ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটেনে আজ পার্লামেন্ট নির্বাচন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৮ জুন ২০১৭

ব্রিটেনে আজ পার্লামেন্ট নির্বাচন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন। এবার ১৪ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন ঘিরে বাঙালীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। স্বপ্নের দেশ লন্ডনের সঙ্গে বাঙালীদের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে ব্রিটেনের সঙ্গে সিলেটের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে বলেই মনে করেন লন্ডন প্রবাসী সিলেটী তথা তাদের এদেশীয় পোষ্যরা। ব্রিটেনের নির্বাচন নিয়ে সিলেটের প্রবাসী সংশ্লিষ্ট পরিবার পরিজনদের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা। প্রার্থী হয়েছেন আত্মীয়-পরিজন। চলছে দেশে-বিদেশে প্রচার। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে সিলেট থেকে ইতোমধ্যে অনেকেই ব্রিটেন ছুটে গেছেন। তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে বিশেষ করে বাঙালী কমিউনিটির কাছে প্রচার চালাচ্ছেন। নিজের প্রার্থীর বিজয়ের লক্ষ্যে যোগ দিচ্ছেন নানান অনুষ্ঠানে। সে সঙ্গে চলছে ফেসবুকে প্রচার। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের পক্ষেও প্রচার কাজে অংশ নিতে প্রবাসী বাংলদেশীরা ছুটে আসেন লন্ডন থেকে বিভিন্ন সময়ে। এ সংস্কৃতি বহু দিনের। এই যোগসূত্র ধরে দুই দেশের নির্বাচনেই উত্তাপ ছড়িয়ে থাকে পরস্পরের মধ্যে। ব্রিটেনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশীরা প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন দীর্ঘকাল থেকে। ক্রমশ তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছেলেদের পাশাপাশি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়েরা প্রবাসে তাদের নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাদের সাফল্যে যেমন তারা নিজেরা গর্বিত সেই সঙ্গে গর্ববোধ করে বাঙালী তথা বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে বাঙালী মেয়েরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশী মেয়ে রুশনারা আলি এমপি নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে পা রাখার গৌরব অর্জন করেন। ২০১০ সালে তিনি লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফা ১৫ সালেও তিনি সেখান থেকে জয়লাভ করেন। এ সময় তার সঙ্গে বাংলার আরও দুই কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপা হক এমপি নির্বাচত হন। এবার জয়লাভ তাকে হ্যাট্রিকের দিকে নিয়ে যাবে। নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে মেয়র কিংবা স্পীকার পদে দায়িত্ব পালন করা প্রথম বাঙালী নারী সাবিনা। সাবিনা আক্তার এ কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে স্পীকার হলেন। গত ১৭ মে তিনি কাউন্সিলের সাধারণ সভায় স্পীকার নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের জুন মাসে স্টেপনি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর সাবিনা গত এক বছর ডেপুটি স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেশ সুনাম অর্জন করেন। সাবিনা আক্তার প্রায় ২০ বছর ধরে লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। স্পীকার হিসেবে তাঁর মূল কাজ কাউন্সিলের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা এবং অধিবেশন পরিচালনা করা। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করা। সেই সঙ্গে ‘স্পীকার্স ডিনার’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের পছন্দমতো দাতব্য সংস্থার জন্য তহবিল যোগান দেবেন। পূর্ব লন্ডনে জন্ম নেয়া এই বাঙালী নারীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। সাবিনা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখনও অটুট। প্রায় প্রতিবছরই আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশ ঘুরে আসি। সাবিনার সঙ্গে ডেপুটি স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আরেক কাউন্সিলর আয়াছ মিয়া। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মোট ৪৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কাউন্সিলররা। তারা শুধু কাউন্সিলর হিসেবেই নিজেদের প্রমাণ করেননি, নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্পীকার, মেয়র ও ডেপুটি মেয়র হিসেবেও। বিলেতের স্থানীয় সরকারে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমন চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। তারা হলেন- সাবিনা আক্তার, সৈয়দ ফিরোজ গনি, জুনাব আলী ও আহমেদুল হক। এদের মধ্যে সাবিনা আক্তার, আহমেদুল হক, জুনাব আলী তিনজনই সিলেটের বাসিন্দা আর সৈয়দ ফিরোজ গনির বাড়ি চট্টগ্রামে। সুইন্ডনের ডেপুটি মেয়র জুনাব আলী: উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের উইটসশায়ারে সুইন্ডন বারা কাউন্সিল। এখানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বলা চলে হাতেগোনা। গত ১০ বছরে টানা তিনবার এই কাউন্সিলের সেন্ট্রাল ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন জুনাব আলী। জুনাব আলীর জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নে। ১৯৭৪ সালে মাত্র চার বছর বয়সে তিনি মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি লেবার পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত। স্যান্ডওয়েলের মেয়র আহমেদুল হক : লন্ডনের বাইরের কোন কাউন্সিলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম কোন মেয়র হলেন আহমেদুল হক। ১৯ মে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ড বিভাগের স্যান্ডওয়েল মেট্রোপলিটান বারা কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা তিনি স্থানীয় ট্রিপটন গ্রিন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ১৯৩২ সালে সিলেটের বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়নের শাবাজপুর গ্রামে আহমেদুল হকের জন্ম। ১৯৬৩ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। লেবার পার্টির সক্রিয় সদস্য ১৯৬৪ সাল থেকে। এবং চট্টগ্রামের সন্তান সৈয়দ ফিরোজ গনি বার্কিং এ্যান্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলের ‘চেয়ার অব দ্য এ্যাসেম্বলি’র দায়িত্ব পালন করছেন। ৬ লক্ষাধিক বাংলাদেশীর বসবাস রয়েছে লন্ডনে। এদের মধ্যে ৭০% বাস করেন বৃহত্তর লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে রয়েছে দুটি নির্বাচনী আসন। বেথনাল গ্রিন এ্যান্ড বো এবং পপলার এ্যান্ড লাইমহাউস। দুটি আসনকেই লেবার পার্টির নিরাপদ আসন বলে বিবেচনা করা হয়। বহু কাল থেকে এই এলাকায় বাংলদেশীদের বসবাস বলে পরিচিত টাওয়ার হ্যামলেটসে জনসংখ্যার অনুপাতে ৩২% বাংলাদেশী এবং ৩১% শ্বেতাঙ্গ। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশী ভোটাররা ১৭টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে রয়েছেন। মধ্য ইংল্যান্ডের একটি বড় শহর বার্মিংহামে ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ৩৮,০০০। এই শহরের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশিরভাগ বাংলাদেশীর বাস মূলত অ্যাস্টন, লোজেলস এ্যান্ড ইস্ট হ্যান্ডসওয়ার্থ এবং স্পার্কব্রুক এলাকায়। ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর ওল্ডহ্যাম। ব্রিটেনের সবচেয়ে পুরনো বাংলাদেশী কমিউনিটির বসবাস এই শহরে। ১৯৬০-এর দশকে মূলত সিলেটের বিশ্বনাথ এবং নবীগঞ্জ থেকে ইমিগ্র্যান্টরা এসে কোল্ডহার্স্ট ওয়ার্ডে বসবাস শুরু করেন। ওয়েস্টউড এলাকার ছয়টি সড়ক একসময় ‘বাংলা পাড়া’ নামে পরিচিতি পায়। এটি ওয়েস্ট ওল্ডহ্যাম এ্যান্ড রয়টন নির্বাচনী আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন বলেই বর্ণনা করা হয়। ইংল্যান্ডের পূর্ব দিকে বেডফোর্ডশায়ার অঞ্চলের প্রধান শহর লুটন। এখানে প্রায় ২৭০০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশীর বাস। লুটনে দুটি নির্বাচনী আসন রয়েছে লুটন নর্থ এবং লুটন সাউথ। দুটিই বিরোধীদল লেবার পার্টির শক্ত ঘাঁটি। এর পেছনে একটা বড় কারণ হলো বাংলাদেশীসহ ইমিগ্র্যান্টদের একটা বড় অংশ এখানকার ভোটার। এবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লড়ছেন ১৪ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এদের ৮ জন লড়ছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে। ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়ছেন ১ জন করে। (আরও খবর পৃষ্ঠা-৫)
×