ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাজার

বাহারি রং ডিজাইনের পোশাক, সরগরম কেরানীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৮ জুন ২০১৭

বাহারি রং ডিজাইনের পোশাক, সরগরম কেরানীগঞ্জ

রহিম শেখ, কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরে ॥ দিন-রাত কর্মব্যস্ত কারিগররা। বিরামহীন চলছে সেলাই মেশিন। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রিপিসসহ বাহারি সব পোশাক। কারখানার ভেতরের এমন পরিবেশ দেখে বাইরে এলে চোখে পড়বে বাহারি সব পোশাকের দোকান। বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীর এমন দৃশ্য এখন চোখে পড়ার মতো। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসছেন। ঘুরে ঘুরে কিনছেন শেষ মুহূর্তের পছন্দসই পোশাক। শুধু মার্কেট কিংবা দোকান নয়, ফুটপাথও বাদ যায়নি বেচাকেনার এই আয়োজনে। রমজানের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এই বেচাকেনার হাট সরগরম থাকবে ঈদের চাঁদরাত পর্যন্ত। তবে পাইকারদের আনাগোনা কমে যাবে ২৫ রমজানের পর। জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ পোশাক তৈরির পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর ও শুভাঢ্যা এখন সারাদেশের ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর। পোশাক তৈরির পাইকারি বাজার হওয়ার কারণে এ এলাকার বাজার জমতে শুরু করে শব-ই-বরাতের পর থেকেই। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ শতাংশ বেচাবিক্রি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। আগামী ২৫ রমজান পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি ও চাঁদরাত পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার দশেক কারখানা এবং দুই হাজারের মতো শোরুম রয়েছে। এসব কারখানা ও শোরুমে অন্তত দুই লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার নারী শ্রমিক রয়েছেন। অবশ্য এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মফস্বল শহরগুলোর বিপণিবিতান তো বটেই, রাজধানীর অভিজাত শপিংমলগুলোতেও এখন বিদেশী কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে উঠছে এখানকার তৈরি পোশাক। পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, স্যুট-ব্লেজারসহ সব ধরনের শীতবস্ত্র, শিশুদের কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্ট আইটেম পাওয়া গেলেও এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টপল্লী বিশেষভাবে বিখ্যাত জিন্স ও গেভাডিন প্যান্ট ও ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবির জন্য। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে ছেলেদের প্যান্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে বাহুবলী, রইসসহ বাহারি সব নামের পোশাক। এছাড়া গেঞ্জির মধ্যে রয়েছে কেএনজি, গিফিনি, জিকিউ, সিকেসহ অন্যান্য ফ্যাশনাবল গেঞ্জি ও বাহারি ডিজাইনের সব পাঞ্জাবি। পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে বাহরি ডিজাইনের সব ধরনের পোশাক। এ বছর মেয়েদের পোশাকেও বাহারি সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। কেরানীগঞ্জের জিলা পরিষদ মার্কেট, তানাকা মার্কেট, এস আলম সুপার মার্কেট, নুর সুপার মার্কেট, চৌধুরী মার্কেট, আলম সুপার মার্কেট, ইসলাম প্লাজা, আনোয়ার সুপার মার্কেট, কদমতলী গোলচত্বর এলাকার লায়ন সুপার মার্কেট, জিঞ্জিরার ফ্যামিলি শপিং মলসহ বেশ কয়েকটি পাইকারি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদে স্বাভাবিক সময়ের বেচাকেনার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ মার্কেটের জিতু গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মোঃ জানে আলম বলেন, সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে জিন্সের ঝুট ফেব্রিক্স সংগ্রহ করে এনে আমাদের কাছে বিক্রি করেন স্থানীয় সরবরাহকারীরা। আমরা মনপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঝুট সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রথমে সাইজ, মান ও রং অনুযায়ী ভাগ করি। তারপর সেগুলো বিদেশী প্যান্টের আদলে কেটে দক্ষ দর্জিদের দিয়ে সেলাই করে আনি। সেলাই শেষে প্রয়োজনে সেগুলোকে আবার রং করানো হয়। তিনি বলেন, আজকাল কেউ কেউ আবার সরাসরি বিদেশ থেকেও এক্সসরিজ আমদানি করছেন। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অবশ্য পৃথিবীর নামী-দামী ব্র্যান্ডেরও কপি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে গুটিকয়েক লোকজন গোপনে এমনটা করে থাকতে পারেন বলে জানালেন মমতাজ ফ্যাশন প্লাসের মালিক নজরুল ইসলাম। একতা সুপার মার্কেটের মালিক ও আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজি মোঃ আসাদ খান জানান, মূলত শীত ও ঈদ মৌসুমই আমাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম। তাই পবিত্র ঈদ-উল ফিতর সামনে রেখে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে এখানকার প্রায় ১০ সহস্রাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রোজার মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে তাদের এ ব্যস্ত সময়। পূর্ব আগানগর খাজা-সুপার মার্কেটের ওমর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোঃ নুরুল আমীন লিটন জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের মার্কেট এটি। গত রোজার ও কোরবানির ঈদে দেশে কোন রকম রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকার কারণে তাদের ব্যবসা মোটামুটি ভাল হয়েছে। এ বছরও বিক্রি ভাল বলে তিনি জানান। নুরুল আমীন জানান, বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুত সমস্যার কারণে তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু কেরানীগঞ্জে এখন আর কোন বিদ্যুত সমস্যা নেই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এ বছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম বলেন, এখানে কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। নেই কোন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। নৌ-পথ ও সড়ক পথে দেশের যে কোন অঞ্চলে সহজে যোগাযোগ এবং যানজটমুক্ত এলাকা হওয়ায় দেশের সব এলাকার পাইকাররা মন খুলে পছন্দ মাফিক কেনাকাটার জন্য এখানে আসছেন ।
×