ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার সঙ্কটে বিপাকে এয়ারলাইন্স, দুর্ভোগ যাত্রীদের

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৮ জুন ২০১৭

কাতার সঙ্কটে বিপাকে এয়ারলাইন্স, দুর্ভোগ যাত্রীদের

আজাদ সুলায়মান ॥ হঠাৎ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে ঢাকা থেকে কাতারগামী এয়ারলাইন্সগুলো। এ দুটো দেশের আকাশপথে আংশিক পরিবর্তন আনায় ভ্রমণের সময়সীমা বেড়েছে আধাঘণ্টা। কাতার সঙ্কটের দরুন ঢাকা থেকে কাতারগামী কয়েকটি বিদেশী এয়ারলাইন্সও তাদের কার্যক্রম আপাতত গুটিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী যাত্রীদেরও ভ্রমণ সময়সীমা বেড়েছে কয়েক ঘণ্টা। বাংলাদেশের পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু জনকণ্ঠকে বলেছেন, আপাতত কয়েকটি দিন হয়ত ইরান ঘুরে আসায় কিছুটা সময় লাগছে। এ সমস্যা বেশিদিন থাকবে না। ইতোমধ্যে এ সঙ্কট নিয়ে কুয়েত দেন-দরবার শুরু করেছে সৌদি আরবের সঙ্গে। কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা দেশগুলো হচ্ছে: সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। কাতার যাতায়াতকারী কোন এয়ারলাইন্সই এ ছয়টি দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সম্পর্ক নেই। সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চমৎকার। বর্তমানেও এ সম্পর্ক খুবই স্বাভাবিক রয়েছে। আমি মনে করি না এজন্য বিমান কিংবা অন্য কোন এয়ারলাইন্স বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে। এদিকে ঢাকা থেকে কাতারগামী ফ্লাইটে টিকেট বিক্রি বন্ধও রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কয়েকটি এয়ারলাইন্স। যারা আগে থেকেই এসব এয়ারলাইন্সের টিকেট কিনেছিলেন সেসব যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। ঢাকার এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে পারছে না এভিয়েশন খাত। সৌদির অনুসরণে একই পদক্ষেপ নিয়েছে মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে এই ছয় দেশ থেকে কাতারগামী সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে কাতার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে কাতারগামী যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে ওই ৬টি দেশের এয়ারলাইন্সগুলো। বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে কাতারের যাত্রী সব থেকে বেশি পরিবহন করে ৮টি এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া ইতিমধ্যেই কাতারগামী সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেছেন, ঢাকা থেকে কাতার শুধু তার নিজের দেশেই যাত্রী আনা-নেয়া করছে না। এই এয়ারলাইন্সটি ঢাকা থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার যাত্রীও বহন করছে। যেগুলো ঢাকা থেকে দোহা হয়ে অনওয়ার্ড অন্য দেশগুলোতে যাতায়াত করত। এখন ওইসব ফ্লাইট হয়ত বন্ধ হবে না। তবে ভ্রমণ সময় বেড়ে যাবে। যেমন নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই কাতার থেকে ঢাকায় আসার সময় বিপাকে পড়ে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স। কাতার থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ৬টি দেশের আকাশসীমার ওপর দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় রিজেন্টকে রি-রোট হিসেবে ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে হয়। এজন্য দেন দরবার করে প্রথম দিন ৬ ঘণ্টার মতো বিলম্বে ঢাকায় ফিরে ওই ফ্লাইট। এখন সেটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন ইরান হয়ে ঘুরে আসাতে প্রতিটি ফ্লাইটে আধাঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। সৌদির নিষেধাজ্ঞার পর আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে ঢাকা-দোহা রুটে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট। বিমান ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ঢাকা-দোহা রুটে সরাসরি ফ্লাইট আগের সূচী অনুযায়ী চলছে। তবে ৫টি এয়ারলাইন্স কাতারগামী যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার চাপ বেড়েছে এসব এয়ারলাইন্সের ওপর। সিভিল এভিয়েশনের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে বলেছেন, ঢাকা থেকে কাতারগামী সব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটকেই রি রোট করতে হয়েছে। নতুন রুট ইরানের ওপর দিয়ে আসাতে এখন সময় লাগছে আধাঘণ্টা বেশি। এছাড়া আর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। যদিও ঢাকা থেকে কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্স তাদের অপারেশন সাময়িক স্থগিত রেখেছে। বিমানের জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, কয়েকটি এয়ারলাইন্স কাতারগামী যাত্রীদের নিতে অনীহা প্রকাশ করায় যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি কাতার এয়ারওয়েজের টিকেট কেনা যাত্রীরাও ভোগান্তির বাইরে নয়। কাতারে ট্রানজিট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য গন্তব্যে যেতে চাওয়া যাত্রীদের আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। দোহারগামী যাত্রীরা চাইলে এখন বিমানকে বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স সংস্থাটি ঢাকা থেকে ৪১৯ আসনের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজে সরাসরি দোহায় সপ্তাহে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এখন হয়ত এ ফ্লাইটের ওপর কিছুটা চাপ বাড়বে। এদিকে ঢাকা-মাস্কাট রুটের ফ্লাইট বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট রয়েছে ওমানের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ওমান এয়ারের। সংখ্যায় কম হলেও এয়ারলাইন্সটির মাস্কটে ট্রানজিট দিয়ে দোহারগামী বাংলাদেশী যাত্রী পরিবহন করে। ওমান এয়ার সূত্র জাানিয়েছে, কাতারে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে। তবে তাদের খুব কম অংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে কাতারগামী যাত্রীর সংখ্যাও কম। এ কারণে কাতারগামী যাত্রী চাহিদার প্রভাব ও মান এয়ারের চট্টগ্রাম মাস্কাট রুটে এখনও পড়েনি। ভবিষ্যতে সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কাও নেই।
×