ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কার্ডিফে ইতিহাস গড়তে পারবে কি বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৮ জুন ২০১৭

কার্ডিফে ইতিহাস গড়তে পারবে কি বাংলাদেশ?

স্পোর্টস রিপোর্টার, কার্ডিফ থেকে ॥ একটি মাত্র ম্যাচ। জিতলেই প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই হয়ত হয়ে যাবে। আর নিউজিল্যান্ডকে হারালেই ইতিহাসও গড়ে ফেলবে বাংলাদেশ। যে টুর্নামেন্টের মূলপর্বে কখনও টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ, সেই ইতিহাস গড়া হয়ে যাবে। কার্ডিফে সোমবার বাংলাদেশের সেই ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনাময় ম্যাচটি হবে। পারবে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়তে? শুধু তাই নয়, এরআগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চারবার খেলে কখনই টেস্ট খেলুড়ে কোন দলের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। একবার ২০০৬ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাছাইপর্বে জিতেছিল। তখন জিম্বাবুইয়ে টেস্ট থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে ছিল। এছাড়া আর কোন ম্যাচই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০০ সালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (তখনকার নকআউট ট্রফি) খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু একটি মাত্র ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাছাইপর্বে খেলে হারে। এরপর টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০২ সালে সরাসরি মূলপর্বে খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেয়। ২০০৪ সালেও সরাসরি মূলপর্বে খেলে বাংলাদেশ। সেবারও একই দশা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নেয়। ২০০৬ সালে তো মূল পর্বে খেলতেই পারেনি বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে খেলে। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারে। জিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। কিন্তু এই এক জয়ে তো আর মূলপর্বে খেলার নিশ্চয়তা মিলতে পারে না। বাংলাদেশ মূলপর্বে খেলতেও পারেনি। এবার বাংলাদেশ সাড়ে ১০ বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছে। সেরা আট দলের মধ্যে থেকেই, যোগ্যতা দেখিয়েই খেলছে। যখন আবার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছে তখনও কী একই অবস্থা হবে? না, এবার অন্তত টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে হারিয়ে ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ? সঙ্গে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নও ভালভাবেই জিইয়ে রাখবে? এ প্রশ্নগুলোই উঠছে। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হবে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে। ইংল্যান্ডে কয়েকবার বাংলাদেশ খেলতে আসলেও কার্ডিফে একবারই খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে খেলে। সেই একবারই বাজিমাত করে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়। তাই সবারই ধারণা এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ। হারিয়ে দিলেই তো বাজিমাত হয়ে যায়। এ মুহূর্তে টুর্নামেন্টে ‘এ’ গ্রুপের চিত্র অনেকটাই জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে গেছে। এই গ্রুপে বাংলাদেশসহ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড খেলছে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। চার পয়েন্ট নিয়ে স্বাগতিকরা সেমিফাইনালে উঠে গেছে। বাকি থাকে এই গ্রুপ থেকে আরেকটি দলের শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করা। আর সেই দলটিই মিলছে না। এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ২ পয়েন্ট পেয়েছে। দুই ম্যাচই তাদের বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ আছে একই অবস্থানে। দুই দলই এক ম্যাচে হারে। আরেক ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। দুই দলের পয়েন্ট সমান, ১ করে। এ দুই দলেরই সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে। আবার দুই দলের পরস্পরের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে। যে দল জিতবে তাদেরই সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা জাগবে। তবে এজন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে অস্ট্রেলিয়ার ১০ জুন ম্যাচ রয়েছে, সেটিতে হারতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। হিসেব হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যদি অস্ট্রেলিয়া হারে তাহলে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে যে দল জিতবে, তারাই সেমিফাইনালে উঠে যাবে। বাংলাদেশ কী পারবে সেমিতে ওঠার আশা জাগিয়ে রাখতে? সেমিতে ওঠার আশা জাগিয়ে রাখা মানে নিউজিল্যান্ডকে হারানো। আর নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই ইতিহাস গড়াও হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হয়ে যেত মাশরাফিবাহিনী। কিন্তু বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আর ৪ ওভার খেললেই যেখানে অসিরা বৃষ্টি আইনে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তো সেখানে বাংলাদেশ পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রয়েছে। এমনকি সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনার স্বপ্নেও ভাসছে। এখন শুধু একটি ম্যাচ জিতলেই হয়ে যায়। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ ছাড়া এমন কোন টেস্ট খেলুড়ে দল নেই যে জয় পায়নি। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান ম্যাচের আগ পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে ভারত সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলে ১৬টি ম্যাচে জিতেছে। ইংল্যান্ড ২৩ ম্যাচ খেলে ১৩টি ম্যাচে জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪ ম্যাচ খেলে ১৩ ম্যাচে জিতেছে। শ্রীলঙ্কা ২৫ ম্যাচ খেলে ১৩ ম্যাচে জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ২২ ম্যাচ খেলে ১২টি জয় পেয়েছে। প্রতিবেশী দুইদেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ২৩ ম্যাচ করে খেলে ১২টি করে ম্যাচে জিতেছে। পাকিস্তান ১৯ ম্যাচে ৭ জয় পেয়েছে। জিম্বাবুইয়ে ৯ ম্যাচ খেলে কোন জয় পায়নি। বাংলাদেশ ১০ ম্যাচ খেলে ১ জয় পেয়েছে। তবে সেটি বাছাইপর্বে টেস্ট খেলুড়েহীন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। সবদলই টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে জয় পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। সোমবার বাংলাদেশের সামনে শেষ সুযোগ। যদি নিজেদের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারানোর স্বপ্ন পূরণ হবে। সেই সঙ্গে ইতিহাসও গড়া হবে। আবার সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নও নয়তো এবারও আর কোন সুযোগ থাকবে না। তখন যে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নেবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন জাগানোর সঙ্গে ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?
×