ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু অস্ত্র বাদ দিলে নিরাপত্তা দেব ॥ উত্তর কোরিয়াকে চীন

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৭ জুন ২০১৭

পরমাণু অস্ত্র বাদ দিলে নিরাপত্তা দেব ॥ উত্তর কোরিয়াকে চীন

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে সে দেশটির ওপর হামলার আশঙ্কা প্রায়শই বেশ তীব্র আকার ধারণ করে। এই কিছুদিন আগে তো কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলের দিকে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী বহর পাঠানো নিয়ে যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়েছিল। আমেরিকা চায় উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বর্জন করুক। সে ব্যাপারে চীনের উপরও দেশটির চাপ আছে। এদিকে চীন উত্তর কোরিয়াকে নিজের নিরাপত্তার দিক থেকে বাফার স্টেট বলে মনে করে। সে জন্য সে কোনভাবেই চায় না দেশটার ওপর হামলা হোক। কারণ সেক্ষেত্রে চীন মহাবিপদে পড়ে যাবে। এমনি পটভূমিতে চীন উত্তর কোরিয়ার কাছে এমন প্রস্তাব দিয়েছে যে, দেশটি পরমাণু অস্ত্র বর্জন করলে বেজিং পিয়ংইংয়ের নিরাপত্তার অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে। পিপলস ডেলির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল টাইমসের সাম্প্রতিক এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়া যদি দুর্বিনীতভাবে তার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে তার ওপর মার্কিন হামলার সম্ভাবনা বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র বিপুল অস্ত্রপাতি জড়ো করছে যা উত্তর কোরিয়ায় ব্যবহৃত হতে পারে। এতে করে কিম জং উন-এর সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে তা মোকাবেলা করার মতো শক্তি দেশটির নেই। এই অবস্থায় পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত কর্মকা- বন্ধ করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। দৈনিকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয় যে, দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়া তার দুর্বল জাতীয় শক্তি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে যা করতে পারা নিঃসন্দেহে অবাস্তব। দৈনিকে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যদি উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ না-ও করে তথাপি দেশটির ওপর যে দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপিত হবে তার ধকল সইতে পারা দেশটার পক্ষে সম্ভব হবে না। উত্তর কোরিয়া হয়ত ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে একঘরে একটি দেশে পরিণত হয়েছে যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ। আধুনিক কোন রাষ্ট্র এভাবে টিকে থাকতে পারে না। সম্পাদকীয়তে অবশ্য এটাও বলা হয় যে, উত্তর কোরিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক কোন সম্পর্ক স্থাপন করে তারপরও সেই সরকারের অস্তিত্বের কোন গ্যারান্টি হতে পারে না। এতে পিয়ংইয়ংকে বড় আকারের স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা নেয়ার এবং নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক মিত্র ও ছত্রছায়ার সন্ধান করার পরামর্শ দেয়া হয় যাতে করে দেশটা বর্তমান সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। দৈনিকে জোর দিয়ে বলা হয় যে, চীন উত্তর কোরিয়ার সমস্যার সমাধান হতে পারে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং আধুনিক ইতিহাসে দেশটি এত শক্তিশালী আর কখনই ছিল না। চীন ও উত্তর কোরিয়া যদি সুদৃঢ় স্ট্র্যাটেজিক ঐকমত্য নতুন করে গড়ে তুলতে পারে তাহলে পিয়ংইয়ংকে নিরাপত্তা সমর্থন যোগানোর এবং দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য দেয়ার মতো ক্ষমতা ও সামর্থ্য চীনের আছে। সম্পাদকীয়তে জোর দিয়ে বলা হয় যে পিয়ংইয়ংয়ের সরকার পরিবর্তন ঘটানোর কোন এজেন্ডা বেজিংয়ের নেই বরং উত্তর কোরিয়া তার একঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলে দেশটির স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, উত্তর কোরিয়ার সরকার পরিবর্তন করার মতো এস্টাবলিশমেন্টপন্থী কোন শিবিরের অস্তিত্ব চীনে নেই এবং নিজের সিভিল সেক্টরেও এ ধরনের তৎপরতার সুযোগ দেবে না। সুতরাং দেশটি বহির্বিশ্বের কাছে নিজেকে উন্মোচিত করলে এর জাতীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করতে চীন এক বিরাট পশ্চাদভূমি হিসেবে কাজ করবে। চীন জোর দিয়ে বলেছে যে, উত্তর কোরিয়ার সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে এমন কোন সামরিক কৌশলের অংশীদার চীন কখনই হবে না এবং সেই সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক কার্যক্রমও মেনে নেবে না। দৈনিকে নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার উদ্যোগ কোন অবস্থাতেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোন ধরনেরই সামরিক কার্যক্রমে গড়াবে না। এতে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে, চীনের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির কারণে উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় স্থল হামলা বেজিংয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : ফ্রন্ট লাইন
×