ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলায় পারদর্শী বিএনপি কী আশার বাণী শোনাবে?

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৮ জুন ২০১৭

গ্রেনেড হামলায় পারদর্শী বিএনপি কী আশার বাণী শোনাবে?

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ‘রূপকল্প-২০৩০’ ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছেন, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য হত্যাসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যারা পারদর্শী তারা আবার জনগণকে কি আশার বাণী শোনাবে? তাদের রূপকল্প মূলত আমাদের (আওয়ামী লীগ) রূপকল্প-২০২১ এরই প্রতিচ্ছবি। রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন উপযুক্ত কৌশল, যোগ্য নেতৃত্ব, সুসংগঠিত দল- সর্বোপরি দেশবাসীর আস্থা। এর জন্য আগে তাদের (বিএনপি) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যে, অতীতের নেতিবাচক রাজনীতি, অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতায় তারা আর ফিরে যাবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি তাদের রূপকল্প-২০৩০- এ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে তার অধিকাংশই আমাদের সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে এবং আগামী অর্থবছরে আমরা বাকি কাজগুলো শেষ করব। তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে আমরা জাতিকে আমাদের এই মেয়াদের মধ্যেই রূপকল্প-২০৪১ উপহার দেব। শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্পের নামে বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় গেলে তাঁরা কি কি করবেন তার দীর্ঘ ফর্দ দেয়া হলেও কীভাবে কোন পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে অর্থায়ন করা হবে- তা স্পষ্ট নয়। এটি অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ও গণভোট পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আরও যেসব মৌল পরিবর্তন তারা আনতে চাচ্ছেন, তার জন্য তো সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে বিএনপি তাদের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, জঙ্গী পৃষ্ঠপোষকতার যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এরপর ক্ষমতায় বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াওসহ অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা দিয়ে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছেন তা কাটিয়ে উঠে এতটা জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা বলাই বাহুল্য। সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু একটি রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে, সে কারণে আমাদের দৃষ্টি কেবল একটি বছরে সীমাবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১-তে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে। খুনী মোশতাক ও জিয়াই ১৫ আগস্টের হত্যাকারী সরকারী দলের এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের জন্য খুনী মোশতাক ও জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে বলেন, খুনী মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট হত্যাকা- চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা দেয়। আমি ও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। খুনী জিয়া আমাকে ও আমার বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। ওই সময় সমগ্র বাংলাদেশকেই কয়েদখানায় পরিণত করা হয়। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এসে আমি যখন ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইদের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগও দেয়া হয়নি। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমার পথ রুদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার ওপর বসে পড়ি এবং আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু যে ঘাতকরা হত্যাকা- করেছে তাই না, তারা বাড়িতে লুটপাটও করেছে। ১৯৮১ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ঐ বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোন মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকেরও অবাধে চলাচলের অধিকার থাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে সালে দেশে আসার পর আমাকে ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে এক ঘণ্টার নোটিসে বাড়িটি আমাকে তাড়াহুড়ো করে হস্তান্তর করা হয়। খুনী, ষড়যন্ত্রকারীরা জনমানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আর আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ঈদে নিরাপদ যাতায়াতে ২৯ পদক্ষেপ তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে মহাসড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে যাতায়াত নিরাপদ করার লক্ষ্যে ২৯ দফা নির্দেশনা সংবলিত পত্র জারি করা হয়েছে। ২৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মহাসড়ক রক্ষাণবেক্ষণ ও মেরামত, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কসমূহ যানজট মুক্ত রাখা, বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা, সিএনজি স্টেশন সার্বক্ষণিক চালু রাখা, ২২ জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ রাখা, বিআরটিসির স্পেশাল ঈদ সার্ভিস, ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি, ঈদ উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন দিনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বদ্ধ দেয়া ও খোলা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অনভিজ্ঞ গাড়ি চালক দ্বারা মহাসড়কে মোটরযান না চালানো এবং কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন। তিনি জানান, রমজান মাসে জনগণের নিরাপত্তার জন্য বাজার, শপিং মল, বিপণিবিতান, মার্কেট, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি, নাশকতামূলক কর্মকা- প্রতিরোধসহ নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিবারাত্রি পুলিশ টহল এবং নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে জনগণ যাতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে, সড়ক পথের যেসব স্থানে যানজট সৃষ্টি হতে পারে এবং যেসব স্থান যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী যেসব স্থান মেরামত করার জন্য ইতোমধ্যে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রামপাল নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, একটি মহল ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করে এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ৬টি দিক বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তা হলো- প্রকল্পের জন্য সুবিধাজনক ও প্রয়োজনীয় জমির প্রাপ্যতা, নদীর নাব্য, কয়লা পরিবহনের সুবিধাদি, প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির উৎস/ যোগান, বিদ্যুত সঞ্চালন সুবিধা, ঘন জনবসতি পরিহার এবং অভয়ারণ্য থেকে নিরাপদ দূরত্ব অবস্থান ইত্যাদি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩টি সাইটের মধ্যে রামপাল পরিবেশগত এবং অন্যান্য সার্বিক দিক দিয়ে সবচেয়ে সুবিধাজনক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রামপালকে বেছে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্তঃসীমা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রামপালে যে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে তা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি বিদ্যুত কেন্দ্র। এই বিদ্যুত কেন্দ্রে ৯০২ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে, যার দ্বারা বিদ্যুত কেন্দ্র হতে পরিশোধিত বায়ু নির্গত হবে। ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রের আশপাশের এলাকাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত মিটিগেশন মেজার্স যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। তাছাড়া সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল এসেসমেন্ট (এসইএ) পরিচালনার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
×