ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জটিল সম্পর্কের আবর্তে রাশিয়া ও ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৭ জুন ২০১৭

জটিল সম্পর্কের আবর্তে রাশিয়া ও ইউরোপ

রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের বর্তমান সম্পর্ক বড়ই জটিল এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল। সেই সম্পর্কের মধ্যে পরস্পরের প্রতি কঠোর ভূমিকাও যেমন আছে তেমনি আছে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার মনোভাব। ইউক্রেন থেকে সিরিয়া ও তুরস্ক পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে দুপক্ষের মধ্যে গুরুতর মতপার্থক্য আছে যা কিনা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিম-লেও চলে আসে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। রুশ-ইউরোপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সন্দেহ অবিশ্বাস যেমন আছে তেমনি আছে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। বর্তমান পর্যায়ে ইউরোপ রাশিয়ার সঙ্গে কোন ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে রাজি নয়। জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেলের কৌশল এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার প্রতি ইউরোপের নীতিকে প্রভাবিত করে চলেছে। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়ার ব্যাপারে মার্কেল মুখ্য ভূমিকা নিলেও ক্রেমলিন এবং বিশেষ করে ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি নিয়মিত সংলাপ বজায় রেখে এসেছেন। রাশিয়ার দিক থেকে নানা ধরনের হুমকি মোকাবেলায় গত মে মাসে বেশকিছু ইউরোপীয় দেশ যথা সুইডেন, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে একটি কেন্দ্র গঠনের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। স্মারকে বলা হয় যে ইউরোপে ক্ষমতার রাজনীতি ও সাময়িক সংঘাতে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করছে। সিদ্ধান্ত নির্ধারণী প্রক্রিয়াগুলো জটিল ও বাধাগ্রস্ত করার জন্য রাশিয়ার দিক থেকে জবরদস্তিমূলক ও নাশকতামূলক তৎপরতা বাড়ছে। নির্বাচনগুলোতে এমনভাবে নাক গলানো হয়েছে যা মোটেও সঙ্গত নয়। চলমান অভিবাসন সঙ্কটে রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় কুশীলবরা তৎপর থেকেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার এ ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে রেহাই চায়। আর সেজন্যই ওই কেন্দ্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা। এই কেন্দ্র গঠনের ব্যাপারেও মার্কেলের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। মার্কেল রাশিয়াকে মোকাবেলা করতেও চান আবার সংলাপও চান। মার্কেল রাশিয়া প্রশ্নে গ্রুপ হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা নির্ধারণে এবং সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্বেগ ও ভাবনায় ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। পারস্পরিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজের অর্থনীতির কিছু কিছু খাতে পোল্যান্ড সঙ্কট ও ক্লেশের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রতি কঠোর ভূমিকা নেয়ার পক্ষপাতি। অন্যদিকে গ্রীস ও ইতালি এ ধরনের কঠোর ভূমিকায় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ইতালি তো গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের প্রবল বিরোধিতা করে আসছে। ওদিকে ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন রাশিয়া প্রশ্নে মার্কেলের অনুরূপ ভূমিকা অনুসরণের পক্ষপাতি। তাঁর পূর্বসূরি ফ্রাসোয়া ওঁলাদের ভূমিকাও ছিল তাই। ম্যাক্রন জোর দিয়ে বলেছেন যে, রাশিয়ার উপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেয়া চলবে না। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, রাশিয়া ফ্রান্সের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী প্রার্থী জা লাক মেলেনচন-রাশিয়ার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। রাশিয়ার প্রতি ভূমিকা প্রশ্নে মার্কেলের নীতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতির অনুরূপ। ওবামা হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় মার্কেলকে তাঁর এই এতগুলো বছর ঘনিষ্ঠতম আন্তর্জাতিক অংশীদার বলে অভিহিত করেছিলেন। ট্রাম্পের শাসনের গোড়াতে মার্কেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক বন্ধুর যাত্রাপথ দিয়ে শুরু হয়েছিল। ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা ইউরোপ এবং রাশিয়ার প্রতি জার্মান নীতির সমালোচনা করেছিলেন। এক বৈঠকে তো ট্রাম্প মার্কেলের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি প্রয়োজনের ভিত্তিতে মার্কেলের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে রাজি। তবে রাশিয়ার প্রতি মোকাবেলার নীতি যতই অনুসৃত হোক না কেন দেশটির সঙ্গে যে কোন ধরনের সংঘাতে ইউরোপকে টেনে আনা সম্ভবত যাবে না। রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে উত্তেজনা বড় আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই বলেই মনে হয়। তবে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ অবিশ্বাস বাড়বে এবং এভাবেই চলতে থাকবে এক টানাপোড়েনের সম্পর্ক। চলমান ডেস্ক সূত্র : ফ্রন্ট লাইন
×