ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমবাজারে নারী-পুরুষ

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৮ জুন ২০১৭

শ্রমবাজারে নারী-পুরুষ

আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারী শ্রমিককে মজুরি বৈষম্যে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কোনভাবে সম্ভব নয়। সুদূর অতীতে নারীরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। গৃহ কাজে অংশ গ্রহণ ছাড়া পরিবারের আর্থিক অবস্থা উন্নত করার কোন সুযোগ তাদের ছিল না। সমাজে তাদের অবদান রাখার বিষয়টি ছিল যেন কল্পনার অতীত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নারীরা এখন পরিবারের দৈনন্দিন কর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন অবদান রাখছেন। দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সেক্টর তৈরি পোশাক খাত যার প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীই হচ্ছেন নারী। পাশাপাশি কৃষির সঙ্গে যুক্ত নারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহন দিন দিন বাড়ছে। তাহলে কেন নারী পুরুষ মজুরি বৈষম্য? দেশে এখনও মজুরি বৈষমের শিকারনারীরা। নারীরা সবজি ক্ষেত সহ কৃষিকাজে দক্ষতার সঙ্গে চাষাবাদের কাজ করে থাকে। কাজের গুণগত মানও ভাল। কিন্তু নারী বলে পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পাবেÑ এটা তো ন্যায়সঙ্গত নয়। এ ব্যাপারে জমির মালিকের সঙ্গে তাদের দর কষাকষি করলে কাজ থেকে তাদের বাদ দেওয়া হবে এমন হুমকি দেয়া হয়। ফলে তারা স্বল্প মজুিরতেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন সমতল ও উঁচু ভূমিতে বর্ষা মৌসুমে লাউ, পুইশাক, মূলা, টমেটো, শসা, বেগুন, ঝিঙ্গা, লালশাক সহ বিভিন্ন সবজির বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্থানীয় কৃষকরা চাষাবাদ করে থাকেন। এ জন্য তাদের প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সাধারণত নারী শ্রমিকরা বিরতিহীনভাবে এইসব কাজে যুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকদের সময়র অনেকটা অপচয় হয়ে থাকে বিড়ি তামাক সেবনের কারণে। এ মৌসুমে নারী শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা থাকে। এসব নারী শ্রমিকের মজুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হারে দেওয়া হয়। নারী শ্রমিকরা শ্রম অনুযায়ী তারা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। এ স্বল্প মজুরি দিয়ে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সহ উৎপাদন কাজ, নির্মাণ কাজে ভূমিকা রাখলেও নারী শ্রমিকদের যেমন নেই ন্যায্য মজুরি, তেমনি নেই প্রান্তিক সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা। শ্রমবাজারে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজ পিছিয়ে থাকবে। এসব প্রান্তিক নারীকে যদি আয়বর্ধক এবং আত্মকর্মসংস্থানের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যায় , তাহলে তাদের নিজেদের ভাগ্যের দুয়ার যেমন খুলবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগও সৃষ্টি হবে। মাধবপুর, হবিগঞ্জ থেকে
×