ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৮ জুন ২০১৭

কাতার প্রসঙ্গ

কাতারের সঙ্গে ৭টি মুসলিম দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি অনেকটা আকস্মিক বলতে হবে। এই সাতটি দেশের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, মালদ্বীপ ও লিবিয়া সরকারের একটি অংশ। এই তালিকায় আগামীতে যদি আরও কয়েকটি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা, গোটা মুসলিম বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধিসহ নানা কারণে সৌদি আরবের প্রভাব অপরিসীম। সম্প্রতি সৌদি সরকারের নেতৃত্বে ৪১টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের একটি সামরিক জোটও গঠিত হয়েছে, যাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। যা হোক, কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হিসেবে ৭টি দেশ যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। দেশটি নাকি মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্যান্য দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে আইএস, আল কায়েদাসহ জঙ্গী দলগুলোকে সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। ইরানের সঙ্গে মাখামাখির অভিযোগও আছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের মদদদানের কারণে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। কাতারের এই সমর্থন চলে আসছে ২০১১ সালের ‘আরব বসন্তের’ সময় থেকেই। কাতারের আমিরের ফেসবুকের মন্তব্য থেকেও নাকি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিষয়টি। তদুপরি কাতারের টিভি চ্যানেল আলজাজিরা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের খবরাখবর প্রচার করছে, তাতেও আপত্তি ও অসন্তুষ্টি রয়েছে সৌদি আরব, মিসর এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে সৌদি আরবের সঙ্গে ১১০ বিলিয়ন ডলারের একটি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়। তখন সেখানে ৫০টি মুসলিম দেশসহ সরকার প্রধানের একটি শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিটের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় রাজনীতির নতুন সমীকরণ, যার সম্ভবত আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো কাতারের সঙ্গে ৭টি মুসলিম দেশের সম্পর্ক ছিন্নকরণের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, ৭টি দেশের মধ্যে ৫টিই কাতারের নিকট প্রতিবেশী। আরব উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত তেলসমৃদ্ধ কাতারের জনসংখ্যা মাত্র ২৭ লাখ। অভিযোগ আছে, শিয়া অধ্যুষিত দেশটি অর্থনৈতিক শক্তি ও দাপটের কারণে তার ওজনের চেয়ে অনেক উপরের পর্যায়ে খেলার চেষ্টা করে। বহির্বিশ্বে দেশটি সবিশেষ পরিচিত জাতীয় বিমান সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরার কল্যাণে। সম্প্রতি আরও পরিচিতি এসেছে ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন অধিকার অর্জন এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি ফুটবল দল বার্সেলোনাকে স্পন্সরের জন্য। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর স্বভাবতই প্রায় সব অর্থনৈতিক সম্পর্কও ভেঙ্গে পড়বে এবং এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে সে দেশের অর্থনীতি ও অধিবাসীদের ওপর। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ইতোমধ্যে সব রকম ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে এবং ছিন্নœ করেছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। কাতারের পণ্য আমদানি বিশেষ করে খাদ্য আমদানির ৪০ শতাংশ আসে সৌদি সীমান্ত পথে। সে অবস্থায় দেশটিকে বিমান ও সমুদ্রপথে মালামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে এবং তাতে স্বভাবতই মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কাতারে এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ৮টি স্টেডিয়াম, একটি নতুন সমুদ্রবন্দর, মেট্রো প্রকল্পসহ কয়েকটি বড়সড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নেয়ার কথা রয়েছে। এ সবই এখন কার্যত পড়বে হুমকির মুখে। শেষ পর্যন্ত কাতার এক ঘরে হয়ে পড়লে সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাতার সরকার অবশ্য আনীত সব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে বলেছে, সে দেশের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অন্যায্য, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কাতারকে রাজনৈতিক খবরদারির আওতায় আনার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। তারা এমনকি সম্পর্ক ছিন্ন করা দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাতে গুরুত্বারোপ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ওআইসিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। মুসলিম বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সেটাই প্রত্যাশিত। চাই সবুজায়ন বনানী রেল ক্রসিং হতে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতিও দৃশ্যমান হচ্ছে। সড়কের দু’ধারে সাড়ে পাঁচ লাখ গাছের চারা লাগানোর যে উদ্যোগ আয়োজন চলছে তাতে এ সড়কের রূপ বৈশিষ্ট্যই পাল্টে যাবে। বিচিত্র বৃক্ষের সবুজ সতেজ পত্র-পল্লবে ছেয়ে যাবে সড়কের দু’ধার। পথচারীরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে নবীন বৃক্ষের বৈচিত্র্য-বৈভব। ঢাকার হৃৎপি- বলে পরিচিত রমণীয় রমনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও চন্দ্রিমা উদ্যানের অপরূপ সবুজ শোভা দেখতে মন যেমন আনন্দে নেচে ওঠে তেমনি বিমানবন্দর সড়কের বৃক্ষ শোভিত সবুজ বনানী দেখতেও অচিরেই নগরবাসীর মন প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে। মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে বার বার এ জায়গায় ফিরে আসবে। বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা প্রণয়নে সড়কের দু’পাশে ‘বনসাই’ লাগানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গাছের চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যে বাস্তবসম্মত এবং এর সুফল যে সুদূরপ্রসারী ও নানামাত্রিক তা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হলে শুধু সড়কের শোভাই বাড়বে না, তা যেমন ছায়া দিবে তেমনি স্বস্তি এবং শান্তির জন্যও সহায়ক হবে। ব্যস্ত জীবনে এই সড়ক এবং এর প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের মনে যে আনন্দের সঞ্চার করবে তার অমূল্য বলেই ধরে নেয়া যায়। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এই সড়কটির দেখভালের কাজ যেমন সুচারু ও সুন্দরভাবে করতে হবে, তেমনি নির্বিঘেœ ও নিরাপদে যাতে মানুষ এ মহাসড়কটি ব্যবহার করতে পারে সেদিকেই বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সৌন্দর্যবর্ধন করা যত সহজ তার সংরক্ষণ নিশ্চিত করা তত কঠিন। এই কঠিন দায়িত্বটি সওজ যতেœর ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব এবং কর্তব্যজ্ঞান ও সচেতনতাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়। এমনিতেই ঢাকায় ব্যানার পোস্টারের ছড়াছড়ি। তাছাড়া যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কুঅভ্যাস তো রয়েছেই। উত্তর এবং দক্ষিণের দুই উদ্যমী মেয়র ঢাকাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপ দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেড় কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। নাগরিকরা সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে ঢাকাকে সৌন্দর্যের তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলা কঠিন কিছু নয়। সরকারের সহযোগিতা বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত প্রয়াস এক্ষেত্রে জরুরী। ইতোমধ্যে ধানম-ি, গুলশান, বারিধারাসহ আরও কিছু এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলার দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। নিয়ম শৃঙ্খলাও ফিরে এসেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক সুবিধা সমন্বিত যানবাহনও নামানো হয়েছে। গুলশান হাতিরঝিল এলাকায় বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। হাতিরঝিলের আধুনিকায়ন চোখে লাগার মতো। ছুটির দিনে তো বটেই, সকাল বিকেল ভ্রমণকারীদের প্রধান আকর্ষণ হাতিরঝিল, যা এক সময় নাগরবাসীর কল্পনার বাইরে ছিল। ঢাকাকে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর করে তুলতে হবে। সে জন্য সর্বত্র চাই সবুজায়ন। শুধু বিমানবন্দর সড়কই নয়, অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে সে সব সড়কের ব্যাপারেও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প প্রণয়ন জরুরী। রাজধানী ঢাকাকে মানুষের বসবাস উপযোগী একটি স্বস্তি ও শান্তিদায়ক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। নিতে হবে সবুজায়নের নানামুখী কল্যাণকর উদ্যোগ। পরিবেশ সুন্দর হলে জীবন সুন্দর হবে। সুন্দর হবে আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত।
×