ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ব্রিটিশ নির্বাচন ॥ টোরিরা কি নিরঙ্কুশ জয় পাবে

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ৭ জুন ২০১৭

ব্রিটিশ নির্বাচন ॥ টোরিরা কি নিরঙ্কুশ জয় পাবে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আগামী ৮ জুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অনেকের কাছে যেমনি অপ্রত্যাশিত তেমনি বিস্ময়কর। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা পশ্নে গণভোট হয় ২০১৪ সালে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে হয় সাধারণ নির্বাচন। বেক্সিট প্রশ্নে গণভোট হয় ২০১৬ সালে। ব্রিটিশদের অনেকের কাছে মনে হয়েছে ঢের নির্বাচন হয়েছে এবং সে উপলক্ষে অনেক প্রচার প্রচারণাও হয়েছে। ২০২০ সালে মে মাসে নির্বাচন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত আপাতত হাপ ছাড়া বাঁচা গেল। কিন্তু থেরেসা মের ৮ জুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করে দেয়। অনেকে ভাবে এর মধ্যে যথেষ্ট রাজনীতি আছে। গত বছরের জুলাইয়ে বেক্সিট প্রশ্নে গণভোটের প্রেক্ষাপটে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর থেকে আগাম নির্বাচন দেয়ার পরিকল্পনার কথা যে বারবারই অস্বীকার করে আসছিলেন। তাই তার এই অপ্রত্যাশিত ঘোষণা সবাইকে বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন মে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন। এর প্রয়োজনটাই বা পড়ল কেন? প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এ প্রশ্নের জবাব হলো যখন এবং বিশেষ করে যে ক্ষেত্রে সরকার ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে তখন ঐক্য থাকা দরকার। অথচ সে সময় ওয়েস্ট মিনস্টারে আছে বিভাজন। কিন্তু এই যুক্তি অনেকেই মানতে নারাজ। তাদের কথা হলো রাজনৈতিক পরিম-লের উপর মে’র যথেষ্ট কমান্ড আছে এবং জেবেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল লেবার পার্টিও রয়েছে যথেষ্ট বিশৃঙ্খল হতোদ্যম অবস্থায়। তবে প্রকৃত উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন অনেকেই আশা করছেন যে নির্বাচনে মে’র রক্ষণশীল দলের ভূমিধ্বংস বিজয় হয়ে এবং তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। এর একটা লক্ষণ হলো সাম্প্রতিক সমীক্ষার ফলাফল। কে সেরা প্রধানমন্ত্রী হবেন- মে, না করবিন এই প্রশ্নে পরিচালিত সমীক্ষায় মে-করবিনের চেয়ে ৩৭ পয়েন্ট বেশি পেয়েছিলেন। অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় এবং বেক্সিট নিয়ে আলোচনায় এখন পর্যন্ত টোরিদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বলে গণ্য করা হয়। তবে কোন্ দল মোটামুটি কত আসন পাবে বলা মুশকিল। টোরিস নিশ্চয়ই লেবার পার্টির কিছু আসা কেড়ে নিতে পারবে বলে আশা করে। তবে কিছু কিছু রক্ষণশীল এমপির নির্বাচনী অবস্থা লাজুক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে যেখানে লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ সেখানে তো বটেই। ২০১৫ সালের নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ভোটাররা ডেভিড ক্যামেরনের কোয়ালিশন সরকারের পক্ষে রায় দেয়ায় লিবারেলরা ৫৭টি আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনই খুইয়ে বসেছিল। ব্রিটিশ ভোটাররা আজ ব্রেক্সিটকেপ্রধান ইস্যু হিসেবে দেখলেও সর্বক্ষেত্রে সেটা যে এক নম্বরে থাকছে তা নয়। কোন ইস্যুগুলো তাদের ও পরিবারের কাছে বড় এই সংক্রান্ত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেক্সিটটের বিষয়টি জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের পর তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। এ অবস্থায় রক্ষণশীল দল বড় ব্যবধানে জিততে চাইলে তাদের ইইউতে থেকে লাভ চাওয়া ও সেখান থেকে বের হতে চাওয়া এই শ্রেণীর ভোটারদেরই কোয়ালিশন অর্জন করা প্রয়োজন। টোরিরা যদি ভেবে থাকে যে বেক্সিট প্রশ্নে থেরেসা মের দূর সংকল্পই অন্য দল থেকে বেক্সিট সমর্থক ভোটার বের করে আনার জন্য যথেষ্ট হবে তাহলে তাদের হতাশ হতেও পারে। অবশ্য অন্যদের ধারণা বেক্সিট ইস্যুটির যেহেতু নিষ্পত্তি হয়েই গেছে তাই এ নিয়ে তার না ভাবলেও চলবে। অন্য দলের কত ভোটার ৮ জুনের নির্বাচনে টোরিদের সমর্থন দিল সেটাও পার্লামেন্টের নয়া সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার আকার নির্ধারণের ভূমিকা রাখবে। তাই বলে কেউ যদি ভেবে থাকে যে নির্বাচনে রক্ষণশীল দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরে তেমনটা নাও হতে পারে। যেসব ভোটার নিশ্চিত যে থেরেসা মে ক্ষমতায় থেকে যাবেন তারা তখন অন্য দলের বন্ধুভাবাপন্ন স্থানীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। কেউ কেউ আবার অন্য দলের প্রার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট দিতে পারে যাতে করে রক্ষণশীল দল বিনা বিরোধিতায় দেশ শাসনের সুযোগ না পায় সুতরাং মে ও তার দল জিতবেন এটা ঠিক তবে তার নিরঙ্কুশ নিজয় যে হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। সূত্র : টাইম
×