ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় সংখ্যালঘু পরিবারের বিপুলসম্পত্তি জবরদখলের পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ৮ জুন ২০১৭

খুলনায় সংখ্যালঘু পরিবারের বিপুলসম্পত্তি জবরদখলের পাঁয়তারা

বিশষ প্রতিনিধি ॥ খুলনায় সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি (উল্লাসিনী সিনেমা হলসহ তাদের সকল সম্পত্তি) জবরদখলের পাঁয়তারা করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। প্রভাবশালী চক্রটি এই জমির একমাত্র ওয়ারিশ পরীক্ষিৎ নাগকে তুলে নিয়ে তা লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে এবং তা অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রেক্ষিতে পরীক্ষিৎ খুলনা সদর থাকায় একটি জিডি করেছেন। খুলনা সদর থানা জিডি নং-১১৭, তাং-০৩-০৬-১৭। এর আগে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৃথকভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পরীক্ষিৎ নাগ খুলনার উল্লাসিনী সিনেমা হলসহ বিশাল সম্পত্তির মালিক, যার নাম ‘এস্টেট অব লেট প্রমথ নাথ দাস’। তার পৈত্রিক এই সম্পত্তিতে একটি উইল প্রবেট মামলায় খুলনার আইনজীবী কাজী বাদশা মিয়া, সরদার আনিছুর রহমান পপলু, জিপি বিজন কৃষ্ণ ম-ল ও অশোক কুমার সাহাকে এক্সিকিউটর (এ্যাটর্নি) নিয়োগ করে খুলনার আদালত। এক্সিকিউটর নিয়োগ পাওয়ার পর এই আইনজীবীরা তা নিজেদের দখলে নেন। পরে হাইকোর্ট এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু তারা এই সম্পত্তি হাতছাড়া করতে নারাজ। তারা হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ এই জমি জবর দখলে রাখতে বদ্ধপরিকর। এমনকি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ এই সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী পরীক্ষিৎ নাগকে ইতোপূর্বে উল্লাসিনী সিনেমা হলের নিজস্ব অফিস থেকে তুলে নিয়ে যায় কটি প্রভাবশালী মহলের ভাড়াটিয়া লোকজন। বাজারের মধ্যে শত শত লোকের সামনে দিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে এবং কেয়ার টেকারকে তুলে শামীম স্কোয়ারে বিজন কৃষ্ণ ম-লের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে এবং তাকে এই সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি তাকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সম্প্রতি তারা পরীক্ষিৎকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি প্রদান করছে বলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান। এজন্য বিগত ০৩-০৬-১৭ তারিখে খুলনা সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছে, যার নম্বর-১১৭। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি না দেখার ভান করে রয়েছে। এদিকে খুলনা বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজী বাদশা মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, বিপুল পরিমাণ এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মামলা চলছে। খুলনা জেলা জজ থেকে আমাদের এ্যাটর্নি নিয়োগ করে। আমরা এর থেকে ভাড়া উঠিয়ে তা সরকারের কোষাগারে জনা দেই। এর থেকে আমরা প্রত্যেকে মাসে দুই হাজার করে টাকা পাই। কিন্তু হাইকোর্ট ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা জজের এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়ার পরও কেন ভাড়া উঠাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে এমন কোন নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি। তবে তিনি বলেন, নিয়ে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত হয়েছে। আমরা এ ঝামেলায় থাকতে চাই না। আগামী সপ্তাহে আদালতে লিখিতভাবে জানিয়ে দেব আমরা এ সম্পর্কিত এ্যাটর্নি আর থাকতে চাই না। কী পরিমাণ সম্পত্তি আপনাদের দখলে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক এভাবে বলা যাবে না। তবে তাদের অনেক সম্পত্তি। অনেক দোকান। উল্লাসিনী সিনেমা হল, স্বর্ণ কুঠির, বড়বাজার এমনকি রূপসার নতুন বাজারেও এদের সম্পত্তি রয়েছে। এর থেকে কিছু আমাদের দখলে আছে। আর কিছু আছে পরীক্ষিতের দখলে। আপনারা পরীক্ষিতের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে আপনাদের নামে সে কেন জিডি করেছে এর জবাবে তিনি বলেন, জিডি করেছে কিনা তা আমি জানি না।
×