ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বৈধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি

২০ হাজার কর্মীকে বাহরাইন ছেড়ে ফিরে আসতে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৮ জুন ২০১৭

২০ হাজার কর্মীকে বাহরাইন ছেড়ে ফিরে আসতে হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ বাহরাইনে ২০ হাজারের মতো কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন তাদের দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোন পথ নেই। পুলিশের হাতে আটক হলে জেলহাজতে যেতে হবে। অবৈধদের বৈধ করার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছিল। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এখন তাদের আটক করার জন্য প্রতিনিয়ত পুলিশী অভিযান চলছে। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে বাহরাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। এর আগে মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দুই দফা সময় বাড়িয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এখন আর কোন সময় দেয়া হবে না বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বহু কর্মী দালালের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করেছিলেন। অনেকে আবার নিজেরাই বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইসব আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে বিপুল সংখ্যক কর্মীর ভাগ্য এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তাদের দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বর্তমানে দেশটিতে ৫৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশটির ‘লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি’ (এলএমআরএ) অবৈধদের বৈধ করার দুই দফা সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধ শ্রমবাজার বাহরাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্যও অনুরোধ জানায়। দীর্ঘ চার বছর ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই বাজারটি দেশের জনশক্তির জন্য একটি বড় বাজার। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএর সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধি দল দেশে এসেছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কয়েক দফা দেশটি সফর করেছে। এরপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সঙ্গে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখায়। তবে তারা কর্মী নিয়োগে বেশকিছু শর্ত দেয়। এই শর্তপূরণ করার পর কর্মী নেবে বলে জানায়। প্রথমত, সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করেছে। এতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারেনি। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করেছেন। যার কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়ছে। দরিদ্র মানুষও প্রতারণার শিকার হবে না। এলএমআরএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুলা আল আবছি সম্প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাটি অক্টোবর থেকে শুরু করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে না পারলে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেন। পরে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত আরও এক দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে বহু কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদন করতে পারেননি। নির্ধারিত সময়ে যারা বৈধ হতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
×