ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এক কাজে দু’রকম পারিশ্রমিক!

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ জুন ২০১৭

এক কাজে দু’রকম পারিশ্রমিক!

নীহার আফরিন বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে শ্রমিক বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা অর্থের বিনিময়ে কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরি কিংবা ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত হন। তবে যারা প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত আছেন তারা উক্ত আইনের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় শ্রমিক হচ্ছেন সে সব খেটে খাওয়া মানুষ যারা কৃষিক্ষেত্রে কিংবা উৎপাদন কিংবা নির্মাণ শিল্পে নিযুক্ত আছেন, শ্রমদান করছেন। অন্যদিকে উক্ত আইনে বলা আছে একজন শ্রমিক তার কাজের জন্য যে পারিশ্রমিক পায় তাই মজুরী। উক্ত আইনের একাদশ অধ্যায় ধারা ১৩৮ থেকে ১৪৯ বলা আছে মজুরী নির্ধারণের কথা। যেখানে স্পষ্ট করে অবশ্য বলা নেই একজন শ্রমিকের নূন্যতম মজুরী কত হতে পারে! তবে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে রানা-প্লাজা ট্রাজেডির পর দেখা যায় একটা ন্যূনতম বেতন স্কেল প্রদান করা হয়েছে পোশাক শিল্পখাতে। তবু সে বেতনে শ্রমিক অসন্তোষের কথা শোনা যায় মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গেলে। ইউনিভার্সিটির দলগত এক কাজের প্রয়োজনে বেশ কিছুকাল আগে গিয়েছিলাম আশুলিয়া ও টঙ্গীর কিছু গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে। আমাদের হাতে ছিলো দুইশত প্রশ্নের একটি তালিকা, যেখানে শেষ তিনটি প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিলোÑ যা বেতন পান তাতে কি আপনি সন্তুুষ্ট? তারা মলিন হাসিতে উত্তরে বলেন, ‘আফা যা বেতন দেয় ঘর ভাড়া আর পোলাপাইনের খরচে চলা যায় না। জিনিসপত্রের দাম তো অনেক।’ গার্মেন্টের বাইরে ঠিকাদার কিংবা প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজ ইচ্ছায় নির্ধারণ করেন একজন শ্রমিকের বেতন। তবে সেখানেও থাকে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে চলে আসছে। একুশ শতাব্দীতেও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য এমন: বেটি মাইনষে কাম করে পুরুষের থাইক্যা কম। তাই তাগো বেতনও হইবো কম! এই অনিয়ম অনুসারে যেখানে একজন ইটভাটার পুরুষ শ্রমিক মজুরি পায় দৈনিক পাঁচশত টাকা, নারীর বেলায় অর্ধেকে নেমে তা হয় আড়াইশ। এক গবেষণায় দেখা যায় গ্রামে ৭২ শতাংশ নারী অবৈতনিক শ্রম দেন তার পরিবারকে। আর ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী শ্রম দেন কৃষিখাতে। যেখানে তাদের বেতন পুরুষের এক তৃতীয়াংশ মাত্র। অথচ দেখা যায় একজন নারী যে সময় থেকে কাজ শুরু করেন, একজন পুরুষও ঠিক একই সময় থেকে কাজ করেন। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে একজন নারী তার ঘর-সংসার সামলিয়ে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চাইতে বেশি কাজ করে থাকেন। দেশের অর্থনীতি যদি হয় সচল গাড়ি, আর নারী-পুরুষকে সে গাড়ির দুটি চাকার সাথে তুলনা করা হয়। তাহলে নারীপুরষের মজুরী বৈষম্য বহাল থাকলে গাড়ির একটি চাকাই নিরুদ্যম হয়ে পড়তে পারে। সাউথ-ইস্ট-ইউনিভার্সিটি, ঢাকা থেকে
×