ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১১টি হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে;###;১০টি হচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায়

রাজধানীতে একুশটি ইউটার্ন নির্মাণ শুরু হচ্ছে ॥ যানজট নিরসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ জুন ২০১৭

রাজধানীতে একুশটি ইউটার্ন নির্মাণ শুরু হচ্ছে ॥ যানজট নিরসনের উদ্যোগ

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজধানীর যানজট নিরসনে অবশেষে শুরু হচ্ছে ২১টি ইউটার্ন নির্মাণ কাজ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১১টি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) এলাকায় মোট ১০টি স্থানের মধ্যে এসব ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউসবিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত অপরদিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ছোট-বড় মোট ২১টি ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিলেও কারিগরি দিক বিবেচনা করা, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় স্থান না থাকা ও ইউলুপ (ফ্লাইওভারের ন্যায়) নির্মাণ করলে ট্রাফিক জ্যাম বিড়ম্বনা আরও বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় ইউটার্ন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহের যে কোনদিন ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এসব ইউলুপ নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হবে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন প্রকল্পের ডিএনসিসি অংশের পরিচালক ও সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম। একই সঙ্গে চলতি বছরেই এসব ইউটার্ন নির্মাণ করা শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি। ২০১৫ সাল থেকে এসব যানজট নিরসনে ২২টি ইউলুপ করার কথা বলে আসছেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। তবে এসব ইউলুপ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকা, ভূমির ছাড়পত্র না পাওয়া ও যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি এমআরটিরসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। মূলত উন্নত বিশ্বের ন্যায় যাত্রী চলাচল নির্বিঘœ করা ও রাজধানীর চলমান যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের এসব প্রকল্পের সঙ্গে ইউটার্ন প্রকল্পটি অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না তা খতিয়ে দেখতে সময় নেয়া হয়। পরে এসব ইউটার্ন নির্মাণের অনুমতি দেয় সরকার। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ইউটার্নের জন্য দুই ধরনের নক্সা তৈরি করেছে সংস্থাগুলো। একটিতে ছোট-বড় দুই ধরনের যানবাহন চলবে। অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউলুপ থেকে আরেকটি ইউটার্নের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৮শ’ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউটার্ন দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। ফলে তখন বিভিন্ন মোড়ে কোন ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না। এতে রাজধানীর যানজট প্রায় ১৫ শতাংশ কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই সিটি কর্পোরেশনের মধে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২৪ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসি তাদের সীমানায় ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের জন্য আগামী সপ্তাহে টেন্ডার আহ্বান করবে সংস্থাটি। বাকি ইউটার্ন নির্মাণ করবে জিসিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রস্তাবনায় ২২টি ইউটার্নের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউটার্ন নির্মাণের কথা থাকলেও পর্যাপ্ত স্থান সঙ্কটের কারণে একটি ইউটার্ন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না তবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরার হাউসবিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি নির্মাণ করবে ডিএনসিসি। অপরদিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ করবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি)। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ইউটার্নগুলো নির্মাণ করতে ৩৭.০৯ বিঘা জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১.২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১.৬১ বিঘা ও সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ১.৮৩ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব জমি বর্তমানে অব্যবহারিত থাকায় বর্তমানে কোন জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি তৈরি করা হলেও বাস্তবায়নের জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জমি নেই বললেই চলে। প্রকল্পে ইউটার্ন নির্মাণের জন্য যেসব স্থানের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই সরকারী বিভিন্ন সংস্থার। নাগরিকদের সুবিধার্থে ইউটার্ন তৈরির জন্য এসব জমি প্রয়োজন। তাই এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি নিতে হয়েছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি পেতে দেরি হওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেও বিলম্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ডিএনসিসির দাবি চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন। তবে পূর্বের দেয়া প্রকল্পের মেয়াদ চলতি জুন মাসে শেষ হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে নতুন করে সময় বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউলুপের মধ্যে একনেকের সভায় ১১টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ইউলুপ দেয়া হলেও প্রকল্প অনুমোদনের সময় কারিগরি দিক বিবেচনায় তা পরিবর্তন করে ‘ইউটার্ন’ নাম দেয়ার নির্দেশ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী মুস্তফা কামাল। ডিএনসিসি এলাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে আর ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সরকারী অনুদান থেকে দেয়া হবে। অপরদিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১০টি ইউলুপ নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে স্থান নির্ধারণ করেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ (জিসিসি)। ইউটার্ন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটি দু-এক সপ্তাহের মধ্যে প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। জিসিসি অংশের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রকল্প কাজ শুরু করতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে। তবে চলতি বছরেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় এই সংস্থাটিও। জিসিসি সুত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের ছাড়পত্র পেলে চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই পরিকল্পিত উপায়ে গাড়ি পারাপারের জন্য ‘ইউ’ আকৃতির এসব উড়াল সেতু বা ইউটার্ন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ডিএনসিসি। কিন্তু হাতিরঝিল থেকে আব্দুল্লাহ পর্যন্ত ডিএনসিসির সীমানায় থাকলেও আব্দুল্লাহপুর ব্রিজের ওপার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সীমানা থাকায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২ সিটি কর্পোরেশন থেকে পৃথক পৃথক ডিপিপি জমা দিতে বলা হয়। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী ২ সিটি কর্পোরেশন আলাদা দুটি প্রস্তাবনা জমা দেয়। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার যানজট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ইউটার্নের জায়গা নির্ধারণ করতে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিন উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। ওই বছরের ২৮ নবেম্বর ইউটার্ন নির্মাণ বিষয়ক সভায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত করতে ২২টি ‘ইউ’ আকৃতির গাড়ি পারাপারের সেতু বা ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু জায়গা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এসব ইউটার্ন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্পের ডিএনসিসি অংশের পরিচালক ও ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে মোট ২১টি ইউটার্ন নির্মাণ করবে সরকার। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১১টি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০টি ইউটার্ন। ডিএনসিসি এলাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে আর ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সরকারী অনুদান থেকে দেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকায় ও কারিগরি দিক বিবেচনায় এটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মতামত নেয়া ও তাদের জমি অধিগ্রহণে ছাড়পত্র ও মতামত নেয়া হয়েছে। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। এরপর সরকারের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সপ্তাগের যে কোন দিন প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। সকল প্রক্রিয়া শেষে আশা করি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
×