ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তিবদ্ধ হলেন জাতীয় দলের নতুন কোচ অর্ড

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৮ জুন ২০১৭

চুক্তিবদ্ধ হলেন জাতীয় দলের নতুন কোচ অর্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব সামলেছেন ২২ কোচ। এদের মধ্যে বিদেশী কোচই ১৮ (১৭ দেশের)। এদের মধ্যে গত আট বছরে আট বিদেশী কোচ নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এদের প্রত্যেককেই নিয়োগ দেয়ার সময় উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এদের কেউই নিজেদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। বিদায় নিয়েছেন তিক্তভাবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ২৩তম এবং বিদেশী হিসেবে ১৯তম কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ৩৭ বছর বয়সী ইংলিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এ্যান্ড্রু অর্ড। তিনি দায়িত্ব নিতে এবং বাফুফের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে ঢাকা এসেছেন রবিবার রাতে। বুধবার চুক্তি স্বাক্ষরের পর কোচকে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে বাফুফে। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, ন্যাশনাল টিমস কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ, ন্যাশনাল টিমস কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল, ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্য সত্যজিৎ দাস রুপু, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ প্রমুখ। নতুন এই কোচকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দিচ্ছে বাফুফে। ছয় মাসের মধ্যে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে যেতে পারবেন না। তেমনি বাফুফেও তাকে বরখাস্ত করতে পারবে না। এক বছর পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আপাতত জাতীয় দলের কোন খেলা নেই। তবে এএফসির বয়সভিত্তিক দুটি টুর্নামেন্ট আছে এ বছর। আপাতত দুটি বয়সভিত্তিক (অ-২৩ এবং অ-১৯) কাজ দিয়ে শুরু হবে অর্ডের বাংলাদেশ মিশন। এরপর সেপ্টেম্বরে ফিফা প্রীতিম্যাচ (হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে), ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ... আপাতত এই হচ্ছে অর্ডের কাজ। তবে জুলাইয়ে অ-২৩ টুর্নামেন্টই হচ্ছে অর্ডের প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট। সাফ ফুটবলের স্ট্যান্ডার্ড এখন অনেক উঁচুতে। বাংলাদেশ কোনমতেই এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে গত তিনটি সাফের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। বাস্তবতা হচ্ছেÑ গত কয়েক বছরে পাইপলাইনে পর্যাপ্ত দক্ষ ফুটবলার তৈরি না হওয়াতে এখন যে মানের ফুটবলার আছে, তাদের নিয়ে সাফ বা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ভাল ফল করা সম্ভব নয়। ফলে নতুন কোচকে বাফুফে কেন দলকে ফাইনালে ওঠানোর জন্য বার্তা দিয়েছে? এ প্রসঙ্গে কাজী নাবিলের স্বীকারোক্তি, ‘এখন ভাল ফুটবলার নেই, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমাদের ঢাল-তরবারি যা আছে তাই নিয়েই চেষ্টা করতে হবে। আশায় বুক বাঁধতে দোষ কি। ’ অর্ড বলেন, ‘বাফুফেকে ধন্যবাদ আমাকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য। আমি কোন জাদুকর নই। জাতীয় দলের উন্নতি করতে চাই। আগামী এক বছর পর জাতীয় দল কোন অবস্থানে থাকবে সেটা নিয়ে এখনই ভাবছি না। আমি চাই ধাপে ধাপে প্রতিটি মাসে দলের উন্নতি করতে।’ বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, ‘নতুন কোচ অর্ডকে স্বাগতম। আশাকরি তিনি আমাদের ভাল কিছু উপহার দেবেন। বাফুফে ম্যাচ খেলে দিতে পারবে না। তবে যত রকমের সুবিধা প্রয়োজন তা দিতে পারবে। আসল কাজটা করতে হবে কোচ ও ফুটবলারদের। ফুটবলারদের বলব তারা যেন দয়া করে পেশাদার হয়। দেশের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে খেলে।’ ক’দিন পর শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচগুলো দেখবেন অর্ড। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও সাফসহ ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দেখে ফুটবলার নির্বাচন করে জাতীয় দল গঠন করবেন তিনি। ‘আমি এদেশে ছুটি কাটাতে আসিনি। এসেছি কাজ করতে। আমি শুধু বাংলাদেশ ফুটবলেরই উন্নতি ঘটাতে চাই না, নিজের কোচিং ক্যারিয়ারেরও উন্নতি ঘটাতে চাই।’ বাংলাদেশের আগে কোন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ‘এএফসি প্রফেশনাল লাইসেন্সধারী’ অর্ডের কোন অভিজ্ঞতা নেই। সর্বশেষ ২০১৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার দল পার্থ গ্লোরির সহকারী কোচ হিসেবে ছিলেন তিনি। যার মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মে। অর্ড ‘সকারুস’ (অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দল) দলের হয়েও কাজ করেছেন। সেটা স্কাউট (প্রতিপক্ষের দলগুলোর ওপর গোয়েন্দাগিরি এবং প্রতিভা অন্বেষণ করা) হিসেবে। পার্থে বিশ^কাপ বাছাই ম্যাচে বাংলাদেশ ০-৫ গোলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল। সে ম্যাচটা মাঠে বসে দেখেছেন অর্ড। প্রশ্ন হচ্ছে যিনি মূলত স্কাউট এবং সহকারী কোচ, সেই অর্ডের হাতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল তুলে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক? ‘সার্বিক বিবেচনায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অর্ডই সঠিক কোচ।’ কারণ তিনি এশিয়ান লেভেলে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ দল যে স্টাইলে খেলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, অর্ড সেভাবেই খেলাবেন দলকে।’ নাবিলের উত্তর। অর্ডের পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি বাফুফে। তবে ক্রুইফের বেতন সময় মতো পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বাফুফের যে বদনাম হয়েছিল অর্ডের বেলাতেও যে এমনটা হবে নাÑ এই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি বাফুফে। তবে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, অর্ডের মাসিক বেতন ১২ হাজার ডলার। ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের দল বেক তেরো সাসানার কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন অর্ড। ওই বছরেই মিয়ানমামের ইয়াংগুন ইউনাইটেড এফসির একাডেমি ডিরেক্টরের পদে যোগ দেন। ২০১২ সালে দায়িত্ব নেন থাইল্যান্ডেরই মুয়াং থং ইউনাইটেডের অনুর্ধ-২১ দলের। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার অর্ড খেলোয়াড়ী জীবনে (১৯৯৫-২০০০) ছিলেন সেন্টার ব্যাক। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে দুটি সেমি-প্রফেশনাল ক্লাবে খেলেছেন। কখনও জাতীয় দলে খেলেননি অর্ড। কোচিংয়ে সাফল্য বলতে ২০১১ সালে থাইল্যান্ডে এফএ যুব কাপে বেক তেরো সাসানাকে চ্যাম্পিয়ন করানো এবং ২০১৩ সালে রিজিওনাল লীগ ডিভিশন টুতে মুয়াং থং ইউনাইটেডকে রানার্সআপ করানো। এখন দেখার বিষয় অর্ড কতটা বদলে দিতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবলকে।
×