্রবাহ এমনিতেই কমে যাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জঙ্গী গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জালমুদ্রার প্রভাব কমে এসেছে। কারণ জালমুদ্রার তৈরিকারকদের অধিকাংশই জঙ্গী। জঙ্গী অর্র্থায়নে ব্যয় হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ আসে জালমুদ্রা ও চোরাচালান ব্যবসা থেকে। জঙ্গী গ্রেফতার এবং চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ ও ভারতে সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জঙ্গীবাদ বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জঙ্গীবাদ ভয়াবহ আকারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। বিজিবির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে বিজিবির অভিযানে প্রায় ৮৪২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য আটক হয়। গ্রেফতার হয় ১৮শ’ ১৪ চোরাকারবারি। চুক্তির পর ২০১৫ সালে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে প্রায় ৮১২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য আটক হয়। গ্রেফতার হয় ২৩শ’ ৬ চোরাকারবারি। আর ২০১৬ সালে অভিযানের পরিমাণ বাড়ানোর কারণে প্রায় ১১শ’ ১০ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য আটক হয়। গ্রেফতার হয় ২১শ’ ৮১ চোরাকারবারি। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫৪১ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য আটক হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৬৯২ চোরাকারবারি। ২০১৫ সালের প্রথমদিকে প্রায় ৩৪ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হলেও ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও চলতি বছরে কোন বিস্ফোরক উদ্ধার হয়নি। যদিও পিস্তল, রিভলভারের মতো বেশকিছু ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আটককৃত পণ্যের মধ্যে মাদকের পরিমাণ বেশি। এছাড়া স্বর্ণও রয়েছে। অভিযানে ২০১৪ সালে পাচারকালে ৮৫২ নারী ও ৩১৭ শিশু উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ২৬ পাচারকারী। ২০১৫ সালে ৩৮৫ নারী ও ১৪৭ শিশু উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১০ পাচারকারী। ২০১৬ সালে ১৯৮ নারী ও ৮১ শিশু উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৫ পাচারকারী। আর ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭১ নারী ও ৫৫ শিশু উদ্ধার হয়েছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযানের কারণে দিন দিন নারী ও শিশু পাচারের সংখ্যা কমে এসেছে। প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালুর ফলে দিন দিন নারী ও শিশু পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন।
×