ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান লতিফুর রহমান

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৭ জুন ২০১৭

চলে গেলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান লতিফুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান আর নেই। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। বিচারপতি লতিফুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী আয়েশা বেগম, তিন মেয়ে শম্পা, রুম্পা ও নিপাসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। স্ট্রোক হওয়ার পর দিন দশেক আগে তাকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিচারপতি লতিফুর রহমান ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মাস বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট গার্ডেনে জানাজা শেষে বনানী গোরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজায় সাবেক চার প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী, বিচারপতি কে এম হাসান, বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফসহ উভয় বিভাগের বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা অংশ নেন। ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন লতিফুর রহমান। তার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার গঠন করা হয়। ওই বছর ১০ অক্টোবর নতুন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। বিচারপতি লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এদিকে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজায় লতিফুর রহমানের সাবেক সহকর্মীরাসহ আইনজীবীরা অংশ নেন। লতিফুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কাজ মঙ্গলবার আধাবেলা বন্ধ রাখা হয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজা হয়। জানাজায় সাবেক চার প্রধান বিচারপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রীমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ। জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। আমি প্রধান বিচারপতি ছাড়াও আইনজীবী হিসেবে তাকে পেয়েছি। তিনি সব সময় হাসিখুশি ছিলেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আমরা সবাই মর্মাহত। ‘তিনি এমন অনেক রায় দিয়েছেন, যা আমরা এখনও অনুসরণ করি। তিনি অতি ভদ্র লোক ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের জানাজায় আরও অংশ নেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শ্রম এপিলেট ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি সামসুল হুদা মানিক, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রীমকোর্ট কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা। জীবনী ১৯৩৬ সালের ১ মার্চ যশোরে জন্ম নেয়া লতিফুর রহমান ১৯৭৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ১৯৮১ সালে তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন। ১৯৯১ সালে আপীল বিভাগের বিচারপতি হন তিনি। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন লতিফুর রহমান। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যান। ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। তার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। যশোর বারের আইনজীবী খান বাহাদুর লুৎফর রহমানের তৃতীয় সন্তান লতিফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। এরপর সেখানেই এলএলবি করেন তিনি। তার মামা বিচারপতি নুরুল হুদাও এক সময় হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করলেও পরে ১৯৬০ সালে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম এ্যাটর্নি জেনারেল এম এইচ খন্দকারের শিক্ষানবিশ ছিলেন লতিফুর রহমান। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা’ নামে একটি বইয়ে লতিফুর রহমান তার ৮৭ দিন সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে লিখেছেন ‘কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ’।
×